২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০১:০৯:৫২ পূর্বাহ্ন


জীবনের গল্পঃ ৪৯
শওকত হোসেন বাদল
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৫-২০২২
জীবনের গল্পঃ ৪৯


এক

কি রে? কেমন আছিস । বয়স  কত হলো তোর? জানি, তোদের বয়স জিজ্ঞেস করতে নেই। আমাদের যেমন বেতন! আচ্ছা, বয়স আর বেতন জিজ্ঞেস করলে কি হয়!- আমি জানি না, তুই জানিস?  

তোর এই বয়সটা ছাড়া আর কিছুই তো, অজানা নেই-রে । তোকে যত দেখি, কথা বলি- অবাক হই! তোর সঙ্গে পরিচয়টা নিয়ে গর্ব হয়। তোর মতো বন্ধু পাওয়া সৌভাগ্যের। জীবনের পূণ্যের ফল!

আজ লিখতে বসে ভাবছি, আমাদের বন্ধুত্বের বয়স কতো হলো? ১৯৮৫ সালের কোন এক রাতে তোকে প্রথম ফোন করি। তখন আমি ঢাকা কলেজে বি. কম (পাস) পড়ি। ছাত্রলীগের সভাপতি। তাই তারণ্যের উদ্দ্যমতায় জীবন ছিল বেপরোয়া। সঙ্গে উচ্ছৃঙ্খলতাও ছিল। 

এরশাদের শাসনামল। কি যে কঠিন ছিল ছাত্র রাজনীতি করা, যারা না করেছে তারা বুঝবে না-রে। ওই রাতে আমিসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী জসিম ভাইয়ের চাচার বাড়িতে রাত যাপন করেছিলাম। পুলিশের ভয়ে গ্রেপ্তার এড়াতে, সে রাতে আমাদের কলেজ হোষ্টেলে থাকা সম্ভব হয়নি। সেখানে উপস্থিত কেউ একজন, তোর ল্যান্ডফোনের নাম্বারটা দিয়েছিল। আজ তার নামটা মনে করতে পারছি না।

দুই.

সেই রাতে ‘হ্যালো’ বলতে তুই পাত্তাই দিলি না। শুধু তোর নাম বলেছিলি, ‘মৌ’। তারপর লাইনটা কেটে দিলি। কিছুদিনের মধ্যে তোর উপেক্ষার প্রহর শেষে সম্পর্কটা স্বাভাবিক হলো। একদিন তোর বাসায় যেতে বললি, গেলাম। তারপর মাঝেমধ্যে তোর বাসায় যেতাম। ফোনে কথা হতো । এমনি করে বহতা নদীর মতো, দুজনের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা এগিয়ে চলছিল। 

তোর মনে আছে, আমার কোন এক জন্মদিন, তোর বাসায় ঘটা করে পালন করেছিলাম। সেদিন আমার আখাউড়ার বাল্যবন্ধু প্রয়াত রতন, জুলি, বীনু, বাবলু ও আসিফও ছিল। ওদের সঙ্গে সীমাও এসেছিল। যদিও সীমিার সঙ্গে তখনও বিয়ে হয়নি। আমরা দু’জনে চুটিয়ে প্রেম করতাম। তোর আতিথেয়তা, আহ! এখনও জিভে জল আসে। 

আমার বিয়ের প্রথম শাড়িটা তোর দেয়া। এখনও যত্ন করে সীমা আলমারীতে রেখে দিয়েছে। বিয়ের পরে আমি-সীমা কতো তোর বাসায় থেকেছি, খেয়েছি ও আড্ডা দিয়েছি। সেদিনের রোমন্থিত স্মৃতি আজো সুখ দেয়। বিয়ের পর পর আমার অবস্থা ছিল, যাচ্ছে তাই। পত্রিকার সামান্য কয়টা টাকায়, বাসা ভাড়া দিতে পারি না। তুই অতন্ত্র প্রহরীর মতো পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলি। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলি। তোর ঋণ এ জনমে কি করে শোধ করবো বল ?

তিন

বন্ধু হিসেবে তুই এক তরফাই করেছিস। প্রতিদান চেয়ে দায়মুক্তির সুযোগও তুই দেসনি। তাছাড়া তোকে দেয়ার চেষ্টা করেও পারিনি। তুই এতো ভাল কেন ? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে আজও পাইনি। অনেকে বলে, ছেলে ও মেয়ের বন্ধুত্ব মানেই, যৌনতা-কাম কিংবা ভালোবাসা। কিন্তু গত ছত্রিশ বছরের সম্পর্কে, দুষ্টুলোকের মন্দ ভাবনার বিন্দুমাত্র ছায়া আমরা পড়তে দেইনি। অবিচল আস্থায় আমাদের এই বন্ধুত্ব জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এগিয়ে যাবে, এই বিশ্বাস দু’জনরেই আছে।

গতরাতে সীমা তোকে ‘বার্থডে উইস’ করেছে। আমি করিনি। তুই তাকে বলেছিস, ‘বাদল তো আমাকে উইস করলো না।’ শুনে সীমাকে আমি বলেছি, ‘বার্থডে উইস করবো তবে লিখে!’

পরিশেষে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, যদি পূণঃজন্ম থাকে, ওই জন্মেও তোকে যেন আবারো আমার বন্ধু করেই পাঠায়। আজ তোর জন্মদিন। তোকে শুভেচ্ছা। ভাল থাকিস বন্ধু। শুভ জন্মদিন...

কে. এম দাস লেন

টিকাটুলি, ঢাকা

০৫.০৩.২২

শেয়ার করুন