২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১১:৫৬:৪৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


আগামী নির্বাচনে জয়ের স্বপ্ন বিএনপির
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৪-২০২২
আগামী নির্বাচনে জয়ের স্বপ্ন বিএনপির


‘জাতীয় সরকার’-এ আড়াল

হচ্ছে কী একদফা

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ মুহূর্তে সরগরম বিএনপির জাতীয় সরকার ফরমুলা। কোথা থেকে কী উদ্দেশ্যে এমন ফরমুলার উপস্থিতি ঘটানো, সেটা জানার চেষ্টা করছে পর্যবেক্ষক মহল। দীর্ঘ থ্রি-টার্ম ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ চতুর্থবারের জন্য ক্ষমতায় যাবার প্ল্যান-প্রোগ্রাম শেষ করে রেখেছে। একটা রাজনৈতিক দলের যা করার কথা আওয়ামী লীগ খুব স্বাভাবিকভাবেই সেটা করছে। কিন্তু বিএনপি পাল্টা আগাম নির্বাচনে জয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়নের গ্যারান্টি পেল কোথায়? ক্ষমতাহীন প্রায় দেড়যুগ যে দল অনেকটাই এলোমেলো। সে দলটি হঠাৎ নির্বাচন পরবর্তী কর্মপরিকল্পনার স্বপ্ন কীভাবে আগাম দেখতে পারে- এটা নিয়ে কৌতুহল বিরাজ করছে। 

তাহলে বিএনপি কী নিশ্চিত হয়ে গেছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বাধীন জোটই ক্ষমতায় যাচ্ছে? অনেকটা ‘গাছে কাঠাল, গোঁফে তেল’-এর মতো? না হয় নির্বাচন পরবর্তী সময়ের সরকারের রূপরেখা নিয়ে এতোটা হৈ চৈ কিসের? আর দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে যে রূপরেখার কথা আভাস দেয়া হয়েছে যে নির্বাচনের পর জোটবদ্ধ দলের কেউ যদি নাও যেতে চায় তাহলেও তাদের নিয়েই জাতীয় সরকার গঠন করা হবে- সেটা কী কোনো বিচক্ষণ চিন্তার ফসল? যেমনটা বলছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, আমরা একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এখন নির্বাচন চাই এবং সেই নির্বাচনের পরে আমরা সবাইকে নিয়ে একটা জাতীয় সরকার গঠন করার মধ্য দিয়ে বিরাজমান সব সমস্যার সমাধান করতে চাই’। 

বিরাজমান সমস্যা হিসেবে যে বিষয়গুলো ইঙ্গিত করেছেন সেটা হলো ভোটের অধিকার নিশ্চিতকরণ। দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গড়া প্রভৃতি। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার যে সমস্যা সৃষ্টি করেছে যদি সত্যিকার অর্থেই একটা নিরপেক্ষ সরকার গঠিত হয় এবং তার অধীনে যদি একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলেই শুধু দেশের চলমান সমস্যার সমাধান হতে পারে।’

বিএনপির  লড়াই আনদোলন মানেই খালেদা জিয়া। কিন্ত বর্তমানে তিনি গুরুতর অসুস্থ। তাছাড়া তিনি বর্তমানে সাজাপ্রাপ্ত গৃহ অন্তরীন। ফলে আন্দোলনের মাঠে বিএনপি চেয়ার পার্সনকে এ মুহুর্তে পাচ্ছেনা বিএনপি। ফলে এমন দৃশ্যটাও আর দেখা যাবে না। বিএনপির সামনে এটাও একটা বড় চ্যালেঞ্চ। ছবি: ফাইল ছবি  


কিন্তু আগে নিশ্চিত হতে হবে, জাতীয় সরকারটা কী। জাতীয় সরকার হবে সবদলের সব মতের সমন্বয়ে গড়া দল। অথচ বিএনপির বক্তব্য, বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনে যারা যুক্ত থাকবে তাদের নিয়েই একটা জাতীয় সরকার। এটা কী তাহলে জাতীয় সরকার হলো? আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররাও অনেক। এদের বাইরে রেখে জাতীয় সরকার হয়? হলে তো আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদেরও নিতে হবে তাতে। তাহলে কথা ও পরিকল্পনায় মিল ঘটলো? 

তাও আবার নির্বাচনের পরে। যদি নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের সমমনারা পাশ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠনের সুযোগ পায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপি ও তাদের জোটের কোনো দাবিই মানছে না। ২০১৪ ও ২০১৮ সনের নির্বাচনের মতোই আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যেখানে ইতিমধ্যে একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করে ফেলেছে। সেখানে বিএনপি সে নির্বাচনে এতো আগাম জয়ের স্বপ্নটা কীভাবে দেখে? ‘গাছে কাঠাল গোঁফে তেল’ মেখে এতোটা নির্ভার থাকলে আওয়ামী লীগ চুপ করে বসে থাকবে? এগুলো আসলে ভৌতিক চিন্তা বিএনপির।

যেখানে দ্বাদশ নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠান করার কোনো কুলকিনারা করতে পারছে না। মাঠে নেই কোনো আন্দোলন। কোনো কর্মসূচিও নেই। সেখানে এসব আগাম কথা বলা আর ভৌতিক চিন্তা করার মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কী। 

এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, হঠাৎ করে বিএনপি কেন ‘জাতীয় সরকার’ এর এমন আগাম ফরমুলা নিয়ে মাঠে? যেখানে কদিন আগেও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষনেতারা একদফার আন্দোলনের কথা বললেন। যে এ সরকারের পদত্যাগই বিএনপির মূল আন্দোলনের কর্মসূচি। কারণ তাদের অধীনে কখনও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না। যার প্রমাণ দেখিয়ে আসছেন তারা ২০১৪ ও ২০১৮ এর নির্বাচন। তাহলে এতোটুকু যদি বুঝতেই পারে দলটি তাহলে ওই ‘একদফা’ আন্দোলন কার্যকর করে মাঠে নামছে না কেন? কেনই বা নেতাদের ব্যাস্ততা এসি রুমের মধ্যে অথবা এসি রুমের কাছাকাছিতে বাইরে? 

বাংলাদেশের আন্দোলনের ইতিহাসে কী এসি রুমের মধ্যে আন্দোলন করে সফল হওয়ার ইতিহাস আছে? বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও রাস্তার আন্দোলনে বিশ্বাসী। এবং করেছেনও। স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলন কিংবা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন তিনি রাস্তা ও সারাদেশ চষে বেড়িয়ে আন্দোলন বেগবান করেছেন। খুব বেশি দিন আগের যে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর দক্ষিণ বঙ্গের প্রোগ্রামে যেতে মাওয়ায় বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ঘুরে পাটুয়ারিয়া-দৌলদিয়া দিয়ে যেয়ে কর্মসূচি সফল করেছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া এখন গৃহবন্দি। কিন্তু তার সে শিক্ষায় বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব কী নিয়েছিলেন?  মনে হচ্ছেনা। খালেদা জিয়া যে আপসহীন তকমা এটা এমনি এমনিতেই নয়। কিন্তু তার অবর্তমানে যারা তাদের অবস্থান দেখা যাচ্ছে টালমাটাল। 

কখনো একদফা আন্দোলন, কখনো অন্য ফরমুলা নিয়ে মূল কর্মসূচি আড়াল করে দেয়ার জন্যই কি-না কে জানে? নতুবা দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে একদফা আন্দোলনের বিকল্প নেই - বলে যারা ক’দিন আগ পর্যন্ত গলা ফাটালেন। এখন তারাই নতুন ফরমুলা নিয়ে আবার মাঠ গরমের চেষ্টা। সেটা নির্বাচন পরবর্তী জাতীয় সরকার। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে টর্নেডোর মতো বাতাসে উড়ে সপ্তম আসমানে চলে যাবে? আজগুবি যত চিন্তা ।

ইতিমধ্যে জাতীয় সরকারের রূপরেখা শোনার পর থেকে বিএনপির তৃণমূলে কানাঘুষা শুরু। একের পর এক সিদ্ধান্ত বদলাচ্ছে বিএনপি। জাতীয় সরকারের ফরমুলা মানেই ‘একদফা’ আন্দোলন থেকে সরে যাওয়া। বা ‘একদফা’ আন্দোলনকে আড়াল করে দেয়া কি-না এ প্রশ্ন উঠছে।  তাহলে সেটাই যদি হয় তাহলে বিএনপি কোন পথে? কি স্বপ্ন দেখছে তারা। মাঠে আন্দোলন করে কষ্ট না করে কোনো শর্টকাট উপায় কী হাতে পেয়ে গেছে দলটি? তাহলে সেটা কী, সেটাই জানার আগ্রহে ব্যাকুল সাধারণ মানুষ। 

আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে এটা নিয়ে হাসি ঠাট্টাও করছে। করারই কথা। প্রচণ্ড আন্দোলন হওয়া ও তার এক পর্যায়ে আন্দোলন আরো বেগবান করতে দলমত নির্বিশেষে এমন রূপরেখা জানালে জোটের অন্যরাও উৎসাহ বোধ করতেন বৈকি। 



শেয়ার করুন