২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৪:১১:২২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


যথাযোগ্য মর্যাদায় বিজয় দিবস পালন
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার আহ্বান
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১২-২০২৩
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার আহ্বান ওয়াশিংটন বাংলাদেশ দূতাবাসের অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ


দেশের ন্যায় প্রবাসেও যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালন করেছে। বিজয় দিবস পালন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি, বিএনপির অঙ্গসংগঠন, বাংলাদেশ সোসাইটিসহ প্রবাসের বিভিন্ন সামাজিক, আঞ্চলিক, ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস, জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এবং নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করেছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, প্রবাসে জন্ম নেওয়া এবং বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের মধ্যে চিত্রাঙ্কনসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আলোচনা সভায় বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তুলতে হবে। এই দেশ যারা দিয়েছেন তাদের সর্বোচ্চ সম্মান জানাতে হবে। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, স্মাট বাংলাদেশ গড়তে বর্তমান সরকারকে আবারো ক্ষমতায় আনতে হবে। আবার কেউ কেউ বলেছে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করতে হবে।

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার নতুন শপথ গ্রহণের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে যথাযোগ্য মর্যাদায় ৫৩তম বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে।

দূতাবাসের দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে ছিল চ্যান্সারি প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ, সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং বিশেষ মোনাজাত।

সন্ধ্যায় দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার এবং এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান।

আফরিন আক্তার তার বক্তব্যে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অসাধারণ অগ্রগতির প্রশংসা করেন এবং উল্লেখ করেন বাংলাদেশের এই অভিযাত্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী। তিনি বলেন, একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যে অগ্রগতি অর্জন করেছে তা সত্যিই অসাধারণ। মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী‌ বলেন, গত ৫২ বছরে বাংলাদেশ লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে বের করে এনেছে। তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্কের কথাও উল্লেখ করেন। বিভিন্ন সময়ে তার বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রতিটি সফরেই তিনি বাংলাদেশি জনগণের শক্তি, সহনশীলতা ও দৃঢ়তার কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, যেসব গুণাবলি বাংলাদেশের মুক্তির পথ দেখিয়েছে সেগুলোই বাংলাদেশকে তার কাক্সিক্ষত অভিযাত্রার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

রাষ্ট্রদূত ইমরান তার স্বাগত বক্তব্যে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। তিনি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহিদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের জন্য তাদের প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে অর্জিত বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। এই সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী বলেও তিনি জানান।

পরে একটি বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেখানে দূতাবাসের কর্মকর্তা ও তাদের সহধর্মিণী এবং কর্মচারিবৃন্দ প্রথমে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন। মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তান এবং ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশি শিল্পীরা দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে অতিথিদের মুগ্ধ করেন।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকবৃন্দ, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা উপস্থিত ছিলেন।

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন

গত ১৬ ডিসেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসবমুখর পরিবেশে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন নিউইয়র্ক-এ মহান বিজয় দিবস-২০২৩ উদযাপন করা হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রবাসী বাংলাদেশি। 

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় বিকাল সাড়ে ৬টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। আলোচনা পর্ব শুরুর আগে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্ম-উৎসর্গকারী বীর শহীদের স্মরণে একমিনিট নীরবতা পালন ও তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। এর পর উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তারা তাদের অর্জিত অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্পসমূহের বাস্তবায়নে স্ব স্ব ক্ষেত্রে অবদান রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

সমাপনী বক্তব্যে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত শুরুতেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতাসহ ১৫ আগস্টের শাহাদত বরণকারী জাতির পিতার পরিবারের সকল সদস্য, জাতীয় চার নেতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ ও ২ লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনসহ-সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে রূপকল্প ২০২১, রূপকল্প ২০৪১ ও ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ইতিমধ্যে আমরা স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটেগরি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছি যা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের মর্যাদা ও সক্ষমতার স্বাক্ষর। বিগত কয়েক বছরে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন, মেট্রো রেল ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ট্যানেল নির্মাণসহ নানাবিধ মেগা প্রজেক্টের বাস্তবায়ন আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার অন্যতম নির্দেশক। বাংলাদেশ আজ ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।’ দারিদ্র্য দূরীকরণে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্যের প্রসংগ টেনে রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে দারিদ্র্যের হার ২০২২ সালে কমে হয়েছে ৫ শতাংশ যা ২০১০ সালে ছিল ১১.২ শতাংশ। রাষ্ট্র হিসেবে সামষ্টিক অর্থনীতিতে সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী সবার মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতকরণে দিয়েছেন বিশেষ অগ্রাধিকার। প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্পের মতো উদ্যোগ আজ জাতিসংঘের রেজ্যুলেশনে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এছাড়া অতিমারি কোভিড-১৯-এর ধাক্কা এবং তৎপরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবে যখন পৃথিবীর সব দেশ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন, অর্থনীতির এমন প্রতিকূল সময়েও বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক অনেক সূচকে প্রতিবেশি দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে আছে। প্রবাসী বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জনবহুল বাংলাদেশের প্রধান শক্তি তাঁর জনগণ আর প্রবাসীরা দেশের মায়া পেছনে ফেলে রাতদিন কষ্ট করে বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন। প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অন্যতম চালিকাশক্তি। এ প্রসঙ্গে তিনি বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের আহ্বান জানান। প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদানের পাশাপাশি আপনাদের দেশের সংস্কৃতি ও দেশের ইতিহাসকে লালন করতে হবে যাতে বিদেশে জন্মানো এবং বড় হওয়া আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন এই সংস্কৃতিকে ধারণ করে আর প্রকৃত ইতিহাস জেনে বড় হয়। আমরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেন, যে দেশেরই নাগরিক হই না কেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে বাঙালি সংস্কৃতির লালন করে যাবো, মহান বিজয় দিবসের এই অনুষ্ঠানে আজ এই হোক আমাদের অঙ্গীকার। 

আলোচনা পর্ব শেষে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনা করেন নিউইয়র্কস্থ বহ্নিশিখা সংগীত নিকেতনের একদল শিল্পী। অবশেষে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কেক কেটে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট

গত ১৬ ডিসেম্বর নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট যথাযথ মর্যাদায় ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন করে। জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা উপস্থিত অতিথিসহ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের সব শহিদ, ৭১-এর সব শহিদ, জাতীয় চার নেতা ও শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে প্রেরিত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। 

কনসাল জেনারেল তার বক্তব্যের শুরুতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন ৩০ লাখ শহিদ ও ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনদের অপরিসীম আত্মত্যাগের কথা। তিনি বলেন, জাতির পিতা একটি সুখী-সমৃদ্ধ, শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন, যা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। তিনি নতুন প্রজন্মের মধ্যে জাতির পিতার আদর্শ ও দর্শন এবং স্বাধীনতার ইতিহাস ও গৌরব গাথা তুলে ধরার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশে চলমান উন্নয়নের বর্তমান ধারাকে আরো সুসংহত ও বেগবান করতে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী ভাইবোনসহ-সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে মূল্যবান ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানান কনসাল জেনারেল। 

উন্মুক্ত আলোচনায় নিউইয়র্ক অ্যাসেম্বলি মেম্বার ক্যাটালিনা ক্রুজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। 

অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সকল শহিদ সদস্য, ৭১-এর সব শহিদ, শহিদ বুদ্ধিজীবী এবং শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। পরে কমিউনিটির শিল্পীদের দ্বারা মনোজ্ঞ এক সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

ব্রঙ্কসে বিভিন্ন সংগঠনের বিজয় দিবস পালন

শেখ শফিকুর রহমান: ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে নিউইয়র্কের প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যুষিত ব্রঙ্কসে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস পালন করা হয়। সংগঠনগুলো হলো মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নিউইয়র্ক স্টেট কমান্ড, ব্রঙ্কস বাংলাদেশি কমিউনিটি ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নিউইয়র্ক স্টেট কমান্ড মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শিশু-কিশোরদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, উদ্বোধনী র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। স্টারলিং বাংলাবাজারের গোল্ডেন প্যালেসে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন্নবী। বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহমদ চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ সালাম, কাজী রবিউজ্জামান, সিরাজউদ্দীন সোহাগ প্রমুখ।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে সন্ধ্যায় এশিয়ান ড্রাইভিং স্কুলের স্মৃতি সৌধের সামনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহমদ চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহিম বাদশা, সিরাজউদ্দীন আহমদ সোহাগ, সেলিম রেজা প্রমুখ। সভার শুরুতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তক অর্পণ করেন।

ব্রঙ্কস বাংলাদেশি কমিউনিটি উদ্যোগে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে। শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিশিষ্ট গুণী ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদান, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এ উপলক্ষে আল-আকসা পার্টি হলে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন কমিউনিটি লিডার মোহাম্মদ এন মজুমদার, আব্দুস শহীদ, মঞ্জুর চৌধুরী জগলুল, সামাদ মিয়া জাকারিয়া, শামীম মিয়া, জালাল চৌধুরী প্রমুখ। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন।

বিএনপি নিউজার্সি স্টেট (নর্থ) 

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নিউজার্সি স্টেট (নর্থ) ইউএসএ’র উদ্যোগে বাংলাদেশের ৫২তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আয়োজনে মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। গত ১৬ ডিসেম্বর প্যাটারসনের বেঙ্গল ইন্স্যুরেন্সের হলরুমে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নিউজার্সি বিএনপির সভাপতি সৈয়দ জুবায়ের আলী, যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক হোসেন পাঠান বাচ্ছু ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহসিন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট বার কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি, সিলেট জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ও সিলেট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা সদস্য এ টি এম ফয়েজ। বিষেশ অতিথি ছিলেন নিউজার্সি বিএনপির প্রধান উপদেষ্টা আলাউর খন্দকার। বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা চৌধুরী নিপন, উপদেষ্টা সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মুক্তাদির, উপদেষ্টা সদস্য খুরশের আলম, সহ-সভাপতি সৈয়দ খালিদ আলী, কামরান হাদী, মোহাম্মদ খলিল, ফরিদ পাঠান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ খান, কেশিয়ার জাকিরুল চৌধুরী হিমেল, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, প্রচার সম্পাদক রুহেল হাসান, বিএনপি নেতা রেদওয়ান আহমেদ, আমিনুল হক সিতু, আশরাফুল হক শফি, আরিফ আহমেদ প্রমুখ।

সভার শুরুতে কালামে পাক থেকে তিলাওত করেন সৈয়দ খালিদ আলী, ফরিদ পাঠানের জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। বক্তাদের বক্তব্যে ছিল প্রতিবাদি কণ্ঠ। তারা বলেন, আজ আমরা এমনি এক সময় ৫২তম বিজয় দিবস পালন করছি, যখন দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন। মানুষের বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানুষের ভোটের অধিকার আজ নির্বাসিত। বিজয়ের এই দিনে আজ আমাদের শপথ নিতে হবে, স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশকে মুক্তকরে দেশে গণতন্ত্র মুক্তির বিজয় ছিনিয়ে আনার, আলোচনা সভা শেষে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বোস্টন আওয়ামী লীগ

গত ১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে নিউ ইংল্যান্ড আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ৫৩তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। মহান এই বিজয়ের দিনে গভীর কৃতজ্ঞতা ও পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয় দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী বীর সন্তানদের। নিউ ইংল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউসুফ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ইকবাল ইউসুফের সঞ্চালনায় এই আলোচনা সভার শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, এক মিনিট নীরবতা এবং বিশেষ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করা হয়।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের এই গৌরবময় দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুত্থান ঘটে। বক্তারা বাংলাদেশে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে পুনরায় নির্বাচিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার এবং দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার তৈরিতে প্রবাস থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

মহান বিজয় দিবসের আলোচনায় আরো অংশ নেন নিউ ইংল্যান্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, রাতুল বড়ুয়া, উপদেষ্টা প্রফেসর মুসা শরিফ, সেলিম জাহাঙ্গীর, জিয়াউল হাসান, রবিউল আলম, প্রীতিমা রাণী দেবী, মোহাম্মদ মিয়াজী, আব্দুস সালাম খোকন, প্রিতম বড়ুয়া, মাহফুজুল হক, নাকিবা মিনহান এবং ১৪ দলের শরীক জাতীয় পার্টি-জেপির সহ-সাধারণ সম্পাদককে এম মজিবুর রহমান মজনু।

শেয়ার করুন