২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ৬:১৭:৪০ পূর্বাহ্ন


স্ত্রী তুলিকে গলাটিপে হত্যা : পাষণ্ড স্বামী নাসিব গ্রেফতার
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০১-২০২৪
স্ত্রী তুলিকে গলাটিপে হত্যা : পাষণ্ড স্বামী নাসিব গ্রেফতার স্বামী আহসান নাসিবের সঙ্গে স্ত্রী নওরীন নাহার তুলি


নিষ্ঠুর। অমাবিক। নরপিশাচ। পাষণ্ড না হলে কী এতো হৃদয়বিদারক ঘটনার জন্ম দিতে পারে। আমেরিকার মতো দেশে এই মর্মস্পর্শী, বর্বর কাণ্ড ঘটাতে পারে? কোনো সুস্থ, বিবেকবান মানুষের পক্ষে কী সম্ভব? মানুষ যখন পশুতে রূপান্তরিত হয়, তখনই এমন কাণ্ড ঘটাতে পারে। টেক্সাসের ডালাসের অদূরে ম্যাককিনি শহরে বাংলাদেশি আহসান নাসিব গলাটিপে তার স্ত্রী নওরীন নাহার তুলিকে হত্যা করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে, গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে। স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে স্থানীয় পুলিশ পাষণ্ড স্বামী আহসান নাসিবকে গ্রেফতার করেছে। বর্তমানে সে জেলে আছে।

নওরীনের বড় ভাই সাব্বির আহমেদ সজল ঢাকা থেকে দেশ প্রতিনিধিকে বলেন, আমার বোন নওরীন নাহার তুলি আমাদের সবার ছোট। তাকে আমরা সবাই আদর করতাম। আসলে তার কপালে সুখ ছিল না। নওরীন নাহার তুলি খুব মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। সে লেখাপড়া শেষ করে ঢাকার বিআইটি স্কুলে শিক্ষকতা করতো। প্রায় ১৫ বছরের মতো সে শিক্ষাকতার মতো মহান পেশায় জড়িত ছিল। এমই সময় ২০১৬ সালে পারিবারিকভাবে তার প্রথম বিয়ে হয়। প্রথম বিয়ে হয়েছিল আকিব খন্দকার রাফির সঙ্গে। রাফির বাবা-মা আমেরিকায় থাকতেন। তাদের গ্রিনকার্ড রয়েছে। এক সময় আমরা তাদের দাদার বাড়িতে ভাড়া থাকতাম। সেই সূত্রেই তাদের সঙ্গে আমাদের পরিচয়। পূর্ব পরিচিতির সূত্র ধরেই আকিবের বাবা-মা পারিবারিকভাবেই তাদের পুত্রের জন্য আমার বোনকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। আমরাও রাজি হয়ে যাই। বিয়ের কয়েক মাস পরই ২০১৭ সালে আকিব খন্দকার রাফি স্টুডেন্ট ভিসায় আমেরিকায় চলে যায়। তার বাবা-মা টেক্সাসে যেখানে থাকে সেখানে। আমার বোন তুলি শিক্ষকতা করছিল। এরই মধ্যে আমার বোন তুলি আমেরিকায় ভিসার জন্য চেষ্টা করতে থাকে। ২০২২ সালে তুলি আমেরিকার ভিসা পেয়ে যায়। ভিসা পেয়ে সব কিছু গুছিয়ে ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নওরীন নাহার তুলি আমেরিকায় চলে যায় এবং টেক্সাসে গিয়ে স্বামীর বাসায় ওঠে। সেখানে গিয়ে আকিবের সঙ্গে বনিবনা হলো না। নানা বিষয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হতোং। এক পর্যায়ে বনিবনা না হওয়ায় আকিব আমার বোন তুলিকে ডিভোর্স দেয়। নওরীন নাহার তুলি যেহেতু লেখাপড়ায় ভালো এবং বাংলাদেশের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ছিল সেহেতু আমেরিকায় যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই সে একটি স্কুলে চাকরি পেয়ে যায়। স্কুল জবের পাশাপাশি সে ওয়ালমার্টেও পার্টটাইম কাজ করতো। আকিবের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আমার বোন আলাদা থাকতো। এরই মধ্যে আনলাইনে আরেক বাংলাদেশি আহসান নাসিবের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই পরিচয় গভীর হয়। এক পর্যায়ে আহসান নাসিবের বাবা-মা আমাদের ঢাকার বাসায় বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে আসেন। আমরা অবশ্য তুলিকে বলেছিলাম আরো সময় নিতে, কিন্তু সে আহসান নাসিবকে বিয়ে করতে চায়। তাদের কথা মতোই ২০২৩ সালের জুন মাসে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের দুই মাস তাদের সংসারে কোনো অশান্তি ছিল না। ভালোই চলছিল তাদের পরিবার। কিন্তু দুই মাস যেতে না যেতেই আমার বোনের ওপর তার দ্বিতীয় স্বামী আহসান নাসিব নির্যাতন শুরু করে। তাকে সন্দেহ করতে শুরু করে। এমনকি আমাকে ফোন দিলেও সে সন্দেহ করতো। সে আমার বোনকে কারো সঙ্গে মিশতে দিতো না। যদিও আমার বোন আমাকে সবকিছু বলতো না। আমি অন্যদের কাছ থেকে জানতাম। কখনো কখনো আহসান নাসিব ভয়ংকর হয়ে উঠতো। আমার অন্য বোনেরা আমাকে সেটা বলেছে।

সাব্বির আহমেদ সজল আরো জানান, আমার বোন তুলিকে আহসান নাসিব যেদিন গলাটিপে হত্যা করে তার আগের দিন তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। বাড়ির সিঁড়িতে আহসান যখন আমার বোনের ওপর নির্যাতন করছিল, তখন পাশের একজন তা দেখে ফেলে এবং এগিয়ে আসে। জিগ্যেস করতেই আহসান বলে সব কিছু ঠিক আছে, কিন্তু আমার বোন বলেছিল ঠিক নেই। এই অবস্থায় ওই নেইভার তার বাড়িতে গিয়ে পুলিশ কল করে। পুলিশ এসে আহসানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। একদিন পর সে ৬ হাজার ডলার বন্ডে বেরিয়ে আসে এবং কোর্ট থেকে বলা হয়েছে, আহসান সে আমার বোনের কাছে যাতে না আসে। অর্থাৎ কোর্ট আমার বোনকে পুলিশ প্রটেকশন দিয়েছিল। কিন্তু আহসান সেই পুলিশের নির্দেশ না মেনেই তিন দিন পর আবারও আমার বোনের বাসায় যায় এবং ২৭ ডিসেম্বর রাতে গলাটিপে হত্যা করে। দেশ প্রতিনিধির এক প্রশ্নের জবাবে সাব্বির আহমেদ সজল বলেন, টেক্সাসে আমাদের কেউ থাকে না, এমনকি আমেরিকাতেও। তবে নিউইয়র্কে আমার এক বন্ধু থাকে। কিন্তু আমার বোন তুলির মৃত্যুর খবর আমরা তার কাছ থেকে পাইনি। আমার বোন তুলির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি চ্যানেল চালাতো। সেই চ্যানেলে আমার বোনের এক মহিলা বান্ধবী ভার্জিনিয়ায় থাকেন। তিনিই তুলির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে আমার সঙ্গে যোগোযোগের চেষ্টা করেন। আমার সঙ্গে যোগাযোগের পূর্বে সে আমার বোনের প্রথম স্বামীকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। কিন্তু তার কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি। শেষ পর্যন্ত তিনি আমার বোনের বিষয়টি আমাদের জানান। ঘটনার দুইদিন আগেও আমার আরেক বোন তুলির সঙ্গে যোগযোগ করেন। ক্রিস মাসের ছুটির কারণে তুলি কথা বলতে পারেননি, পরে ফোন করবেন বলে জানান। কিন্তু তুলির ফোন আর আমরা পাইনি। যেদিন তুলিকে আহসান খুন করে, ঠিক তার কয়েকদিন আগেই আহসানের জন্মদিন পালন করা হয়। কিন্তু নিয়তির কী নির্মম পরিহাস, আমার বোনকে অকালেই চলে যেতে হলো। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যেটা জেনেছি সেটি হলো, আমার বোনকে খুন করার পর আহসান সেখানেই লাশের পাশে বসেছিল এবং সে তার মাকে ফোন করে ঘটনা বলে। তার মা তখন বাংলাদেশে। তার মা তাকে তার মামার সঙ্গে (যিনি টেক্সাস থাকেন) যোগাযোগ করতে বলেন। সে তার মামার সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই সময় তার মামা অন্য শহরে ছিলেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে কল করতে বলেন। পুলিশকে কল করার পর পুলিশ এসে লাশ মর্গে নিয়ে যায় এবং আহসান নাসিবকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে ডাবল মার্ডারের অভিযোগ আনা হয়েছে। জানা গেছে, নওরীন নাহার তুলি চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তুলির বড় ভাই সজল আরো জানান, আহসান নাসিব ২০২০ সালে ড্রাগের কারণে গ্রেফতার হয়েছিলেন। সজল আরো জানান, আমরা এখন আমাদের বোনের লাশের অপেক্ষা করছি। তিনি তার বোনের খুনির উপযুক্ত বিচার চেয়েছেন।

উল্লেখ্য, নওরীন নাহার তুলির দেশের বাড়ি বরিশালে, বর্তমানের তাদের বাসা ঢাকার যাত্রাবাড়ী। তার তিন বোন এবং এক ভাই। অন্যদিকে আহসান নাসিবের দেশের বাড়ি টাঙ্গাইলে।

শেয়ার করুন