০৫ মে ২০১২, রবিবার, ০৮:৫৪:২৭ পূর্বাহ্ন


উপজেলা নির্বাচন, ভারতীয় পণ্য বর্জন ইস্যু
বিএনপির পাশে থাকবে না জামায়াত!
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৪-২০২৪
বিএনপির পাশে থাকবে না জামায়াত!


উপজেলা নির্বাচন এবং এর পাশাপাশি ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলনে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীকে পাশে পাচ্ছে না মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ইফতার পার্টিতে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের আমন্ত্রণ করেও মন গলাতে পারছে না জামায়াতে ইসলামীকে।  একদিকে এই দলটি বিএনপিসহ বাকি সমমনাদের ডাকে ভারতীয় পণ্য বর্জনে সায় দেয়নি এর পাশাপাশি এবিষয় নিয়ে আলাদাভাবেও দলটি কোনো বক্তব্য দিচ্ছে না। আবার অন্যদিকে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামাচ্ছে প্রভাবশালী নেতাদের। এব্যাপারেও বিএনপি আপত্তি বা অনুরোধ কোনোটাই রাখছে না জামায়াত। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায় ভোট হবে আগামী ৮ মে। ৮ মে প্রথম ধাপের পর ২৩ ও ২৯ মে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ এবং ৫ জুন শেষ ধাপের ভোট হবে। এসব উপজেলায় চেয়ারম্যান, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে হবে সাধারণ নির্বাচন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১৭ এপ্রিল, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। ভোট হবে ৮ মে। প্রথম ধাপের ১৫২ উপজেলার মধ্যে ২২ উপজেলায় ভোট হবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে। বাকিগুলোতে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা এ ভোট চলবে। জামানতের টাকা বাড়িয়ে এবং স্বতন্ত্রদের প্রার্থিতা সহজ করে বিধি সংশোধনের পর উপজেলা নির্বাচনের তফসিল চূড়ান্ত করা হয়।


উপজেলায় বিএনপি’র না

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও অংশ নেবে না বিএনপি। প্রথমে বলা হয়েছিল দলের কেউ প্রার্থী হলে তাকে নিরুৎসাহিত করা হবে না। কিন্তু সর্বশেষ খবরে দেখা গেলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আর এমন সিদ্ধান্তের পক্ষে আরো জোড়ালো বক্তব্য ও ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। ড. মঈন বলেছেন, এবারের উপজেলা নির্বাচনের সঙ্গে আগের নির্বাচনের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য হবে না। তাই উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের কোনো সম্ভাবনা নেই।


উপজেলা নির্বাচন নিয়ে জামায়াত

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে জামায়াত এই সিদ্ধান্ত নিল। তবে এক্ষেত্রে তারা একটি কৌশল নিয়েছে। বলা হচ্ছে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেবে না দলটি। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয় কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষণা দেবে না ঠিক তবে জয়ের সম্ভাবনা আছে-এমন উপজেলাগুলোতে নির্বাচন করছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। জামায়াত নেতারা যুক্তি দেখাচ্ছে, বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট সক্রিয় নেই। ফলে জামায়াত এখন আর বিএনপি’র শরিক দল নয়।

ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলনে সায় নেই জামায়াতের

এদিকে বিএনপি এক দফা আন্দোলনকে সাইডে রেখে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে। বিএনপি মনে করে থাকে ভারতের কথায় বা বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রশ্ন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পরিবর্তন ঘটেছে। বিএনপি’সহ তাদের সমমনারা বদ্ধমূল হয় যে ভারতের সমর্থনে আওয়ামী লীগ ক্ষমমতায় আবার এসেছে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয় যে,ভারতের সহযোগিতায় নির্বাচনের নামে আওয়ামী লীগ তামাশা করেছে। তা-ই আগে ভারতের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে। আর তারই অংশ হিসাবে শুরু হয়েছে ভারতীয় পণ্য বয়কট আন্দোলন। অপরদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ভারতীয় পণ্য বর্জনে যে সংহতি জানিয়েছিলেন তার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে ১২ দলীয় জোট। ‘ভারতীয় আগ্রাসন ও ভারতীয় পণ্য বর্জন’ আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা। তারা রিজভী আহমেদ ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের হাতে ভারতীয় পণ্য বর্জনের টি শার্ট তুলে দেন। বাকি অন্য শরিকরাও ভারতের বিরুদ্ধে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে আসছেন। কিন্তু এত্তো কিছুর পরও খুব কৌশলে ভারতীয় পণ্য বর্জনে সাড়াই দেয়নি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী। এব্যাপার নিরবতা লক্ষণীয়।



বিএনপি’র ইফতার পার্টিতে জামায়াত কেনো?

প্রশ্ন হচ্ছে বিএনপি’র ডাকে উপজেলা নির্বাচন এবং এর পাশাপাশি ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলনের কোনো একটিতে মৌন সম্মতিও দেয়নি জামায়াতে ইসলামী নামের ওই দলটি। কিন্তু ৮ বছর পর সেই জামায়াতে ইসলামীর ইফতার পার্টিতে যোগ দিয়েছেন বিএনপির নেতারা কিসের মোহে। সম্প্রতি হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের বলরুমে এই ইফতারের আয়োজন করা হয়। এর আগে বিএনপির ইফতারে জামায়াতের আমির, সেক্রেটারি জেনারেলসহ চারজনকে দাওয়াত করা হয়। এরপর ৩০ মার্চ জামায়াত তাদের ইফতারে বিএনপির মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সব সদস্য ছাড়াও দলের ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিবসহ প্রায় অর্ধশত নেতাকে আমন্ত্রণ জানায়। জানা গেছে, এমন আয়োজন করে জামায়াতকে একটি বিষয় জানান দেয়ার চেষ্টা করা হয় বিএনপি’র পক্ষ থেকে। বিএনপি’র এবকটি সূত্র জানায় দলটি বুঝতে পেরেছে যে এসরকারের অধীনে জামায়াত উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে। এতে বিএনপি’র একদফা আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যদিও এই ধরনের কর্মসূচিতে মাঠে নেই দলটি। তবে উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের অংশগ্রহণ বিএনপি’র ভালোভাবে নিচ্ছে না। সেজন্য সম্প্রতি বিএনপি’র পক্ষে জামায়াত ঘেষা কিছু নেতা বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে বিরোধিতাকারী দলটিকে নিবৃত্ত করার চেষ্টায় নামে। তার প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে ৮ বছর পর জামায়াতে ইসলামীর ইফতার পার্টিতে বিএনপির নেতাদের যোগ দেয়ার বিষয়টি।


বাস্তবে কোনো পক্ষই সফল হয়নি

তবে সূত্র জানায় উপজেলা নির্বাচন এবং এর পাশাপাশি ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলনে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীকে পাশে পেতে নানান কৌশলের একটি ছিল ইফতার পার্টি। সেই আয়োজনে বিএনপি’ যে লাভবান হয়েছে তা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন না। তাদের মতে, এমন ইফতার পার্টিতেও বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জামায়াতের ইফতারে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যাননি। অন্যদিকে বিএনপির ইফতারে জামায়াতকে দাওয়াত করায় যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম শরিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম যাননি।


শোনা যায়, জামায়াতের ইফতারে বিএনপির মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সব সদস্যকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও অনেকে নানা কারণ দেখিয়ে এড়িয়ে গেছেন। অন্যদিকে যে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নিতে জামায়াতকে নিবৃত্ত করার কৌশল বিএনপি নিতে চেয়েছে তাও সফলতার মুখ দেখা হবে না বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করে। তার নমুনা মাঠেই মিলেছে। কেননা তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই অনেক প্রভাবশালী জামায়াত উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে নেতা মাঠে নেমে গেছেন। অথচ এই এই নির্বাচন ঘিরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কোনো তৎপরতা নেই।

জানা গেছে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, জামায়াতের তৎপরতায় উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের জন্য বড় ধরনের দুশ্চিন্তার কারণ হয়েও দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীকে যে পাশে পাবে না বিএনপি তাও বলার অপেক্ষা রাখে না।


কারণ জামায়াতের নেতারা জানে এমনতিইে তাদের প্রতি ভারত ক্ষুদ্ধ। বিভিন্ন পর্যায়ে গোপন দেন-দরবার করেও তারাও ভারতের মন জয় করতে পারেনি। আর এখন ভারতীয় পণ্য বর্জনে মাঠে নামলে তাদের আম ছালা দুটিই যাবে বলেই জামায়াতের শীর্ষ নেতারা মনে করেন।

শেয়ার করুন