২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০২:৪৪:১৩ অপরাহ্ন


আবারও একতরফার পথে জাতীয় নির্বাচন
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১২-২০২৩
আবারও একতরফার পথে জাতীয় নির্বাচন


প্রার্থী নির্বাচনে নানা কৌশল, নিজ দলের মনোনয়নের বাইরে থাকা প্রার্থীদের নির্বাচিত করতে উৎসাহী করা, জোট রাজনৈতিক দল এবং গৃহপালিত বিরোধীদলকে কিছু আসনে ছাড় দেওয়ার পরেও নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি ১৯৯টি আসনে অনেকটা বিনা বাধায় নির্বাচিত হয়ে আসতে পারে সরকারি দল আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী। অধিকাংশ আসনে সরকারি দলের প্রার্থীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারি দলেরই বিকল্প প্রার্থী। তাই নির্বাচন যেভাবেই হোক নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে চলেছে আওয়ামী লীগ। 

এমনি যখন পরিস্থিতি, তখন বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র রাশিয়া নির্বাচনের পরে বাংলাদেশে আরব বসন্ত সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছে। খোদ সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-নেত্রীরা বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা করছেন। এমনিতেই বাংলাদেশের অর্থনীতি সংকট পথে। বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে ঘুণে ধরা অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারের একজন মন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচনকে সুষ্ঠু এবং বাধাহীন করতেই নাকি ২০ হাজার বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে জেলে বন্দি রাখা হয়েছে। বিএনপিকে নাকি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল নির্বাচনে এলে একরাতে ২০ হাজার নেতাকর্মীকে একসঙ্গে মুক্তি দেওয়া হবে? তাদের গ্রেফতার না করলে তারা বাংলাদেশ অচল করে দিতো। সত্যিই বিচিত্র বাংলাদেশ। মানলাম, এভাবে নির্বাচনের নামে হঠকারিতা করে আবারও সরকার গঠন করবে আওয়ামী লীগ। জনগণ কেন আসবে এই ধরনের সাজানো নির্বাচনে ভোট দিতে। সরকারি দল কি কৌশলে জনগণকে যোগ্য প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার সুযোগবঞ্চিত করলো না?

আর আরব বসন্ত বা বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার যে কথা বলছে কিছু মানুষ তাদের বলি। বাংলাদেশে হয়তো এগুলো কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে জনগণকে কষ্ট দেওয়া হবে। যাদের কারণে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট তারা কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। অনেকেই বিদেশে অর্থ পাচার করে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছে। সংকটে পড়বে পাতি নেতা, পাতি নেতারা যারা চেলা পুঁটি। 

আমি তৈরি পোশাকশিল্পের কিছু নেতৃস্থানীয় লোকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে আলাপ করেছি। তাদের বিশ্বজোড়া ক্রেতারা কিন্তু এই ধরনের ইঙ্গিত দেয়নি। ক্রেতারা চায় সুলভ মূল্যে মানসম্পন্ন পোশাক। বাংলাদেশ এই মুহূর্তে তৈরি পোশাকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চীন, ভিতেনাম, শ্রীলঙ্কা কোনোভাবেই সীমিত সময়ের জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এলে ক্রেতাদের বিপুল চাহিদা মেটাতে পারবে না। বাণিজ্য অবরোধ এড়ানোর জন্য সরকারের অবশ্যই কৌশল নেওয়া আছে। মনে হয় বাণিজ্য অবরোধের আগাম ইঙ্গিত অনেকটাই কথার কথা। 

তবু বলবো কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও সরকারি দলের উচিত ছিল বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনে এনে নির্বাচনকে অর্থবহ করা। গণতন্ত্রে বিরোধী মত থাকার সুযোগ না থাকলে, সেটি স্বৈরতন্ত্রে পরিণত হয়। সরকারি দল নিজেদের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল দাবি করে। তাহলে অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে কেন এতো অনীহা? 

দেখার বিষয় কোনো কৌশলে সরকার সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করে। কীভাবে জ্বালানি সংকট সামাল দেয়। একসময় ভারত বাংলাদেশ থেকে পাইপলাইনে গ্যাস আমদানি করতে চেয়েছিলো। ভুল কৌশলের কারণে বাংলাদেশ গ্যাস কয়লা মাটির নিচে রয়ে গেছে। ভারত থেকে গ্যাস আমদানির পায়তারা চলছে। জ্বালানির অভাবে ধুঁকছে শিল্পগুলো। গ্যাস সংকটে বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলো অলস বসে রয়েছে। তেল, কয়লা, এলএনজি কেনার অর্থ সংকট। ফেব্রুয়ারি-মার্চ ২০২৪ থেকে জ্বালানি সংকটে অস্থির হয়ে পড়বে বাংলাদেশ। রফতানি সংকুচিত হবে বাণিজ্য অবরোধের প্রয়োজন হবে না। অনেক ভুলের পরিণতিতে বর্তমান অবস্থা। সেটি সামাল দেওয়ার চ্যালেঞ্জ পড়বে নতুন করে গঠিত সরকারের ওপর। সংকটের ব্যাপ্তি আর গভীরতা সরকার উপলব্ধি করছে হয়ত। আর তাই খোদ প্রধানমন্ত্রী দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনার কথা বলেছেন। হতাশা এটাই যে বাংলাদেশের গণতন্ত্র বন্দি হয়েই রয়ে গেল।

শেয়ার করুন