২০ মে ২০১২, সোমবার, ০১:৫৭:৪৬ পূর্বাহ্ন


দেশকে বদরুল আনাম সৌদ
‘শ্যামাকাব্য’ কোনো সুপারহিরোর গল্প না
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৫-২০২৪
‘শ্যামাকাব্য’ কোনো সুপারহিরোর গল্প না বদরুল আনাম সৌদ


বদরুল আনাম সৌদ। নাট্যকার ও নাট্যপরিচালক হিসেবে মেধার পরিচয় দিয়েছেন অনেক আগে। তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা প্রশংসিত হয়েছে। এবার তিনি পরিচালনা করেছেন ‘শ্যামাকাব্য’। ৩ মে ঢাকাসহ সারাদেশে ‘শ্যামাকাব্য’ মুক্তি পেয়েছে। তবে মুক্তির দুই দিনের মধ্যেই সিনেমা হল থেকে সরিয়েছে নেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির 

প্রশ্ন: আপনার অনেক পরিশ্রমের সিনেমা ‘শ্যামাকাব্য’। কিন্তু মুক্তির দুই দিন পরই হল থেকে সরিয়ে ফেলেছেন কেন? 

বদরুল আনাম সৌদ: কিছু সিনেমা তো থাকে যেগুলো মুক্তির পর পরই ব্যাপক হিট হয়ে যাবে না, কিন্তু সিনেমাটি দর্শককে দেখার সুযোগ করে দিতে হবে। অথচ, সিনেমা মুক্তির পর থেকেই ম্যানেজমেন্টের লোকজন ‘সিনেমা তো চলছে না’ বলে বলে মানসিক যন্ত্রণা দিতে শুরু করেন। বিদেশি সিনেমাগুলোকে তারা ‘আমাদের সিনেমা’ বলেন, অথচ যে এলাকায় ‘শ্যামা কাব্য’র মতো সিনেমার দর্শক আছে বলে মনে করি, সেখানকার হলে তারা একটি প্রদর্শনীও রাখেন না। এটা কেবল শ্যামা কাব্যর বেলাতেই ঘটেনি, আগের অনেক সিনেমার বেলাতেও এমনটা হয়েছে। আমি হলের ম্যানেজমেন্টের এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে আমার সিনেমাটি উঠিয়ে নিয়েছি।

প্রশ্ন: পরিচালকের সিদ্ধান্তে সিনেমা উঠিয়ে নেওয়ার ঘটনা বিরল। আপনি কি আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে পারতেন না? 

বদরুল আনাম সৌদ: কেউ সম্ভবত এর আগে সিনেপ্লেক্স থেকে সিনেমা তুলে নেয়নি। আমি নিলাম। কারণ প্রথম দিন পর্দার সমস্যার কারণে দর্শক সিনেমাটি ভালো করে দেখতে পারছিলেন না। এ কারণে প্রথম দিনের একটি হাউসফুল শো বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও পরদিন হল পরিবর্তন করে সমস্যার সমাধান করা হয়। দ্বিতীয় কারণ হলো, পরের দিন দেখা গেল, একটি দৃশ্য শেষ না করে ওই দুশ্যের মাঝামাঝি সময়ে মধ্যবিরতি দেওয়া হচ্ছে। বিরতির পর শুরু হচ্ছে সেই দৃশ্যের পর থেকে। সর্বশেষ টিকিট বিক্রির হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নির্মাতা। তবে এ বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি। কিন্তু প্রদর্শনী টাইম নিয়ে তাঁর আপত্তির কথা জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, অনুরোধ করার পরেও যে সময়টায় হলে দর্শক কম থাকে, সেই মর্নিং শোতে রাখা হয় শ্যামা কাব্যর প্রদর্শনী। তাই স্টার সিনেপ্লেক্স থেকে শ্যামা কাব্য সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন: ‘শ্যামাকাব্য’ নিয়ে প্রত্যাশা কতটুকু ছিল?

বদরুল আনাম সৌদ: আমার প্রত্যাশা এখনও আছে। ‘শ্যামাকাব্য’ দর্শকদের ভালো লাগবে, দর্শকরা গ্রহণ করবেন। ভালো লাগার মতো গল্প আছে। বইপড়ার মতো অনুভূতি কাজ করবে সিনেমাটি দেখার পর। শুধু দেশে না, স্কটল্যান্ড কিংবা ভারতের যেকোনো জায়গায় ‘শ্যামাকাব্য’কে ফেলতে পারবেন। অনেক ব্যবসাসফল সিনেমা হবে এমনটি আশা না করলেও অনেক প্রশংসিত হবে এটুকু আত্মবিশ্বাস আছে। সিনেমা হলে না থাকলেও ওটিটিতে দেখা যাবে এটি। 

প্রশ্ন: কী ধরনের গল্প তুলে ধরেছেন?

বদরুল আনাম সৌদ: আমাদের আশপাশের মানুষের গল্প উঠে এসেছে। তারপরও নানাজনের রুচি নানারকম। ‘শ্যামাকাব্য’ কোনো সুপারহিরোর গল্প না। আমাদের গল্প।

প্রশ্ন: অভিনয়শিল্পীরা কতটা দরদ দিয়ে অভিনয় করেছেন?

বদরুল আনাম সৌদ: অভিনয়শিল্পীরা শতভাগেরও বেশি যদি কিছু থাকে, সেটাই দিয়েছেন। অসম্ভব দরদ ও ভালোবাসা দিয়ে তারা অভিনয় করেছেন। কেবল অভিনয়শিল্পীদের কথা বললে কম বলা হবে। সিনেমা একটি টিমওয়ার্ক। টিমের সঙ্গে যারা ছিলেন সবাই অসম্ভব সাপোর্ট ও শ্রম দিয়েছেন। তাদের কথা বলে শেষ করা যাবে না। প্রত্যেকে ভালোবাসা দিয়ে কাজটি করেছেন। আমি মুগ্ধ। যারা কাজ করেছন আমি তাদের ছাড়া কেউ না।

প্রশ্ন: ‘শ্যামাকাব্য’র সহ-প্রযোজক তো সুবর্ণা মুস্তাফা?

বদরুল আনাম সৌদ: হ্যাঁ। এটি অনুদানের সিনেমা। সবাই কম-বেশি জানেন, অনুদানের জন্য যা পাওয়া যায় তা একটি সিনেমা বানানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। কেননা, একটি সিনেমার জন্য অনেক টাকা লাগে। তারপরও অনুদান পেয়েছি সেজন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। এরপর সুবর্ণা সহ-প্রযোজক হিসেবে আছেন। তবে, সহ-প্রযোজক হিসেবে তিনি আমাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। কোনো রকম ইন্টারফেয়ার করেননি। সুন্দরভাবে শুটিং শেষ করতে পেরেছি।

প্রশ্ন: লোকেশন কীভাবে খুঁজে পেলেন?

বদরুল আনাম সৌদ: ঘুরতে ঘুরতে লোকেশন ঠিক করেছি। প্রচুর ঘুরেছি। পুরোনো জমিদার বাড়ি দরকার ছিল। ঘুরেছি অনেক। এভাবেই একসময় পেয়েছি বাড়িটি। 

প্রশ্ন: আত্মতৃপ্তির বিষয়টি নিয়ে যদি বলতেন।

বদরুল আনাম সৌদ: প্রথম সিনেমা ছিল ‘প্রথম প্রেমের মতো’। এটিও কম নয়। এটি আমার কাছে অনেকটা নিজের সিনেমা। আমি যেভাবে গল্প বলতে চেয়েছি, সেভাবেই বলতে পেরেছি।

শেয়ার করুন