২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৮:৬:৩১ পূর্বাহ্ন


নির্বাচনি প্রস্তুতি ও প্রচারণায় আওয়ামী লীগ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৩-২০২৩
নির্বাচনি প্রস্তুতি ও প্রচারণায় আওয়ামী লীগ


ক্ষমতায় থেকে শতব্যস্ততায় সময় কাটছে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের। এর মাঝেও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিটাও নিচ্ছেন এবং ছক কষছেন। যেহেতু এখনো নমিনেশনের জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। কে, কোথায় নির্বাচন করবেন, সেটা অনেকেই হয়তো জানেনও না। এমতাবস্থায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের এ প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত চষে বেড়ানোর কর্মসূচি নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার ব্যাপক ব্যস্ততা থাকলেও এর মধ্যেও তিনি একের পর এক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। দিচ্ছেন জনসভায় ভাষণ। গত তিন টার্ম তার দলের সফলতাগুলো তুলে ধরছেন। দেশের উন্নয়নগুলো মানুষকে মনে করিয়ে দিয়ে, আবারও তার দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাতে চাইছেন নৌকায় ভোট। 

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় প্রধানেরও নিজস্ব প্ল্যান রয়েছে। বিশেষ করে কোন সংসদীয় এলাকায় কে সফল, কে ব্যর্থ। কার জনপ্রিয়তা কেমন, কার কর্মদক্ষতা, সুনাম, দুর্নাম সবকিছুই যাচাই-বাছাই করছেন একই সঙ্গে। কারণ প্রতিটি আসনে কাকে মনোনয়ন দিলে দল সাফল্য পাবে এ খুঁটিনাটি বিষয় তার নখদর্পণে নেওয়ার চেষ্টাও করছেন। দীর্ঘদিন দলের কান্ডারি হিসেবে থেকে তিনি এসব এখন খুবই ভালো জানেন। নতুন করে কারোর কাছ থেকে জ্ঞান নেওয়ার ধারও ধারেন না।

শুধুই যে তার দলের নির্বাচন এটাও না। এর সঙ্গে তাকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে নির্বাচনসংক্রান্ত দেশ-বিদেশের অনেক বিষয়। বিশেষ করে প্রধান বিরোধী শক্তি ও তাদের সমমনাদের চাহিদা তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাওয়া, যা ইতিমধ্যে অসাংবিধানিক দাবি হয়ে গেছে। এরপরও ঐ দাবিটাই জোরালো। হাতে বেশি সময়ও নেই। এ বছরের শেষ এবং আগামী বছরের সূচনায় জাতীয় নির্বাচন। ফলে এর মধ্যে রোজা শুরু হতে যাচ্ছে। এর পর ঈদ, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা। সব মিলিয়ে সময় বড্ড কম। তাই প্রধানমন্ত্রী তার শতব্যস্ততার মাঝেও দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছাতে চান। মানুষের কথা সরাসরি শুনতে চান এবং তাদের কাছে নৌকাতে আবারও ভোট চান। এটাও ঠিক, দলীয় প্রার্থী নিয়ে এলাকায় মতবিরোধ থাকলেও দলের প্রধান শেখ হাসিনাকে নিয়ে বেশির ভাগ সমর্থকের কোনো মতবিরোধ নেই। দলীয় প্রধানের গ্রহণযোগ্যতাই ব্যাপক। সেটা শেখ হাসিনা নিজেও জানেন। তাইতো মানুষের কাছে ছুটছেন, ভোটও চাইছেন। মনে করিয়ে দিচ্ছেন তার সরকারের উন্নয়নের যে ফিরিস্তি, সেটাও। এমনকি তিনি যেখানে যাকে মনোয়নের জন্য বাছাই করবেন তাকে নিয়ে যাতে দল সন্তুষ্ট থাকে, সেটাও নিশ্চিত করছেন। 

তবে তৃণমূল গোছাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলটি বেশ কয়েক মাস ধরেই চেষ্টা করে গেছে। বিশেষ করে গত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হওয়ায় তৃণমূলে সাংগঠনিক তেমন কোনো চ্যালেঞ্জই ছিল না। একই সঙ্গে প্রধান প্রতিপক্ষের নির্বাচনে অনুপস্থিতির সুযোগে দলের একাধিক নেতা নির্বাচন করেছেন বিভিন্ন ব্যানারে। এতে তৃণমূলে দ্বন্দ্বও ব্যাপক। সেগুলো অনুধাবন করে সে সমাধানগুলো সাংগঠনিকভাবে মোকাবিলা করে একটা স্তরে নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ এখনো চলছে। 

ফলে দল ও সহযোগী সংগঠনকে তৃণমূল পর্যন্ত সুসংগঠিত করার পাশাপাশি নির্বাচনকেন্দ্রিক কাজগুলো এগিয়ে নিচ্ছে দলটি। পক্ষান্তরে বিএনপির এক্ষেত্রে বেশ গুছিয়ে ফেলেছে। ফলে বিএনপির বিপক্ষে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরও তৎপর রাখতে নানা কর্মসূচি দিচ্ছে দল। যেমনটা বিএনপির কর্মসূচির দিন শান্তি সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথেও সক্রিয় ক্ষমতাসীনরা। এর মধ্য দিয়েও নেতাকর্মীদের নির্বাচনি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। 

শেখ হাসিনার নির্বাচনি জনসভা 

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ আগভাগেই নির্বাচনি জনসভা শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে যশোর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাজশাহী এবং নিজ নির্বাচনি এলাকা টুঙ্গিপাড়ার কোটালীপাড়ায় নির্বাচনি জনসভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের এলাকায়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কিশারগঞ্জ ছিল তার সে কর্মসূচি। এর পর আগামী ১১ মার্চ ময়মনসিংহ এবং ১৮ মার্চ বরিশালে নির্বাচনি জনসভা করবেন তিনি। পবিত্র রমজানের আগে আপাতত এমন কর্মসূচি তার। এসব জনসভায় অংশগ্রহণের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চাইছেন নৌকায় ভোট।

এদিকে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনি ইশতেহার তৈরির কাজও শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির গত জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর এবার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় সেটা নিয়ে কাজ করছে দল। শেখ হাসিনাও তার জনসভাগুলো ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য সবাইকে প্ল্যান, পরিকল্পনা ও চিন্তা করার কথা বলেন এবং ওই লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছেন। 

সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও এগিয়ে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন সংস্থার জরিপসহ নানা মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বর্তমান এমপিসহ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ নিজে এসব বিষয় মনিটরিং করছেন। এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠনকে গোছানোর কাজও এগিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ।

শেয়ার করুন