২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০১:০৫:২১ পূর্বাহ্ন


ঈদের পর
১৯ থেকে ২১ জুলাই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোড মার্চ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৬-২০২৩
১৯ থেকে ২১ জুলাই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোড মার্চ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ


ঈদের পর ১৯ থেকে ২১ জুলাই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমু্খে রোড মার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিদ্যুতের লোডশেডিং ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূ্ল্যের কমানোর প্রতিবাদে সচিবালয় বিক্ষোভ কর্মসূচির আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণার করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম।

 

তিনি বলেন, ‘‘ এই সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন, সংবিধানের সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আমরা আগামী ১৯ থেকে ২১ জুলাই গণতন্ত্র মঞ্চ ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোড মার্চ করব। এরআগে গণতন্ত্র মঞ্চ  জেলায় জেলায় ও বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ করব এবং ঢাকায় পদযাত্রা করব। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জনগন শুধু সরকার বদল নয়, শাসন ব্যবস্থা বদলের লড়াইকে জয়যুক্ত করবে এই আশাবাদ আমরা ব্যক্ত করছি।”

 

গত ৪ জুন থেকে ৭ জুন গণতন্ত্র মঞ্চ দিনাজপুর অভিমুখে রোড মার্চ করে।

 

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বেলা ১২টায় গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা-কর্মীরা সমবেত হয়। বিদ্যুতের লোডশেডিং ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উধর্বগতির প্রতিবাদের সচিবালয় অভিমুখে বিক্ষোভ উপলক্ষে এই কর্মসূচি হয়। সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর বেলা ১টায় মিছিল নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ তিন শতাধিক নেতা-কর্মী তোপখানা রোড, পুরানা পল্টন মোড়, জিরো পয়েন্ট কাছে গেলে পুলিশ ব্যারিকেডের সামনে প্রায় আধা ঘন্টা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে।

 

গণতন্ত্র মঞ্চের এই কর্মসূচি উপলক্ষে জিরোপয়েন্টের কাছে ব্যাপক পুলিশ অবস্থান নেয় কাটাতারের সামনে অবস্থান নেয়।

 

‘সরকারের অবস্থায় কলোরার মতো’

 

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, ‘‘ দে্শের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এই সরকারের অবস্থা ডা্য়েরিয়া ও কলেরার মতো হয়েছে। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, মানবাধিকার, সুশাসন কিছুই নাই। এদের চলে যেতে হবেই।”

 

‘‘ আইয়ুব খানও যেতে চায়নি কিন্তু পরে তাকে যেতে হয়েছে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এই সরকারও ক্ষমতা ছাড়তে হবে, তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। জনগনের স্বার্থে, রাষ্ট্রের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে এই স্বৈরাচারি সরকারকে বিদায় করতে হবে, এই সরকারকে চলে যেতে হবে।”

 

তিনি বলেন, ‘‘ সরকারি দলের মন্ত্রীরা এমন কথা বলে মাঝে মাঝে আসলে খুটার জোরে… ছাগল নাচে খুটার জোর।এদের পায়ের তলায় মাটি আছে কিনা সেটা জানে না। ওদের যে মেইন খুটা তার নিচে মাটি নাই, ওটা নড়বড়ে অবস্থা। দেশের মানুষকে রাস্তায় নেমে দাবি আদায় করতে হবে। উনি বলছেন যে, সিদ্ধান্ত। কিসের সিদ্ধান্ত? সবে মাত্র লোক নেয়া বন্ধ হচ্ছে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে। আমি ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর বলেছিলাম আপনারা(সরকার) বিভিন্ন বাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছেন… রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নাম আমি বলছি না… বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের অর্থ পাঠিয়েছে। আজকে প্রশাসনের দলীয় লোকজনকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। এটার পরিণতি শুভ হবে না।”

 

প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ থেকে জনগনের পক্ষে থাকার আহ্বান জানান রব।

 

‘ডিসেম্বর-নভেম্বর কাটিং টাইম’

 

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘ এটা একটা স্বৈরাচারি, লুটপাটকারী, ডাকাত, অত্যাচারি, মিথুক সরকার। জনগনের সাথে প্রতারণা করে ক্ষমতায় থাকবার চেষ্টা করছে।আগে শুধু আমরা বলতাম তখন বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি দেখাতো, জনগনকে বিভ্রান্ত করবার জন্য বিভিন্ন রকম কাহিনী বানাতো। এখন জাপানি অ্যাম্বেসেডর বলে দিনের ভোট রাত্রে হয় আমরা তো দেখিনি, এখন আমেরিকা বলে তোমাদের ভোট ঠিক হয়নি, এটা এখন আমরা জানতে পেরেছি। ইউরোপ বলে, সারা দুনিয়া বলে বাংলাদেশে এখন একটা ভোট ডাকাত সরকার আছে। সেজন্য আমরা বলি তোমরা যাও, মানে মানে চলে যাও, তোমাদের চলে যেতে হবে।”

 

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা কর্মসূচি নিয়ে ধাপে ধাপে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। আমরা জানি, নভেম্বর ইজ দি কাটিং টাইম, ডিসেম্বর ইজ দি কাটিং টাইম। এর মধ্যে সরকারের কাটাকাটি শেষ করতে হবে। নিজের থেকে করবে নইলে আমরা করব। সেই লক্ষ্যে ঈদের পরে আরও বৃহত্তর সর্বব্যাপক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রত্যয় ঘোষণা করছি।”

  

‘এই সরকার দ্রব্যমূল্য কমাতে পারবে না’

 

 

গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাক সাইফুল হক বলেন, ‘‘ বাজার এখন সরকারের কেনো নিয়ন্ত্রণ নাই। মুনাফার ভাগ উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সব জায়গাতে ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যাচ্ছে। সেই কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতিতে এই বছরেই ৫০-৬০ লক্ষ মানুষ নতুন করে দ্রারিদ্র সীমার নিচে নেমে এসেছে। যদি এভাবে চলে এই বছরের শেষের দিকে আরো ৫০-৬০ লক্ষ মানুষ বাজারের অগ্নিমূল্যের কারণে মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে নেমে আসবে। তার মানে সরকার দেশ চালাতে পারছে না, কোনোভাবে তারা চালাতে পারছে না। খাদ্যপণ্যের দাম ১০গুনও বাড়ে ক্ষমতাসীনদের কিছু যায় আসে না। মানুষ বলে এরা গত ১৫ বছরে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা তারা যে আত্মসাত করেছে আগামী ২শ বছর এদের ১৪ পুরুষ খেয়েও এই টাকা শেষ করতে পারবে না। ”

 

তিনি বলেন, ‘‘ সরকারের অবস্থা কি? মনে হচ্ছে বিরাট বটবৃক্ষ। সেই বটবৃক্ষের শেখড়গুলো এখন উপড়ে গেছে, শেখড় আর নাই। জনগনের যে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ, গণআন্দোলন-গণসংগ্রাম যেভাবে জেগে উঠছে আরেকটা ধাক্কা দিলে এই যে বটবৃক্ষ যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশের মানুষ আজকে তৈরি হচ্ছে।”

 

‘‘ সরকার বলছি, সিধা পথে হাটেন। অনতি বিলম্বে শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার এখনো আপনার রাস্তা খোলা আছে। আপনারা সেখানে কিভাবে পদত্যাগ করবেন, কিভাবে অন্তবর্তীকালীন সরকতার হবে, কিভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এর রাস্তা খোলা আছে। সরকার যদি সিদ্ধান্ত না নেন ঈদের পরে গণজাগরণ আরো বেগবান হবে, গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে এই সরকার বিদায় হবে।”

 

‘জনগন বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে নাকাল’

 

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘‘ মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতিতে নাকাল অবস্থায় আছে, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে নাকাল অবস্থায় আছে জনগন। এই সরকার বলেছি ঘরে ঘরে বিদ্যুত দেবে। কিন্তু কত দামে দেবে আগে বলে নাই। আমরা সাশ্রয়ী বিদ্যুতে ছিলাম কিন্তু এই সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুতের নাম যা করল একদিকে বিদ্যুতে দাম কত হয়েছে তা আপনারা প্রত্যেকে জানেন। মাস শেষে বিদ্যুতে বিল দিতে গিয়ে অথবা ঘরভাড়ার সাথে যখন বিদ্যুতের বিল দেন তখন প্রত্যেকেরই টের পেতে হয় কয় টাকা বিদ্যুতের বিল বাবদ যায়।

 এই বিদ্যুতের দাম বাড়ার ফলে সব জায়গায় এর প্রভাব পড়েছে। বিদ্যুত সব জায়গায় লাগে। সমস্ত পণ্য তৈরি করতে বিদ্যুত লাগে। সুতরাং বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে সব জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। বিদ্যুতের সংকটকে কাজে লাগিয়ে সরকার লুটপাটের যে ফন্দি এঁটেছিলো তার মাধ্যমে এই সরকার ও তার আত্বীয়-স্বজন, ভাই-ব্রাদাররা লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লুট করেছে। এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে লুটপাট বন্ধ হবে না, বাজারের ঊধর্বগতিও থামবে না, বিদ্যুতের লোডশেডিংও বন্ধ হবে না। এদেরকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতে হবে। এরপর রাজপথে গণঅভ্যত্থান দরকার। আমাদেরকে রাস্তায় নেমে আসতে হবে।”

 

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী অনুসারি পরিষদের হাবিবুর রহমান রিজু, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারি, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আকবর খানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন