২৭ জুলাই ২০১২, শনিবার, ০১:৫৩:৪৩ অপরাহ্ন


দেশকে কুমার বিশ্বজিৎ
পৃথিবীর সবকিছুই আমার সন্তানের কাছে ক্ষুদ্র
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৫-২০২৪
পৃথিবীর সবকিছুই আমার সন্তানের কাছে ক্ষুদ্র কুমার বিশ্বজিৎ


কুমার বিশ্বজিৎ। আধুনিক বাংলা গানে আলো ছড়াচ্ছেন চার দশক ধরে। দীর্ঘ এই সময়টকে একটু অন্যরকমভাবে উদযাপনের পরিকল্পনা করেছেন গুণী এই সঙ্গীতশিল্পী। এই পরিকল্পনা এবং ১৫ মাস আগে দুর্ঘটনায় কবলিত তার সন্তান নিবিড়ের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির 

প্রশ্ন: গত এপ্রিলে একটা কনসার্টে অংশ নিয়ে ছিলেন। ওইটুকু বাদ দিলে অনেক দিন ধরে আপনি গানের বাইরে। গান নিয়ে এখন আপনার পরিকল্পনা কি?

কুমার বিশ্বজিৎ: গান নিয়ে ওইভাবে আমার আর বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। গত ১৫ মাস ধরে আমার ঠিকানা ঢাকার উত্তরার পরিবর্তে কানাডার টরেন্টো। আপনার সঙ্গে কথা বলা শুরুর (মোবাইলে) আগে সেন্ট মাইকেল হাসপাতাল থেকে। ছেলে এখনও হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন। ওকে ওই অবস্থায় রেখে গান নিয়ে কি পরিকল্পনা করব বলেন। 

প্রশ্ন: কিন্তু এরমধ্যেই আপনি নাকি সঙ্গীতের চার দশক পূর্তি উদযাপন করছেন। এটা সত্যি নাকি গুঞ্জন?

কুমার বিশ্বজিৎ: যা শুনেছেন তা সত্যি, গুঞ্জন না। তবে পরিকল্পনাটা অনেক আগের। ২০২২ সালেই আয়োজনটির পরিকল্পনা ছিল। করোনার কারণে দেরি হচ্ছিল। হঠাৎ করেই আমার ছেলের দুর্ঘটনা ঘটে গেল। সব মিলিয়ে আর করা হয়নি চল্লিশ পূর্তি। এবার পরিকল্পনা করা হচ্ছে আগামী অক্টোবরে আয়োজনটি করব। আমার গাওয়া ৫০টি গান প্রকাশ করা হবে। পুরোনো গানের নতুন সংগীত আয়োজনের পাশাপাশি থাকবে নতুন গান। এখন তো ফিউশনের যুগ। যত্ন নিয়ে কাজগুলো করা হচ্ছে। ফিউশনটা এমনভাবে করা হবে যেন গানের মৌলিকত্ব নষ্ট না হয়। সংগীতের কোনো বিষয়ে কখনোই কোনো আপস করিনি। এবারও করব না। এবার দেশে ফিরে কয়েকটি গানের কাজ শেষ করে এসেছি।

প্রশ্ন: শুধু গান নিয়েই কি এই আয়োজন?

কুমার বিশ্বজিৎ: অনেক ধরনের আয়োজন থাকবে। পুরো আয়োজনটি হবে গান বাংলার তত্ত্বাবধানে। সবকিছু চূড়ান্ত হলে সংবাদ সম্মেলন করে আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে। 

প্রশ্ন: কেমন হতে পারে সেই আয়োজন?

কুমার বিশ্বজিৎ: কনসার্ট ও গান প্রকাশের পাশাপাশি সংগীত নিয়ে নানা আয়োজন তো থাকবেই। এ ছাড়া আরও পরিকল্পনা আছে। যেগুলো কখনো বাংলাদেশে হয়নি, এটা আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি। আমি একটা উদাহরণ তৈরি করে যেতে চাই, যাতে এখনকার প্রজন্ম নতুন করে ভাবতে পারে যে, চাইলে সেও একদিন এমন জায়গায় পৌঁছাতে পারে। সব ঠিক থাকলে আগামী অক্টোবরের শেষ দিকে হবে অনুষ্ঠান। তবে কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে জুলাই মাসে। ২৪ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন হবে। সেখানেও এমন কিছু হবে, যা আগে কখনো হয়নি। আগে থেকে কিছু জানাতে চাইছি না, কারণ মেধা চুরির কোনো বিচার নেই। আগে জানিয়ে দিলে পরিকল্পনাগুলো কেউ না কেউ নিয়ে নেবে। এমন অনেক অভিজ্ঞতা আছে আমার জীবনে। আমার অনেক গানের লিরিক চুরি হয়েছে। বন্ধুবান্ধব, সহশিল্পীদের সঙ্গে গানের আইডিয়া শেয়ার করেছি, পরে দেখি সেই থিমের গান রিলিজ করে দিয়েছে। তাই আগে থেকে কিছু বলতে চাইছি না। যতদূর পারি আগলে রাখার চেষ্টা করছি। 

প্রশ্ন: শেষবার দেশে এসে স্টেজ শোতে অংশ নিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন পর স্টেজে ফেরার অনুভূতি কেমন ছিল? 

কুমার বিশ্বজিৎ: ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই অনেকে আমার পাশে ছিলেন। এবার আমার ছেলে অসুস্থ হওয়ার পর সবাই যেভাবে প্রার্থনা করেছে, নিবিড়ের খোঁজখবর নিয়েছে, সবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতাবোধ আছে। সেই কৃতজ্ঞতাবোধের জায়গা থেকেই স্টেজে ফেরা।

প্রশ্ন: নিবিড়ের অসুস্থতার কারণে অনেক দিন গান থেকে দূরে ছিলেন। কেমন ছিল গান ছাড়া দিনগুলো? 

কুমার বিশ্বজিৎ: শিল্পী হিসেবে গান থেকে দূরে থাকাটা কষ্টের হলেও বাবা হিসেবে আমার ছেলে সবকিছুর ঊর্ধ্বে। শুধু গান নয়, পৃথিবীর সবকিছুই আমার সন্তানের কাছে ক্ষুদ্র। ওর সুস্থ্যতা ও ভালো হওয়াটাই আমার কাছে মুখ্য বিষয়। এই অনুভূতি পৃথিবীর সব বাবার কাছে একই রকম। মানুষের সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু তাঁর সন্তান। আমার স্বপ্ন, প্রত্যাশা ও ভবিষ্যৎ সব ওকে ঘিরে। গান তো অনেক দিন গাইলাম মানুষের জন্য। এবার না হয় নিজের সন্তানের জন্য কিছুটা সময় রাখলাম।

প্রশ্ন: আবার দেশে ফিরবেন কবে?

কুমার বিশ্বজিৎ: নিবিড়ের অসুস্থতার পর থেকে কানাডাতেই থাকছি। নিবিড়ের মা একা কুলিয়ে উঠতে পারে না। জুনের মাঝামাঝি সময়ে আবার দেশে ফেরার পরিকল্পনা আছে। তখন আয়োজনের বাকি গানগুলো রেকর্ড করার কথা আছে।

 প্রশ্ন: এবারও কি স্টেজ পারফর্ম করার পরিকল্পনা আছে?

কুমার বিশ্বজিৎ: দেশের পাশাপাশি বিদেশেও অনেক কনসার্টের অনুরোধ আসছে। আগামী আগস্ট ও সেপ্টেম্বর দুই মাস যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি শোতে অংশ নেব। আমেরিকা ও কানাডায় অনেক দিন থেকেই স্টেজ শোয়ের অনুরোধ আসছে। গতবার দেশে ফেরার পর কনসার্টে ফেরার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ভালো থাকার বৃথা চেষ্টা মনে হচ্ছিল আমার কাছে। তাই অনেকগুলো শো বাতিল করেছি। ট্রাই করে দেখলাম এত দিন পর গানে ফিরে কেমন লাগে। দেখলাম সন্তান সবকিছুর ঊর্ধ্বে। কারণ, গাইতে গেলে গানের ইমোশন আসে না। আবার, ইমোশন এলে চোখে জল চলে আসে। যেটা একজন বাবা হিসেবে খুব কষ্টের। যে পরিস্থিতিতে দেড় বছর ধরে আছি, এটা মেনে নেওয়া অনেক কষ্টের। নিবিড়ের সঙ্গে আমার শুধু বাবা-ছেলের সম্পর্ক নয়। ওর সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক। এমন কোনো বিষয় ছিল না যা ওর সঙ্গে আমি শেয়ার না করতাম। নিবিড়ও সব বিষয়ে আমার সঙ্গে আলাপ করত। দূরে থাকলেও দিনে অন্তত ৩০ বার কথা হতো দুজনের। 

প্রশ্ন: নিবিড়ের শারীরিক অবস্থা এখন কেমন?

কুমার বিশ্বজিৎ: আগের চেয়ে ভালো। খুব ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। এখনো কথা বলতে পারছে না। পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার অপেক্ষা করছি। এটা আসলে একটা লং জার্নি। জানি না কার দোয়া কাজে লাগবে। তাই সবার কাছে দোয়া চাই, নিবিড় যেন সুস্থ্য হয়ে ওঠে।

শেয়ার করুন