২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৪:৩২:৫৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


সাহিত্য একাডেমির মাসিক সাহিত্য আসর
পলি শাহীনা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৬-২০২২
সাহিত্য একাডেমির মাসিক সাহিত্য আসর সাহিত্য একাডেমির আসরে উপস্থিতি


জ্যাকসন হাইটসের একটি মিলনায়তনে গত ২৭ মে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্কের নিয়মিত মাসিক সাহিত্য আসরটি। পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন। এবারের আসরটি দুটি পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। সদ্য প্রয়াত সাংবাদিক, সাহিত্যিক, কলাম লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরী স্মরণে প্রথম পর্বটি উত্সর্গ করা হয়। দ্বিতীয় পর্বে ছিল যথারীতি স্বরচিত পাঠ, আবৃত্তি এবং আলোচনা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে আবদুল গাফফার চৌধুরীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং শোক জানিয়ে তাঁর অমর সৃষ্টি ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি..’ সংগীতটি পরিবেশন করেন শিল্পী ম্যারিস্টোলা আহমেদ শ্যামলী। তাঁর জীবনী পাঠ করে শোনান আবৃত্তিকার আনোয়ারুল হক লাভলু।

আবদুল গাফফার চৌধুরী স্মরণে আলোচনায় অংশ নেন লেখক হাসান ফেরদৌস, সাংবাদিক মঞ্জুর আহমেদ মুহাম্মদ ফজলুর রহমান। 

হাসান ফেরদৌস বলেন, আবদুল গাফফার চৌধুরীর অনেক পরিচয় ছাপিয়ে আমাদের মনে যে পরিচয়টি দাগ কেটেছে, তিনি আমাদের মত একজন অভিবাসী বাঙালি। জীবনের আটচল্লিশ বছর তিনি ব্যয় করেছেন প্রবাসে। মিল অন্যখানেও আছে, এই যে আমরা এখানে বসে আছি, বাংলায় কথা বলছি, বাংলাদেশের কথা ভাবছি, বাঙালির কথা ভাবছি, গাফফার ভাইও আজীবন প্রবাসে থেকেও বাঙালির ইতিহাস গড়েছেন। দেশ ত্যাগের পরও তিনি অকান্তভাবে দেশকে নিয়ে ভেবেছেন এবং দেশের কথা লিখেছেন। তাঁর লেখাগুলোর মধ্যে আমাদের ইতিহাস ধরা পড়ে এবং ইতিহাসের যে বাঁকগুলো আছে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। গাফফার চৌধুরীকে আমরা মনে রাখবো তাঁর চোখ দিয়ে আমাদের চোখে বাংলাদেশকে চিনতে শিখিয়েছেন বলে। তাঁর সঙ্গে আড্ডা হয়েছে, কথা হয়েছে শুধু বাংলাদেশকে নিয়ে। সকল প্রবাসীর প হতে হাসান ফেরদৌস তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। 

মঞ্জুর আহমেদ বলেন, নিউইয়র্কে গাফফার চৌধুরী স্মরণে সাহিত্য একাডেমির এমন সভা এবং সভায় উপস্থিতি অভিভ‚ত করেছে। এমন আয়োজনের মাধ্যমে বাংলা এবং বাঙালি সম্প্রদায়কে মহিমান্বিত করার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, গাফফার চৌধুরী ডান হাতে, বাম হাতে সমানে লিখে গেছেন সমস্ত বিষয়ের ওপরে। তাঁর অনেক লেখা হয়ত অনেকের পছন্দ হয়নি কিন্তু তাঁর সব কিছুতে সবার উপরে ছিল বাংলাদেশ। যে বিষয়ে যখন যা লিখেছেন বাংলাদেশকে প্রাধান্য দিয়েছেন। গাফফার চৌধুরী মানুষের সঙ্গে উদার মনে মিশতেন। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি..’ আবদুল লতিফের পর আলতাফ মাহমুদের সুরে এ গানটি মানুষ দারুণভাবে গ্রহণ করে এবং এটি সর্বত্র গীত হতে থাকে। তাঁর মতে বাংলাদেশে জাতীয় সংগীতের পর সবচেয়ে বেশি মাঠে-ঘাটে-হাটে এ সংগীতটি গাওয়া হয়ে থাকে। গাফফার চৌধুরীর অনেক কীর্তির মধ্যে এ গানটি তাঁকে চিরস্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি আসরে একটি স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। 

মুহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, গাফফার চৌধুরী যেমন অন্যের সমালোচনা করতে পারতেন, তেমন অন্যের সমালোচনা সইতেও পারতেন। তাঁকে নিয়ে যারা কট‚ক্তি করেছেন, তারা নিজেদেরই নিন্দিত করেছেন। তাঁর গায়ের রঙ এতো কাঁচা ছিল না যে কারো কথায় উঠে যাবে। সে অত্যন্ত পাকা রঙের মানুষ, তাঁর রঙ ঘষেও উঠানো যাবে না। তিনি বাঙালির মনন তৈরি করেছেন, বাঙালিদের প্রকৃত বাঙালি হওয়ার পথ তৈরি করেছেন।

দ্বিতীয় পর্বে যাঁরা স্বরচিত পাঠ করেন এবং কথা বলেন তাঁরা হলেন, শামস আল মমীন, ফকির ইলিয়াস, মাহফুজা শীলু, এবিএম সালেহ উদ্দিন, শামস চৌধুরী রুশো, জেবুন্নেসা জ্যোত্স্না, ফারহানা হোসেন, সোহানা নাজনীন, শেলী জামান খান, সুমন শামসুদ্দিন, লায়লা ফারজানা, তাহমিনা খান, বেনজির শিকদার, ফারহানা ইলিয়াস তুলি, ইশতিয়াক রূপু, রূপা খানম, রাজিয়া চৌধুরী, তুহিন আক্তার, তামান্না শান্তি, সুলতানা ফেরদৌসী, মিয়া জাকির, এমএ সাদেক, আজিজুল হক, পলি শাহীনা প্রমুখ। 

সকলের স্বরচিত পাঠ শুনে কবি তমিজ উদদীন লোদী তরুণ লেখকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সকলে আগের চেয়ে ভালো লিখছে। গদ্য, পদ্য দুটোতেই সকলে সমান্তরালে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি সকলের লেখা মুগ্ধতার সঙ্গে পড়েন এবং সকলকে সাধুবাদ জানান। আসরে পঠিত লেখাগুলোর প্রতি তাঁর ভালোলাগা উল্লেখ করে বলেন, সকলে যেন চর্চা চালিয়ে যায়। তারা যেন আত্মতৃপ্তিতে না ভোগে। আত্মতৃপ্তি ভরাডুবির একটি বড় রাস্তা। সৃষ্টির প্রতি বিনয় যেন কাউকে ছাড়িয়ে না যায়। 

অধ্যাপিকা হুসনে আরা বলেন, আমি লিখি না, আমি একজন শ্রোতা। আমরা খুব দুঃসময় পার করছি- এতোণ ধরে লেখক বন্ধুদের লেখায় এ বিষয়টি উঠে এসেছে বারবার। এ দুঃসময় পার করার জন্য শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চাই হবে অন্যতম উপায়। আমরা যত মানবিক হবো, বিশ্ব তত বেশি মানবিক হয়ে উঠবে। 

নীরা কাদরী বলেন, সাহিত্য একাডেমি আমার ভালো লাগার জায়গা। আজ সাহিত্য একাডেমিতে এসে অনেক নতুন মুখের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। তিনি অরবিন্দ গুহের একটি কবিতা পাঠ করেন। 

কবি কাজী আতীক বলেন, মহামারী অতিক্রম না করতেই বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ যুদ্ধ ব্যাপার দেখছি। অবশ্যই কোনো পরে ব্যাপার না, আমি সবসময় যুদ্ধের বিপ।ে এ বিষয়ে তিনি তাঁর লেখা পাঠ করেন। 

লেখক সোনিয়া কাদের বলেন, অনেক অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখি অনেকেই ফিসফিস করে কথা বলছেন, নয়তো ফোন হাতে নিয়ে ছবি তুলছেন। সাহিত্য একাডেমিতে এ বিষয়টি নেই। সাহিত্য একাডেমি সাহিত্যচর্চায় তাঁকে সবসময় উজ্জীবিত রাখে, তিনি স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। 

বাফার কর্ণধার ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমি লিখি না, কিন্তু সাহিত্য ভালোবাসি। মাসের শেষ শুক্রবার সাহিত্য একাডেমিতে এসে সকলের স্বরচিত পাঠ শুনতে ভালো লাগে। আবৃত্তি করেন, গোলাম মোস্তফা, নাসিমা আক্তার ও এমএ সাদেক।

আসরে আরো যারা উপস্থিত ছিলেন, আহমাদ মাযহার, আবেদীন কাদের, আখতার আহমেদ রাশা, মিশুক সেলিম, খালেদ সরফুদ্দীন, মাইন উদ্দীন আহমেদ, রিমি রুম্মান, মনিজা রহমান, উইলি মুক্তি, আকবর হায়দার কিরণ, স্বপ্ন কুমার, শিরীন রহমান, সৈয়দ আহমেদ জুয়েদ, মোহাম্মদ নাসির শিকদার, সৈয়দ হাসমত আলী, মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন, ছালামত চৌধুরী, রাহাত কাজী শিউলি প্রমুখ।

উল্লেখ্য, এবারের আসরে আবু সায়ীদ রতন আবদুল গাফফার চৌধুরী স্মরণে একটি পোস্টারে স্বার নেন।

সকলকে ধন্যবাদ এবং আগামী আসরের আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন মোশাররফ হোসেন।

শেয়ার করুন