২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৩:৪৮:১২ পূর্বাহ্ন


বাংলাদেশে রাজনৈতিক সুনামির আশঙ্কা
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১০-২০২২
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সুনামির আশঙ্কা


জ্বালানি সংকট, বিদ্যুৎ সংকটে ভুগছে রফতানিমুখী শিল্পখাত, দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত, ডলার সংকট আমদানি রফতানির ওপর প্রভাব ফেলছে, রেমিট্যান্স কমছে, অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে।

খোদ প্রধানমন্ত্রী বলছেন, আগামী বছর বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও চরম অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে। তিনি বারবার কৃচ্ছ্রতার আহ্বান জানাচ্ছেন। সরকার সব ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। সর্বগ্রাসী দুর্নীতির লাগাম ধরতে ব্যর্থ হওয়ায় হাহুতাশ শুরু হয়েছে। আর কিছুদিন জ্বালানি সংকট চললে অনেক ছোট-বড় শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। কারো যেন কিছুই করার নেই। সরকারের কিছু মন্ত্রী এবং প্রধান বিরোধীদলের প্রতিনিধিরা বাহাস করছে নির্লজ্জ বেহায়ার মতো। একশ্রেণির সুবিধাভোগী মহল সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টায় মত্ত।

দেশের জ্বালানিসম্পদ মাটির নিচে রেখে আমদানির নেশায় মত্ত পলিসি মেকাররা সংকট ডেকে এনেছে।  জুজুর ভয় দেখিয়ে উত্তর বাংলার মূল্যবান কয়লাসম্পদ তোলা হয়নি, গ্যাস উত্তোলন নানা টালবাহানায় নিতান্ত সীমিত। ফলে দ্রুত আতঙ্কজনিতভাবে কমছে প্রমাণিত গ্যাসসম্পদ। দেশের অগভীর উপকূল অঞ্চল জ্বালানি আমদানির অবকাঠামো সৃষ্টির জন্য অনুপযুক্ত। জল-স্থল কোথায়ও তেল-গ্যাস উত্তোলনের কার্যক্রমে জোরদার কার্যক্রম দৃশ্যমান হচ্ছে না। নিরঙ্কুশ আমলা নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি অক্টোপাস বাঁধনে বেঁধে ফেলেছে জ্বালানি খাত। গতিশীল নেতৃত্বকে নিরুৎসাহিত করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বর্তমান সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ। পিএসএমপি ২০১০, ২০১৬ মণ হয়নি। একইভাবে পরিকল্পনাধীন গ্যাস, বিদ্যুৎ সমন্বিত পরিকল্পনায় বাস্তবায়িত হবে সেটি বিশ্বাস করার ভরসা নেই। স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে জাতীয় ক্রয় নীতিমালা উপেক্ষা করে দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ আইন (ইনডেমনিটি) করে অস্বচ্ছভাবে বড় প্রকল্পসমূহে মালামাল, সেবা ক্রয় করা হয়েছে। তথকথিত ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সক্ষমতার (?) কথা বলা হলেও এখন ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুৎখাত।  লজ্জাহীনের মতো বাগাড়ম্বর করছে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। প্রতিবেদক স্বয়ং সশরীরে উপস্থিত থেকে দেখেছেন  আশুলিয়া, মাওনা এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট। আরো দেখেছেন গ্যাস সিস্টেমে লিকেজ। শুনছি লক্ষ লক্ষ অবৈধ সংযোগের কথা। আনুমানিক ২৫০-৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চুরি আর লিকেজের কারণে অপচয় হচ্ছে। গ্যাস বিতরণে হরিলুটের মহাচোরদের বিচার না হওয়ায় সংকট পরিত্রাণে সব উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ। দুর্যোগ সহসা কাটবে বলে মনে হয় না।

দেশের জ্বালানি উত্তোলন বিষয়ে স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের কোনো সুপারিশে কান দেয়নি পলিসি মেকাররা। প্রতিবেদক স্বয়ং পরিদর্শন করে দেখেছেন, বড়পুকুরিয়ায় কয়লাখনি পরিবেশের ওপর কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলেনি। নিবিড় ধান চাষ হচ্ছে। খনি এলাকায় পানি সংকট নেই। গাছপালা সবুজ। শুধু এক্সপ্লোসিভ আমদানির অমলাতান্ত্রিক জটিলতায় প্রায়শই বিঘিœত হচ্ছে খনন। বড়পুকুরিয়া এবং পুরোপুরি প্রস্তুত ফুলবাড়ী থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনন হলে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ৫০ বছর উৎপাদন করা সম্ভব। পরিবেশ সম্মত উপায়ে কয়লা দীর্ঘদিন উৎপাদিত হচ্ছে পাশের ঘরের প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার আর ঝাড়খন্ড এলাকায়।  প্রতিবেদক পরিদর্শন করে পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় কয়লা আমদানির সীমাবদ্ধতা দেখেছেন। পায়রায় সমুদ্রবন্দর স্থাপন অনেক অনেক চালেঞ্জের মুখোমুখি। একই চ্যালেঞ্জ আছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা সরবরাহে। একমাত্র মাতারবাড়িতেই কয়লা আমদানির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সেখানেও বাতিল করা হয়েছে বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ।

এলএনজি আমদানির কার্যক্রম সীমিত। জ্বালানি বাজারে অগ্নিমূল্যের কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি কার্যক্রম স্থগিত। দীর্ঘকালীন আমদানি চুক্তির অধীন আমদানি কমেছে। সরকার কেন অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানির উদ্যোগ নিচ্ছে না? অনেকের ধারণা চিহ্নিত মহলকে সুবিধা দেয়ার জন্য সরকার ফন্দিফিকির করছে।

পরিবেশ বলী জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকট অব্যাহত থাকলে অচিরে রফতানি বাণিজ্য ব্যাপক সংকটে পড়বে, ডলার সংকটে আমদানি ব্যাহত হবে। ফলশ্রুতিতে অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হবে। এমতাবস্থায় মেগাপ্রকল্পসমূহের ঋণের সুদ পর্ষদের দায় বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ে চাপ সৃষ্টি করবে। সরকারপ্রধান নিজেই মহাদুর্যোগের পূর্বাভাস দিচ্ছেন। কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙবে কবে?

এখনই গ্যাস সিস্টেমে চুরি, অপচয় রোধ করার জন্য যুদ্ধ ঘোষণা অপরিহার্য। যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়ে গ্যাস-তেল আহরণ করতে হবে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি আহরণের সকল পন্থা দ্রুত গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ সাপ্লাই চেইনের সকল পর্যায়ে দক্ষতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সঠিক পেশাদারদের সঠিক স্থানে যথাযথ ইনসেনটিভ দিয়ে দায়িত্ব দিতে হবে এবং ইশান কোণে মেঘ জমেছে। দুরন্ত সুনামি যেন লণ্ডভণ্ড করে না ফেলে ভয় হয়। জনতার সহনীয়তার বাঁধ ভেঙে জোয়ার আসলে মহাবিপদ। 

শেয়ার করুন