২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৬:৪৯:৪৮ পূর্বাহ্ন


দেশকে বেবী নাজনীন
রাজনীতির কারণে আমাকে কোণঠাসা করা হয়েছে
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৮-২০২৩
রাজনীতির কারণে আমাকে কোণঠাসা করা হয়েছে সঙ্গীতশিল্পী বেবি নাজনীন


২৩ আগস্ট। সঙ্গীতশিল্পী বেবী নাজনীনের জন্মদিন। বর্তমানে নিউইয়র্কে আছেন তিনি। পারিবারিকভাবেই নিজের জন্মদিনের সময়গুলো পার করতে চান বেবী নাজনীন। হোয়াটসঅ্যাপে নিজের গান, অনুষ্ঠান আর দেশের শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে নানা কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার প্রতিনিধি আলমগীর কবির

প্রশ্ন: জন্মদিনের শুভেচ্ছা। কেমন আছেন, কোথায় আছেন?

বেবী নাজনীন: ধন্যবাদ। ভালো আছি। আমি এখন নিউইয়র্কে।

প্রশ্ন: দেশে ফিরবেন কবে?

বেবী নাজনীন: সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষ দিকে ঢাকায় ফেরার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে নির্দিষ্ট তারিখ এখনই বলতে পারছি না। 

প্রশ্ন: জন্মদিন কীভাবে কাটাচ্ছেন?

বেবী নাজনীন: পারিবারিকভাবেই দিনটি কাটাব। জন্মদিন মানে জীবন থেকে আরও একটি বছর হারিয়ে যাওয়া। আয়ু আরও কমে যাওয়া। তবু মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া, তিনি সুস্থ রেখেছেন, ভালো রেখেছেন। জন্মদিনে বিশেষ কোনো আয়োজন নেই। পরিবারের লোকজনের সঙ্গেই সময় কাটবে। সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য।

প্রশ্ন: জন্মদিনে বিশেষ কোনো রান্নাবান্না করবেন?

বেবী নাজনীন: রান্না করতে ভীষণ ভালো লাগে আমার। পছন্দের খাবার গরম ডাল, ডিম ভাজি ও আলু ভর্তা। ছেলের পছন্দ আমেরিকান খাবার। তাই আমার জন্মদিনে ছেলের জন্য তার পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়াব। 

প্রশ্ন: নিউইয়র্কে আপনার সঙ্গীত চর্চা কেমন হচ্ছে?

বেবী নাজনীন: আমার পেশাই যখন সঙ্গীত। তো এটার চর্চা তো থাকবেই। নিয়মিত রেওয়াজ করি। বিভিন্ন জায়গায় কনসার্টও করি। সর্বশেষ গত ১৯ আগস্ট নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড ফেস্টিভ্যাল ২০২৩’এ পারফর্ম করেছি। ওখানে দর্শকদের অনুরোধে নানা ধরনের গান গেয়েছি। আসলে কোন গান কোথায় গাইব, এটা নির্ভর করে কোন ধরনের গানের শ্রোতার সামনে আমি উপস্থিত রয়েছি। নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করতে হয়, প্রস্তুত রাখতে হয়। একজন শিল্পীর সবচেয়ে বড় পরীক্ষার জায়গা হলো মঞ্চ। এটা বড় কঠিন জায়গা। নানা রকম মানুষের সমাগম ঘটে। নানা রকম গানের অনুরোধ আসে।

প্রশ্ন: আপনি তো লেখালেখিও করেন?

বেবী নাজনীন: চেষ্টা করি। আমার গাওয়া বেশ কিছু গান লিখেছি আমি। ‘সে’, ‘ঠোঁটে ভালোবাসা’ ও ‘প্রিয়মুখ’ নামের তিনটি কাব্যগ্রন্থ রয়েছে আমার। এখন লেখালেখির জন্য আগের মতো সময় করতে পারি না।

প্রশ্ন: রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। শিল্পীজীবনে রাজনীতির প্রভাব কতখানি?

বেবী নাজনীন: অনেক প্রভাব পড়ে। রাজনীতির মতো বাংলাদেশের সংস্কৃতিও যেন দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। আমরা যাঁরা বিএনপির সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশে একটু কোণঠাসা অবস্থায় আছি। তা ছাড়া দেশে আগের মতো অনুষ্ঠানের আয়োজন হচ্ছে না। আমি চাকরি বা ব্যবসা করি না। তাই জীবিকার তাগিদেই অনুষ্ঠান করতে বিদেশে থাকতে হয় বেশি।

প্রশ্ন: তার মানে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়াটাই আপনার জন্য কাল হয়েছে? 

বেবী নাজনীন: একদমই তা-ই। গণতান্ত্রিক দেশে রাজনীতি করাটা সবার স্বাধীনতা, আমিও তা–ই করেছি। অথচ এই রাজনীতি করার কারণে একের পর এক আমার কনসার্ট বাতিল হয়েছে। এমনকি টেলিভিশনের সরাসরি অনুষ্ঠান থেকেও অজ্ঞাত কারণে আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। রাজনীতির কারণে আমাকে কোণঠাসা করা হয়েছে। একজন জাতীয় শিল্পী হিসেবে আমি কিন্তু নানা সময়ে দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছি। গানের মাধ্যমে আমি আমার ইন্ডাস্ট্রিকে এনহেন্স করেছি। বিএনপির রাজনীতির কারণে অনেক বছর ধরে রাষ্ট্রীয়ভাবেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাকে ডাকা বন্ধ। কিছুই বলি না, মনে মনে কষ্ট পাওয়া ছাড়া কিছুই তো করার নেই।

প্রশ্ন: শিল্প-সংস্কৃতির বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনার মতামত কী?

বেবী নাজনীন: প্রযুক্তির কারণে বাজারজাতের ধারা হয়তো বদলেছে, কিন্তু সেভাবে উঠে আসতে পারছে না আগামী দিনের শিল্প ও সংস্কৃতি। সংস্কৃতিকে এখন পেশা হিসেবে নেওয়ার সাহসও করা যায় না। কারণ এই মাধ্যমে এখন নতুন বিনিয়োগ নেই, নেই সুযোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা। একটা-দুইটা গান বা সিঙ্গেল ট্র্যাকের মাধ্যমে নিজেদের চেষ্টায় কেউ কেউ হয়তো যুক্ত হচ্ছেন গানের বাজারে, কিন্তু এভাবে বেশি দূর যাওয়া যায় না। মেধা বিকাশের পরিপূর্ণ কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই। যাঁরা সংগীতে নিজের ভাগ্য গড়তে চান, তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি শঙ্কিত। এই ধারার পরিবর্তন হওয়া জরুরি।

শেয়ার করুন