২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৬:১৭:২৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


সেমিনারে আহমদ আল কবির
বাংলাদেশের গার্মেন্টসে ২৭ হাজার বিদেশি কাজ করছে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৭-২০২২
বাংলাদেশের গার্মেন্টসে ২৭  হাজার বিদেশি কাজ করছে সেমিনারে উপস্থিতির একাংশ/ছবি নিজস্ব


স্কিল লোক না থাকার কারণে বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরে প্রায় ২৭ হাজার বিদেশি লোক কাজ করছে এবং এদের বেতনও অনেক বেশি। আমাদের অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। আমাদের স্কিল লোক থাকলে এই বিদেশিদের প্রয়োজন হতো না। যে কারণে আমি কর্মবান্ধব শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। ১৯৭০ সালের ২৮ অক্টোবর জাতিজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার এক ভাষণে এই কর্মবান্ধব শিক্ষার কথা বা কারিগরি শিক্ষার কথা বলেছিলেন। তাঁর সেই কথাকে ধারণ করেই আমি কর্মবান্ধব শিক্ষার কার্যক্রম চালু করেছি। এ ছাড়া আমি চাই প্রতিটি জেলারই সংগঠন রয়েছেন এই প্রবাসে- তারা ইচ্ছা করলে তাদের জেলায় একটি করে কারিগরি কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। আমি তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবো। তবে আমলাতান্ত্রিক কিছু জটিলতা থাকতে পারে। সেটাও দূর করা যাবে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ আল কবির বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিক্ষা ও প্রবাসীদের ভ‚মিকা শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এই সব কথা বলেন।

বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যানারে গত ২ জুলাই অপরাহ্নে জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশিষ্ট শিল্পপতি জহিরুল ইসলামের সভাপতিত্ব করেন। সাংবাদিক আশরাফুল হাসান বুলবুল এবং ইফজাল চৌধুরীর প্রাণবন্ত চঞ্চালনায় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবির। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে নিযুক্ত কনসাল আয়শা হক, আমন্ত্রিত আলোচক ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি রাজ্যের মনমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এবং প্রোগ্রাম ডাইরেক্টর প্রফেসর ড. গোলাম এম মাতবর, সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারপারসন এস এম সেকিল চৌধুরী এবং ওয়াশিংটন ইউনির্ভাসিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চ্যান্সেলর ও চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিপ।

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রবীন প্রবাসী নাসির আলী খান পল, বিশিষ্ট রাজনীতিক এম এ সালাম, মোর্শেদ আলম, ড. প্রদীপ কর, সিলেট সদর থানা অ্যাসোসিয়েশন নিউইয়র্কের সভাপতি অধ্যাপিকা রানা ফেরদৌস চৌধুরী, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকার সভাপতি মাইনুল হক চৌধুরী হেলাল, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী সেফাজ, বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ, সংগঠন ও রাজনীতিক আব্দুর রহিম বাদশা, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক কর্মকর্তা ও রাজনীতিক দুলাল মিয়া এনাম, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ সোহাগ, বাংলাদেশ সোসাইটির কোষাধক্ষ্য ও মূলধারার রাজনীতিক মোহাম্মদ আলী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক ফরিদ আলম, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট শেখ জামাল হুসাইন, মঈনুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আহমদ আল কবির আরো বলেন, আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিতে এবং বাস্তবতা অনুধাবন করতে হবে। উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি কর্মবান্ধব শিক্ষা আজকে জরুরি হয়ে পড়েছে। যে কারণে শিক্ষায় ব্যবস্থায় আস্তে আস্তে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই তা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে ১৮ কোটি মানুষ। যার মধ্যে ২১ শতাংশ হচ্ছে ১৮ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। ২০ শতাংশ রয়েছে ১ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। আমাদের রয়েছে ইয়ং পপুলেশন। তা ছাড়া ২০৫০ সাল পর্যন্ত আমাদের জনশক্তি বাড়তে থাকবে। ২০৫৩ সালে গিয়ে এটা কমতে পারে। এখনো আমাদের দেশে প্রতি ২০ সেকেন্ডে ১ জন করে শিশুর জন্ম হচ্ছে। সুতরাং এই ইয়াং জেনারেশনকে আমাকে কাজে লাগাতে হবে। এই জনগণকে শক্তিতে পরিণত করতে হবে।

এটা করতে হলে আমাদের অবশ্যই কর্মবান্ধব শিক্ষার দিকে সজর দিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা চাই না বাংলাদেশ শুধু প্রবাসীদের রেমিট্যান্স এবং গার্মেন্টস সেক্টরের ওপর নির্ভরশীল হোক। আমাদের দেশে স্কিল লোক নেই বলেই ২৭ হাজার বিদেশি লোক কাজ করছে। তাদের বেতনও বেশি। আমাদের অর্থ চলে যাচ্ছে বিদেশে। আমাদের স্কিল লোক থাকলে বিদেশির প্রয়োজন ছিলো না। তিনি বলেন, আমরা আস্তে আস্তে এগোচ্ছি। যেমন আমরা ফার্মাসিউটিক্যাল ক্ষেত্রে সাফল্য পাচ্ছি। ১৮২টি দেশে আমরা ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য রফতানি করছি। আমরা এখন ৫০ বিলিয়ন ডলারের ক্লাবে। আমাদের যুবসমাজ মিরাকেল ঘটনার জন্ম দিয়েছে। ইউরোপের দেশগুলোতে আমাদের সাইকেল যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমি যখন নার্সিং শিক্ষা চালু করেছিলাম প্রথম দিকে কেউ আসতো না, সবাই এটাকে নিম্নমানের কাজ মনে করতো। এখন সেখানে ভর্তি হবার জন্য আমাদের কল করে। এখন ৮০০ লোক বের হচ্ছে, আগামীকে ২ হাজার লোক বের হবে। সীমান্তিকের মাধ্যমে আমরা শিক্ষক ট্রেনিং কলেজ এবং স্বাস্থ্যসেবায় কাজ করছি। আমরা দেশে বিভিন্ন স্থানে ক্লিনিক করছি। জোর দিচ্ছি শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে। সেই সাথে করছি গবেষণা। আমরা সিলেটে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল করেছি। সেখানে পিসিআর টেস্ট করা হয়। এবার পুরো প্যাথলজিক্যাল প্যাকেজ আনছি।

সরকারের টার্গেট রয়েছে আগামী ৫ বছরে ১০০টির মতো কারিগরি কলেজ করার। সে ক্ষেতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এগিয়ে আসতে পারে। আমি সব ধরনের সহযোগিতা করবো। তবে কিছু আমলাতান্ত্রিক সমস্যা রয়েছে। প্রতিটি স্কুলে কারিগরি শাখা করারও সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। আপনারা নার্সিং কলেজ করতে পারেন। তিনি বলেন, আপনাদের তিন বছর খরচ চালাতে হবে। চতুর্থ বছর থেকেই তার ভর্তুকি দিতে হবে না। তিন বছরে এই ভর্তুকির পরিমাণ হতে পারে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা। তিনি আরো বলেন, বন্যার জন্য জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন ৫০ লাখ ডলার সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর জন্য আমি খুশি তবে। আমি কর্মকর্তাদের অনুরোধ করবো এই অর্থ চাল-ডাল এবং তেলের পেছনে খরচ না করে বন্যা-উত্তর মেডিকেল সরঞ্জাম দিতে পারেন বা সিলেটের যে সব বাঁধ ভেঙে গিয়েছে সেগুলো মেরামতে সহযোগিতা করতে পারেন।


শেয়ার করুন