২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ১১:১২:০৫ পূর্বাহ্ন


গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি জ্বালানি সেক্টরে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৩-২০২২
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি জ্বালানি সেক্টরে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে গ্যাসের চুলা


জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অধীন পেট্রোবাংলা এবং গ্যাস কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির আবেদন করে গান শুনানি সম্প্রতি শেষ হলো। ইচ্ছা ছিল এবং BERC চেয়ারম্যান আশ্বাস দিয়েছিলেন শুনানিতে অংশগ্রহণের সুযোগ দিবেন। বাংলাদেশের জ্বালানি সেক্টরে তিন দশক তৃণমূলে কাজ করার অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার পত্রিকার কন্ট্রিবিউটিং এডিটর হিসেবে এতদবিষয়ে কিছু মূল্যবান বিশ্লেষণ করার যোগ্যতা আছে বলে হয়তো কন্ট্রিবিউট করার সুযোগ ছিল। জানি না কেন আমাকে সুযোগ দেয়া হলো না। 

আমি মনে করি, বর্তমান সময়ে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি জ্বালানি সেক্টরে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে। শিল্প-বাণিজ্য সেক্টর বিপুলভাবে তিগ্রস্ত হবে, ট্রান্সপোর্ট সেক্টর তিগ্রস্ত হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজার মূল্য আরো বৃদ্ধি পাবে। জনজীবনের অস্থিরতা আরো বৃদ্ধি পাবে।

জানি, করোনা এবং ইউক্রেন যুদ্ধ  বিশ্বজ্বালানি বাজার অস্থির করে ফেলেছে। ক্রুড অয়েল মূল্য আকাশছোঁয়া হয়ে পড়ায় কয়লা, গ্যাস/এলএনজির মূল্য ক্রমাগত সংকটের জাল বিস্তার করছে। বাংলাদেশ তরল জ্বালানি, এলপিজি, এলএনজি বিশ্ববাজার থেকে পুরোটা আমদানি করে। ভুল পরিকল্পনা, ভ্রান্ত বাস্তবায়ন কৌশল আর দুর্নীতির কারণে নিজেদের জ্বালানি সম্পদ উন্নয়ন আর ব্যবহার প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্ত অপ্রতুল। এমতাবস্থায় জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধির বিকল্প হলো সরকারের আমদানি শুল্ক, ভ্যাট পুনর্বিন্যাস, গ্যাস চুরি, অবৈধ ব্যবহারের রাশ টেনে ধরা এবং প্রযোজ্য েেত্র ভর্তুকি বাড়ানো।

নির্ভরযোগ্য সূত্রের বিশ্লেষণে জানা গাছে, গ্যাস বিতরণ সিস্টেমে দৈনিক ২৫০-৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চুরি হয়, অদ ব্যবহারের জন্য নষ্ট হয় আরো ১৫০ ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এগুলো নিয়ন্ত্রণের সুযোগ সরকারের হাতে আছে। ৫০ শতাংশ করা গেলেও এই মুহূর্তে অস্থির বিশ্ববাজার থেকে এলএনজি আমদানি সর্বনিম্ন পর্যায়ে কমিয়ে আনা যায় আর তাহলে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি অন্তত ৬ মাস পিছিয়ে দেয়া যাবে। 

মনে রাখতে হবে, গ্যাস সেক্টরের গ্যাস পুকুর চুরি বর্তমান সরকারের আমলে সাগর চুরিতে পরিণত হয়েছে। সরকার ঘনিষ্ঠ সিন্ডিকেটে গ্যাস চুরির সঙ্গে সরাসরি জড়িত।  সুযোগ সন্ধানী অনভিজ্ঞ আমলাদের হাতে এনার্জি সেক্টর দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কার্যকর কিছুই করতে পারছে না। তিতাস গ্যাস, কর্তফুলী গ্যাস, বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানিসমূহের গ্যাস চুরি আর অবৈধ ব্যবহারের জন্য পেট্রোবাংলা অ্যান্ড জ্বালানি বিভাগ দায়িত্ব এড়াতে পারে না।

আমি গৃহস্থালি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি সমর্থন করবো। ১০ শতাংশ মানুষ সস্তায় গ্যাস ব্যবহার করবে আর ৯০ শতাংশ জনগণ বহুমূল্যের এলপিজি বা বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করবে সেটি সমর্থনযোগ্য নয়। গ্যাসের মূল্য এবং এলএনজি মূল্যে সমতা আনার যুক্তি আছে আর কেন এতোদিনেও সবাইকে প্রি-পেইড  মিটার দেয়া গেলো না তদন্ত করা যেতে পারে। এই সরকারের সময় শিল্প সেক্টরে নিয়ন্ত্রিত নতুন সংযোগ প্রদানের েেত্রও সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে। 

আমি BERC-এর অদতাকেও দায়ী করবো। প্রযুক্তির বিশ্বায়নের যুগে BERC এখনো সেকেলে। ডিজিটাল সংযোগ করার দতা নেই। ঢাল-তলোয়ার ছাড়া নিধিরাম সরদার। 

এগুলো নিয়ে আমি সহসাই বিস্তারিত লিখবো এবং বিদেশি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কথা বলবো।


শেয়ার করুন