২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৩:১৯:০৩ পূর্বাহ্ন


ঢাকা ও ঝিনাইদহে নূরে আলম সিদ্দিকীর জানাজা ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শ্রদ্ধা জ্ঞাপন
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৩-২০২৩
ঢাকা ও ঝিনাইদহে নূরে আলম সিদ্দিকীর জানাজা ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শ্রদ্ধা জ্ঞাপন


নূরে আলম সিদ্দিকীকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাজনীতিবিদসহ নানা শ্রেনী-পেশার মানুষজন। সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানিয়ে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

বিকালে গুলশানে আজাদ মসজিদে মরহুমের দ্বিতীয় নামাজে জানাজার পর তাকে পুলিশের একটি সুজ্জিত দল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক নূরে আলম সিদ্দিকীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময়ে বিউগলে করুন সূর বেজে উঠেছে।

ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাকীন মাসরুর খান গার্ড অব অনারের নেতৃত্বে দেন। পরে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা ডাকসুর ওই সময়ের ভিপি আসম আবদুর রব মরহুমের কফিনে পুস্পস্তবক অর্পন করেন।

আসম আবদুর রব তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বলেন, ‘‘ স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা অসীম বাগ্মী ছিলেন। ষাটের দশকে তিনি তার এই বাগ্মী ভাষায় জাতিকে উজ্জীবিত করেছিলেন। এদেশ যতদিন থাকবে নূরে আলম সিদ্দিকী জাতির দেহের মধ্যে গথিত থাকবে। তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।”

তিনি বলেন, ‘‘ গণতন্ত্রের প্রতি তার অসীম বিশ্বাস ছিলো। ১৯৭২ সালে যে তিন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম নেতা ছিলেন নূরে আলম সিদ্দিকী। পেশাজীবীদের মধ্যে ছিলেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এবং আর্মড ফোর্সে মধ্যে ছিলেন জেনারেল এমএজি ওসমানি। আজকে তারা দুইজন নাই। আামি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি তাকে যেন আল্লাহ তালা বেহেস্তে নসিব করেন।”

মরহুমের কফিনে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, জেএসডির পক্ষে আসম আবদুর রব, শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন মরহুমের কফিনের পুস্পস্তবক অর্পন করেন।

এর আগে গুলশানে তার কফিন নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স আসলে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার জানাজায় অংশ নিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন পেশা ও শ্রেনীর মানুষজন উপস্থিত হন।

নূরে আলম চৌধুরী গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদ(আজাদ মসজিদ) ও ঈদগাহ সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। সাবেক ছাত্র নেতা নুরুল ফজল বুলবুল বলেন, ‘‘ মসজিদের ১ এপ্রিল একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। এটা নিয়ে তিনি ব্যস্ত ছিলেন।এরমধ্যে তিনি মারা গেলেন। মরহুমের স্মরণে ১ তারিখ এই মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।”

সাবেক ছাত্র নেতা ইসমত আরা গামাও হুইল চেয়ারে করে এই জানাজায় অংশ নেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘নূরে আলম সিদ্দিকীর সাথে দীর্ঘ যুগের সম্পর্ক। স্বাধীনতার পরে উনি প্রেসিডেন্ট আমি সেক্রেটারি হলাম। রাজনীতির সময়ে নূরে আলম সিদ্দিকী, রব ভাই, মাখন ভাই আমরা সারা বাংলাদেশে একসাথে ঘুরেছি। তারপরে পার্টিতে ডিভিশন হয়ে গেলো।  নূরে আলম সিদ্দিকী অসাধারণ বক্তৃতা দিতে পারতেন। তাকে বক্তৃতা যাদুকর বলা হতো। নূরে আলম সিদ্দিকী বাকশালের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিয়েছে। তখন সংসদ স্পিকার তাকে বলেছিলেন, আপনি থামেন। তিনি  আজকে তার মৃত্যুতে আমি ও জাতি একজন দেশপ্রেমিককে হারালো।”

জানাজার আগে মরহুমের দুই ছেলে তানজীব আলম সিদ্দিকী ও তাহজীব আলম সিদ্দিকী মুসল্লিদের কাছে তাদের বাবার জন্য দোয়া চান। 

তারা বলেন, ‘‘ আব্বু আমি যদি একটা মানুষ হিসেবে বাংলাদেশে পরিচিতি পেতে চাই আমাকে মনে রাখুক যে, নূরে আলম সিদ্দিকী ভয় এবং লোভের কারণে কোনোদিন সত্য বলতে বিরত থাকেনি। আমার বাবা আপোষহীন ছিলো। আমার আব্বা যেটা বিশ্বাস করতেন সেইটাই করতেন। আমার বাবাকে যখন আমি বলতাম, আমার বাবা বলে আমি আপোষ করতে শিখিনি। আপনারা বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ এখানে এসেছে। আপনাদের বলব, আপনারা ওই নূরে আলম সিদ্দিকীকে মনে রাখবেন যিনি আপোষ করেনি, যিনি সর্ব অবস্থায় সত্য কথা বলতেন, যিনি আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করেননি। উনি গর্ব করে বলতেন আমি মসুলমান, আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করবো না। আপনারা বাবার জন্য দোয়া করবেন।”

মাগরিবের নামাজের পর তার কফিন দাফনের জন্য সাভারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

সকালে হেলিপ্টারে মরহুমের কফির ঝিনাইদহে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জানাজা ও সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আবার ঢাকায় আনা হয়।

ভোরে গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিতসাধীন অবস্থায় মারা যান নূরে আলম সিদ্দিকী। মৃতুকালে তার বয়স হয়েছিলো  ৮৩ বছর।


শেয়ার করুন