২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৯:১৬:৪১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


উদ্ধোধন অনুষ্ঠানাদিতে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু এলাকায়
অপেক্ষা পর্ব শেষ, উম্মুক্ত হওয়ার মহেন্দ্রক্ষনে পদ্মা সেতু
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৬-২০২২
অপেক্ষা পর্ব শেষ, উম্মুক্ত হওয়ার মহেন্দ্রক্ষনে পদ্মা সেতু


স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্ধোধনের সেই মহেন্দক্ষন সমাগত। কিছুক্ষনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ পদ্মা সেতু যানবাহনের চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দিবেন। যানবাহন চলাচলের জন্য বহুল আলোচিত  গর্বের ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু উন্মুক্ত করবেন যা রাজধানী ঢাকা এ অঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ২১টি জেলার সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক অগ্রগতি বয়ে আনবে। 

সেতুটির জমকালো উদ্বোধন উপলক্ষে বিশেষ করে যোগাযোগের সরাসরি সুবিধা লাভ করবে এমন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোসহ সারাদেশে একটি উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সকাল ১১ টায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পয়েন্টের কাঠালবাড়ীতে আয়োজিত এক সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এবং সেখানে অপেক্ষমান লাখো লোকের সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। 

দেশের বৃহত্তম নিজ অর্থায়নকৃত মেগা প্রকল্পের জমকালো উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির সময়সূচী অনুযায়ী মাওয়া পয়েন্টে সকাল ১১টায় তিনি স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শীট, উদ্বোধনী খাম এবং বিশেষ সিলমোহর উন্মোচন করবেন। এর মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে ১.২ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত জিডিপি বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

এর আগে তিনি হেলিকপ্টারযোগে সকাল ৯ টা ৩০ মিনিটে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মাওয়া পয়েন্টে কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। 

সকাল ১১টা ১২ মিনিটে মাওয়া পয়েন্টে টোল পরিশোধের পর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সেখানে মোনাজাতেও যোগ দেবেন।

তিনি সকাল ১১টা ২৩ মিনিটে মাওয়া পয়েন্ট থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন।প্রধানমন্ত্রী সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে জাজিরা পয়েন্টে পৌঁছে সেতু ও ম্যুরাল-২ এর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। সেখানে মোনাজাতেও যোগ দেবেন তিনি। দুপুর ১২টায় মাদারীপুর  জেলার শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত দলের জনসভায় যোগ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বিকেল সাড়ে ৫টায় হেলিকপ্টারে জাজিরা পয়েন্ট থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সেতুর নির্মান কাজে ৩৭ এবং ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানোর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর অংশ দৃশ্যমান হয়। পরে একের পর এক ৪২টি পিলারের ওপর বসানো হয় ৪১টি স্প্যান। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর শেষ ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মাধ্যমে বহুমুখী ৬.১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর সম্পূর্ণ কাঠামো দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, মূল সেতু নির্মাণের কাজটি করেছে চীনের ঠিকাদার কোম্পানি চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) এবং নদী শাসন করেছে চীনের সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন। মোট ৩০, ১৯৩৩.৭ কোটি টাকা ব্যয়ে স্ব-অর্থায়নে সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে।


উদ্ধোধন শেষে বিশাল জনসভায় ভাষন দেবেন প্রধানমন্ত্রী,কাঠালবাড়ীতে তৈরীকৃত জনসভাস্থলে মঞ্চ /ছবি সংগৃহীত 


শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয় ২০১৭ সালের ৭ অক্টোবর। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর শরীয়তপুর জেলার জাজিরা পয়েন্টে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী নদী প্রশিক্ষণের কাজ এবং পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।   ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ১৯৯৭ সালে তিনি জাপান সফর করেন। তিনি পদ্মা ও রূপসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করেন। জাপান সরকার দুটি নদীর ওপর সেতু নির্মাণে সম্মত হয়। যেহেতু পদ্মা নদী একটি শক্তিশালী নদী যার প্রবল স্রোত, জাপান পদ্মা নদী জরিপ শুরু করে এবং তারা তার অনুরোধে রূপসা নদীতে নির্মাণ কাজ শুরু করে।

জাপান ২০০১ সালে পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণের সমীক্ষা প্রতিবেদন বাংলাদেশের কাছে জমা দেয়। জাপানি জরিপে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পয়েন্টকে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্থান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।  জরিপের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী ২০০১ সালের ৪ জুলাই মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। দায়িত্ব গ্রহণের ২২ তম দিনে, নিউজিল্যান্ড ভিত্তিক পরামর্শদাতা সংস্থা মনসেল আইকমকে পদ্মা সেতুর সম্পূর্ণ নকশা প্রস্তুত করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেতু প্রকল্পে শুরুতে রেলের সুবিধা ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রেলওয়ের সুবিধা রেখে সেতুর চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ন করা হয়।

ডিজাইনটি ২০১০ সালের মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়। পরের বছর জানুয়ারিতে, ডিপিপি সংশোধন করা হয়। সংশোধনের কারণে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫ শ’ ৭ কোটি টাকা। খরচ বাড়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ ছিল। শুরুতে মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ছিল ৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার যা পরবর্তীতে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারে উন্নীত হয়।

প্রথম ডিপিপিতে, সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে তিনটির নিচে নৌযান চলাচলের জন্য জায়গা রেখে নকশা তৈরি করা হয়েছিল। পরে, ডিপিপি সংশোধন করার মাধ্যমে ৩৭টি স্প্যানের নীচে জাহাজ চলাচলের সুযোগ রাখা হয়।

সংশোধিত ডিপিপিতে অনেক ওজন বহন করার ক্ষমতাসম্পন্ন রেল সংযোগ যুক্ত করা হয়েছে। কংক্রিটের পরিবর্তে ইস্পাত বা স্টিলের অবকাঠামো যুক্ত করা হয়। সেতু নির্মাণের পাইলিং কাজের জন্যও অনেক গভীরে কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের পুনর্বাসনের খরচও বেড়েছে (জমি অধিগ্রহণের কারণে)।

২০১৬ সালে খরচ বাড়ানো হলে মূল সেতু নির্মাণ ও নদী শাসনসহ সব কাজে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এদিকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৯ টাকা। নতুন করে যুক্ত হয়েছে ১.৩ কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ। মূল সেতু নির্মাণ, নদী শাসন ও অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগে যে ব্যয় ধরা হয়েছিল তা প্রায় ৮ হাজার  কোটি টাকা বেড়েছে। এছাড়া জমি অধিগ্রহণে খরচ বেড়েছে ও ফেরি ঘাট স্থানান্তরের জন্য খরচের প্রয়োজন হয় এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনা মোতায়েন করা হয়।

পদ্মা বহুমুখী সেতু ব্যবহারের জন্য এরই মধ্যে টোল ঘোষণা করেছে সরকার। গত ১৭ মে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সেতু বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু পার হতে একটি মোটরসাইকেল ১০০ টাকা, একটি গাড়ি ও একটি জীপ ৭৫০ টাকা। টোল চার্ট অনুযায়ী, একটি পিকআপের জন্য ১,২০০ টাকা, একটি মাইক্রোবাসের জন্য ১,৩০০ টাকা, একটি ছোট বাসের জন্য (৩১-সিটের জন্য ১,৪০০ টাকা), একটি মাঝারি আকারের বাসের জন্য ২,০০০ টাকা (৩২ আসনের  বেশি) এবং একটি বড় বাসের জন্য (তিন-অ্যাক্সেল) ২,৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া ছোট ট্রাকের (৫ টন পর্যন্ত) জন্য ১,৬০০ টাকা, একটি মাঝারি ট্রাকের (৫-৮ টন) জন্য ২,১০০ টাকা এবং ৮-১১ টন ওজনের একটি ট্রাকের জন্য ২,৮০০ টাকা, একটি ট্রাকের (থ্রি-অ্যাক্সেল) জন্য ৫,৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং একটি ট্রেলারের (চার-অ্যাক্সেল) জন্য ৬,০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয় যে চার-অ্যাক্সেল ট্রেলারের উপরে প্রতিটি এক্সেলের জন্য ৬,০০০ টাকার সঙ্গে অতিরিক্ত ১,০০০ টাকা যোগ করা হবে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে বুধবার দুপুর ১২টা থেকে ২৬ জুন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি ও কাঁঠালবাড়ি রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে বলে বুধবার একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকার। পাশাপাশি, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, পোস্তগোলা ব্রিজ এবং রাজধানী ঢাকা ও পটুয়াখালী শহরের মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক এন-৮এই সময়ে বন্ধ থাকবে। তথ্য সুত্র বাসস 


শেয়ার করুন