২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৪:৪০:৩১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


বিএনপির তুমুল ভারত বিরোধী প্রচারণা চায় আ.লীগ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৩-২০২৪
বিএনপির তুমুল ভারত বিরোধী প্রচারণা চায় আ.লীগ


আওয়ামী লীগ চায় বিএনপি তুমুল ভারত বিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাক। দলটি মনে করে এতে করে বিএনপি’কে একটি ভিন্ন ইস্যু দিয়ে ব্যস্ত রাখা যাবে। অন্য দিকে দেশের ভেতরে বিএনপি’কে প্রচন্ড একটি ‘ভারত বিরোধী’ মৌলবাদি শক্তি বলে প্রচার করার মোক্ষম সুযোগ পাবে আওয়ামী লীগ। আবার বিপরীত দিকে ভারতকেও চাপে রাখা যাবে এই বলে যে দেশের ভেতরে ভারত বিরোধী শক্তি বিএনপি’র নেতৃত্ব আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এতে করে ভারত আওয়ামী লীগের ব্যাপারেই সন্তুষ্ঠ থাকবে। অন্যদিকে যেকোনো ইস্যুতে দরকষাকষিরও সুযোগ পাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এমনটাই মনে করে রাজনৈতিক ও কুটনৈতিক বিশ্লেষকরা।

নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারসহ বেশ কিছু দাবিতে এক দফা আন্দোলন করে যাচ্ছিল বিএনপিসহ সমমনা প্রায় অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দল। ৭ জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করে ফেলার পরও এই একদফা নিয়েই এগুতে অনড় রয়েছে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। একদফার আন্দোলনকেই বেগবান করতে চায় দলটি-এমনটাই সর্বত্র শোনা যায়। আর এলক্ষ্যে দলটির সার্বিক কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছিল। এমন খবর মিলেছিল রাজনৈতিক মাঠে। কিন্তু চলতি মাসে এই ইস্যুকে পাশ কেটে বিএনপি হঠ্যাৎ শুরু করে দিয়েছে তারা এখন ভারতীয় পণ্য বয়কট আন্দোলন করবে। এমনকি ভারতীয় পণ্য বর্জনে সংহতি প্রকাশ করে নিজের গায়ের চাদর রাস্তাায় ছুড়ে ফেলে দেন বিএনপি’র একজন নেতা।

কি কারনে ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলন?


প্রশ্ন হচ্ছে কি কারণে বিএনপি এক দফা আন্দোলনকে সাইডে রেখে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিচ্ছে? জানা গেছে বিএনপি মনে করে থাকে ভারতের কথায় বা বিভিন্ন ধরণের রাজনৈতিক ও কুটনৈতিক পদক্ষেপে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রশ্ন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পরিবর্তন ঘটে যায়। বিশেষ করে গতবছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে নিজেদের ভাবনা যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিয়েছিল ভারত। বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বেরোয় যে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে আলোচনায় প্রত্যাশিতভাবে উঠেছিল ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অথ্যাৎ বাংলাদেশের প্রসঙ্গ। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে ওই বৈঠকে অংশ নেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।


খবর বেরোয় বৈঠকে প্রতিবেশী বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের চিন্তাভাবনার কথা যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।  এর পর দেখা গেলো সেই ধারণার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের অমিলের বিষয়টি আরও একবার স্পষ্ট হয়ে ওঠলেওে শেষমেষ বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আৗয়ামী লীগ প্রশ্নে দিল্লীর জয়ী হয়।  কেননা দুই দেশের নেতাদের মধ্যে বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গের অবতারণার কথা সাংবাদিকদের পরিস্কার জানান ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলে দেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি ভারত শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশের নির্বাচন দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়। অর এরপর থেকে বিএনপিসহ তাদের সমমনারা বদ্ধমূল হয় যে ভারতের সমর্থনে আওয়ামী লীগ ক্ষমমতায় আবার এসেছে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয় যে,ভারতের সহযোগিতায় নির্বাচনের নামে আওয়ামী লীগ তামাশা করেছে। তা-ই আগে ভারতের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে। আর তারই অংশ হিসাবে শুরু হয়েছে ভারতীয় পণ্য বয়কট আন্দোলন।

সংহতি ১২ দলীয় জোটের

এদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ভারতীয় পণ্য বর্জনে যে সংহতি জানিয়েছিলেন তার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহŸান জানিয়েছে ১২ দলীয় জোট।‘ভারতীয় আগ্রাসন ও ভারতীয় পণ্য বর্জন’ আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা। তারা রিজভী আহমেদ ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের হাতে ভারতীয় পণ্য বর্জনের টি শার্ট তুলে দেন।

কে কি বললেন

ভারতের সহযোগিতায় নির্বাচনের নামে আওয়ামী লীগ তামাশা করেছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বিষয়টি বুঝতে পেরে বাংলাদেশের জনগণ ভারতীয় পণ্য বর্জন করে প্রতিবাদ জানাচ্ছের তিনি। এই ভারতীয় পণ্য বর্জনকে বিএনপিও যৌক্তিক মনে করে তিনি এ সময় ভারতীয় পণ্য বর্জনে সংহতি প্রকাশ করে নিজের গায়ের চাদর রাস্তাায় ছুড়ে ফেলে দেন। এছাড়া নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি ৬৩টি দলের ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেন তিনি। এরপর থেকে একে একে আরো বিএনপি’র নেতা মুখ খুলেন। সর্বশেষ মুখ খুলেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি অবশ্য ভারতীয় পন্য বর্জনের ডাক দেননি। তবে ভারতের আনুগত্য নিয়ে সরকার দেশ চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, আজ একটি রাষ্ট্রের প্রতি নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বর্তমান শাসক দলের অভ্যাস। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যখন বিপদে পড়েন তখন বলেন, ‘দিল্লি আছে, আমরা আছি’। দিল্লি থাকলে এই সরকার আছে।

পাল্টা বক্তব্য..
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভারতীয় পণ্য বয়কটের নামে বিএনপি দেশের বাজার ব্যবস্থাকে অস্থির করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। জনগণ তাদের ডাকে সাড়া দেবে না।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করার দুরভিসন্ধি বিএনপির মানসিক বৈকল্যেরই বহিঃপ্রকাশ। বলেছেন,যারা ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে, দেশের জনগণ তাদেরই বয়কট করবে। অন্যদিকে ১৪ দলের শরিক দলটি পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। ভারতীয় পণ্য বর্জনের প্রচারণাকে পাকিস্তান আমলে বস্তাপচা নোংরা রাজনীতির সঙ্গে তুলনা করছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। দলটি বলছে, বয়কট ইন্ডিয়া, ভারতীয় পণ্য বর্জনের রাজনীতি নতুন কিছু না। ১৯৪৭ সাল থেকে রাজনৈতিক মোল­াতন্ত্র ও তাদের পৃষ্ঠপোষক সামরিক শাসকেরা ‘ইসলাম বিপদে আছে’ এবং ‘ভারত দ্বারা পাকিস্তানের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপদগ্রস্থ ও বিপন্ন হচ্ছে’ বলে ভারতীয় জুজুর যে ভয় দেখিয়েছিল, সেই বস্তাপচা রাজনীতিই আবার নতুন করে আমদানি করা হচ্ছে মাত্র। অন্যদিকে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো এক বিবৃতিতে বিএনপি ও তার সহযোগীদের তথাকথিত ‘বয়কট ইন্ডিয়া’ ও ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলনের ব্যাপারে তীব্র ক্ষোভ, ঘৃণা ও নিন্দা প্রকাশ করেছে।



রাজনৈতিক ও কুটনৈতিক ব্লিশ্লেষনে কি বলে?

বিএনপি তাদের এক দফা আন্দোলনকে সাইডে রেখে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক নিয়ে দেশের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি কুটনীতিকদের সাথে কথা হয় এই দেশ প্রতিনিধির। তাদের মতে,বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের নেতারা মনে করেন বিএনপি এক দফাকে সাইডে রেখে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দেয়াতে আওয়ামী লীগের লাভ। কারণ আওয়ামী লীগরে বেশ কয়েকটি প্রতিনিধি দল এতো দিন ধরে ভারতের কানভারী করে আসছিল যে বিএনপি একটি মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সর্বোপরি ভারত বিরোধী শক্তি । দলটি একাত্তরের ঘাতক জামায়াতে ইসলামীর মতো দলের সাথে আতাত করে ভারত বিরোধীতা করছে বলে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকটি প্রতিনিধি জানিয়ে আসছিল। তারা এনিয়ে বিভিন্ন ধরণের তথ্য চিত্র তুলে ধরে ভারতের কাছে রাজনৈতিক ও কুটনৈতিক পর্যায়ে।


আর এখন বিএনপি বিএনপি এক দফাকে সাইডে রেখে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাকের মাধ্য আওয়ামী একটি মোক্ষম সুযোগ হাতে পেয়ে গেলো। তারা ভারতকে বোঝাতে সক্ষম হবে যে, বিএনপি আসলেই একটি ভারত বিরোধী দল। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে পাকিস্তানী স্টাইলেই সর্ম্পক রাখতে চায়। আর  একারণেই বিএনপি পাকিস্তানি কায়দায় ভারত বিরোধিতা শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেও ফেলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন এভাবেই ভারতের ধারণা হবে আওয়ামী লীগই তাদের আসল মিত্র। অন্যদিকে বিএনপি’র পক্ষ থেকে এমন ভারত বিরোধী আন্দোলনে পুরো ক্যাশ করে নেবে আওয়ামী লীগ। ভারতকে কৌশলে চাপে রাখা যাবে এই বলে যে মাঠে ভারত বিরোধী প্রধান বিরোধী দল এখন সক্রিয়।


তা-ই আগের বারের মতো যা খুশি তা আদায় করে নেয় যাবে না ভারতের পক্ষে। এতে করে মাঠের প্রধান বিরোধী দলের চাপে বা এই ধরণের আন্দোলনে ভারতরে সাথে সব ধরণের দরকষাকষি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সুবিধা পাবে । আর অন্যদিকে বিএনপি’রে বিরুদ্ধে একটি ভারত বিরোধী শক্তি হিষাবে দূর্নাম ছড়িয়ে দিতে ভারতও দ্বিগুন উৎসাহে আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে ক্জা করে যাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীেেগ পক্ষে। কেননা আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে বিএনপি’র সাধারণ গোছের নেতাকর্মী আছে যারা দক্ষ কুটনীতিকেদের পর্যায়েই পড়ে যায়। বিপরীতে আওয়ামী লীগের রয়েছে বিদেশের মাটিতে উচ্চ শিক্ষিত একগুচ্ছ স্মার্ট তরুন, ব্যবসায়ী ও সিনিয়র কুটনীতিক যারা খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশকে একটি মৌলবাদ বিরোধী শক্ত ইমেজ তুলে ধরায় নিয়োজিত। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পাশে রয়েছে ভারতের মতো শক্ত আন্তর্জাতিক লবি। কিন্ত এর বিপরীতে বিদেশের মাটিতে বা আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে বিএনপি কিছু সস্তা সাটামাটা নেতা কমী আছে ,যারা খুব একটা পারঙ্গম হওয়ার সুযোগ নাই। আবার বলা হয়ে থাকে দেশের বাইরেও বিএনপি’র একটি বড়ো গ্রæপের সাথে বাংলাদেশের স্¦াধীনতা বিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি জামায়াত পন্থী নেতাকর্মীদের সখ্যতার সুযোগ নিয়ে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

মতভেদের সুযোগ নেবে আওয়ামী লীগ..

এদিকে ভারতীয় পন্য বর্জনের ডাকে খোদ বিএনপি’র নেতাদের মধ্যে যে মতভেদ আছে তা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও জানে। তাছাড়া এটাও ফৃুটে উঠেছে যে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিচ্ছে তাতে দলের দলের অনেকেরই সায় মিলছে না। এটকেও আওয়ামী লীগ এখন কাজে লাগাতে পারে। কেননা মাত্র আটদিন আগে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। তিনি বলেছেন, ‘বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের সহযোগিতায় আমরা দেশকে অল্প সময়ের মধ্যে স্বাধীন করতে পেরেছি। আজকে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারেও আমরা বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের সহযোগিতা কামনা করছি।’ আবার এর আগে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে একটি গণমাধ্যমে প্রশ্ন করা হয় যে  ঠিক এই ধরণের একটি প্রসঙ্গে। বলা হয় আপনি কারাগারে থাকা অবস্থায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনতে নির্বাচনে ভারত, চীন ও রাশিয়া ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। আপনিও কি একমত? এর জবাবে মির্জা ফখরুল সরাসরি কিছু না বলে বলেন, অনেক দিন আমি কারাগারের ভেতর ছিলাম। এখনও সবকিছু জানি না। এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে কথা বলব।


মার্কিন সমর্থন ও পন্য বর্জনের আন্দোলনে ফলাফল..

এদিকে প্রশ্ন হচ্ছে ভারতীয় পণ্য বর্জনের এমন আন্দোলনে কি সমর্থন মিলবে বিএনপি’র অন্যতম মিত্র শক্তি বলে পরিচিতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বা আর্ন্তজাতিক মহলের। দেখা যাক মার্কিনীরা কি বলেছে এপ্রসঙ্গে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত দৈনিক ব্রিফিং চলাকালে উপস্থিত সাংবাদিকদের একজন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারম্যাথিউ মিলারকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এ অঞ্চলে “ইন্ডিয়া আউট” প্রচারণা বৃহত্তর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?’  জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘এ প্রচারণার তথ্য সম্পর্কে আমরাও অবহিত। তবে আমি একক কোনো ভোক্তার


নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না, তিনি বাংলাদেশ বা বিশ্বের অন্য যেকোনো স্থানেরই হন না কেন।


কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার একথা জোড় দিয়ে সাফ জানিয়ে দেন য়ে তার দেশ ভারত ও বাংলাদেশ-উভয়ের সঙ্গেই সম্পর্ককে মূল্যায়ন করে। অবাধ, মুক্ত, নিরাপদ ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিশ্চিত করতে দুই দেশের সরকারের সঙ্গেই অভিন্ন স্বার্থ নিয়ে করবে। এমন ধরণের কৌশলী বক্তব্যের কারণে  বিএনপি’র ভারতীয় পন্য বর্জনের ডাক মার্কিনীদের কাছে কতটা সাড়া ফেলবে সেব্যাপারে সন্দিহান অনেকে। কেননা অনেক দক্ষ বিজ্ঞ কুটনীতিকরা মনে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এঅঞ্চলে তাদের আধিপত্য বা ভু-রাজনৈতিক কৌশল বা অবাধ, মুক্ত, নিরাপদ ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিশ্চিত করতে চাইলে ভারতের মতামতকেই প্রাধান্য দেবে-এটা নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে বিএনপি’র পন্য বর্জনের ডাকে আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে ভারত নেতিবাচকভাবে নিয়ে গেলে বিএনপি’র প্রতি মার্কিনীদের সমর্থনই বা কতটা স্থায়ী হবে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ।


আর এসব বিশ্লেষন করেই আওয়ামী রীগের একজন নেতা দেশ প্রতিনিধিকে তার অভিমত জানান। বলেন, বিএনপি’র ভারতীয় পন্য বর্জনের ডাক বা ভারত বিরোধী আন্দোলনের ফসল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘরেই যাবে। আর সেকারণে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ চায় বিএনপি ভারত বিরোধী প্রচারণা জোরে-সোড়েই চালিয়ে যাক। যদিও সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন একটি গণমাধ্যমে বলেছেন যে, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সা¤প্রতিক সম্পর্ককে প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে রোল মডেল বলা হচ্ছে। বলেছেন,গত ১৫ বছরে দুই দেশের সরকারের মধ্যে সম্পর্ক যে অসাধারণ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সম্পর্ক তো শুধু সরকারের মধ্যেই সীমিত নয়, জনগণের সঙ্গেও জড়িত। এই সময়কালে ভারতের স্বার্থ যতটা সুরক্ষিত হয়েছে, বাংলাদেশের বিষয়গুলো ততটা হয়নি।



শেয়ার করুন