২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৮:০০:৩৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিয়ন্ত্রণ পেট্রোবাংলার প্রধান চ্যালেঞ্জ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০২-২০২৪
আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিয়ন্ত্রণ পেট্রোবাংলার প্রধান চ্যালেঞ্জ পেট্রোবাংলার ভবন


২০০০-২০২৩ পর্যন্ত ধারাবাহিক আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমে বিশাল প্রভাব ফেলেছে। মূলত পেট্রোবাংলার কার্যক্রম তথা, দেশীয় জ্বালানি আহরণ অবজ্ঞা করে সুবিধাবাদী মহলের স্বার্থে জ্বালানি আমদানির ঝুঁকি নেওয়ায় বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পেট্রোবাংলার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো এখন আমলাদের দখলে। কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদগুলো একান্তই আমলানির্ভর। একেক সময় একেকজন আমলা পেট্রোবাংলায় এসে অনভিজ্ঞতার কারণে একেক ধরনের ব্যর্থ কার্যক্রম গ্রহণ করছে অথবা একেবারেই গতানুগতিক থেকে সময় পার করেছে। 

দেশে আবিষ্কৃত বিপুল পরিমাণ উন্নত জাতের কয়লাসম্পদ আহরণ এবং উন্নয়ন কাজের আদৌ কোনো অগ্রগতি হয়নি। জলে-স্থলে পেট্রোলিয়াম অনুসন্ধান হয়েছে সীমিত। দেশের একমাত্র পেট্রোলিয়াম অনুসন্ধান এবং উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত পেট্রোবাংলা কোম্পানি বাপেক্সকে কার্যকরভাবে দক্ষ না করে ভূমিতে অনুসন্ধানের একক দায়িত্ব দেওয়ায় বাংলাদেশের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। নানা অজুহাতে একযুগের বেশি সময় সাগরে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম ঝুলে রয়েছে। গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য সংগৃহীত গ্যাস উন্নয়ন ফান্ডের টাকা বাপেক্সের অনুসন্ধান কাজে একান্তভাবে বিনিয়োগের কথা থাকলেও সেটি নানা অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার করে নিঃশেষ করা হয়েছে। পেট্রোবাংলার বিভিন্ন কোম্পানিগুলোর জমানো টাকা তুলে তহবিল শূন্য করা হয়েছে। গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা না থাকা সত্ত্বেও ভ্রান্ত কৌশলে দেশব্যাপী গ্যাস সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণে বিপুল বিনিয়োগ করে জিটিসিএলের আর্থিক সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে বিতরণ কোম্পানিগুলোতে এক ধরনের দুর্নীতিপরায়ণ সিন্ডিকেট বিপুলসংখ্যক অবৈধ সংযোগ দিয়ে গ্যাস অপচয় করেছে। পুরো বিতরণ নেটওয়ার্ক অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। এগুলোর দায়দায়িত্ব অবশ্যই পেট্রোবাংলা এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের আমলাদের ওপর বর্তায়। 

এখন মহাসংকট আসন্ন দেখে টনক নড়েছে সরকার এবং পেট্রোবাংলার। এতোদিন অবজ্ঞার পর গ্যাস অনুসন্ধান এবং উন্নয়ন কার্যক্রমের তাগাদা পড়েছে। ২০২১-২৫ মেয়াদে নিজস্ব মেয়াদে ৪৮টি কূপ খননের পরিকল্পনা থাকলেও ২০২৩ হয়েছে মাত্র ৯টি। নতুন চেয়ারম্যান আসার পর তোড়জোড় লেগেছে। ২০২৫-এর মধ্যে বাদ বাকি ৩৯ কূপ খনন শেষ করার জন্য বাপেক্সের পাশাপাশি বাংলাদেশে কর্মরত তিনটি বিদেশি কোম্পানি গ্যাজপ্রম, সিনোপেক এবং অরিয়েলকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় স্বল্প সময়ে এতোগুলো কূপ খনন দুরূহ শুধু নয়, প্রায় অসম্ভব। খননের স্থান নির্ধারণ, জমি অধিগ্রহণ, উন্নয়ন, খনন সরঞ্জাম এবং উপকরণ আমদানি, সঠিক সময়ে তহবিল ছাড়করণের পর কাজের সময়েও নানা জটিলতা থাকে। তবুও দেরিতে হলেও পেট্রোবাংলা এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের নিন্দ্রা ভঙ্গের জন্য সুভাশিস জানাতে হয়। 

তবে ২০২৪-২০২৮ মেয়াদে নিজেদের উদ্যোগে ১০০ কূপ খননের পরিকল্পনাকে বাস্তব পরিস্থিতির নিরিখে স্বপ্ন বিলাস বলে মনে হয়। আমি পেট্রোবাংলার বিশেষজ্ঞদের দক্ষতাকে প্রশ্ন করছি না। কিন্তু অনুসন্ধান কূপ খননের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে পরিকল্পনাগুলো অবশ্যই কূপ খনন বিষয়ে প্রমাণিত আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে যাচাই করা উচিত। পেট্রোবাংলা এবং বাপেক্স এতো বিশাল কার্যক্রম নিরাপদভাবে পরিচালনার দক্ষতা অর্জন করনি। অনুসন্ধান কাজ অনেকটা জুয়া খেলার মতো ঝুঁকিপূর্ণ। সীমিত সম্পদ নিয়ে বাংলাদেশ এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে বিনিয়োগ করার সামর্থ্য রাখে না। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকায় তিনি এই বিষয়ে অতিশয় আশাবাদী মনে হচ্ছে। আমি ১০০ কূপ খনন বিষয়টি পজিটিভভাবে দেখতে চাই। কিন্তু বিষয়টি আরো বিশদভাবে যাচাই-বাছাইয়ের পর পিএসসি বিডিং রাউন্ডের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের মাধ্যমে করানোর পক্ষপাতী। একই ধরনের উদ্যোগ কিন্তু অতীতে ব্যর্থ হয়েছে। 

আমি পেট্রোবাংলার বর্তমান চেয়ারম্যানের সক্রিয়তাকে মোবারকবাদ জানাই। কিন্তু বিশেষত গ্যাস অনুসন্ধান বিষয়ে দেশের অতীত ইতিহাস, বর্তমান বাস্তবতা, সর্বোপরি পেট্রোবাংলা, বাপেক্সের দক্ষতার বিষয়টি স্মরণে রেখে এগোনোর অনুরোধ করছি। একই সঙ্গে পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিগুলোর পরিচালনায় যোগ্য, দক্ষ, অভিজ্ঞ কারিগরি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব প্রদান করার অনুরোধ করছি।

শেয়ার করুন