২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০২:৪৩:৫৫ পূর্বাহ্ন


গর্বের পদ্মা সেতুর উদ্ধোধন
আজি দখিন - দুয়ার খোলা...
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৬-২০২২
আজি দখিন - দুয়ার খোলা... প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুইস টিপে উদ্ধোধন ফলক উম্মোচন করেন গর্বের পদ্মা সেতুর/ছবি সংগৃহীত


বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাতে খুলে গেলো দক্ষিণের দুয়ার। সুবাতাস বইতে শুরু হয়ে গেছে। ২৫ জানুয়ারী ২০২২ দিনটি বাংলাদেশী জাতির জীবনে সোনার অক্ষরে খচিত দুর্লভ হীরকখন্ড হয়ে থাকবে। ২১ দক্ষিণ জেলার ৬ কোটি মানুষ সংযুক্ত হলো ঢাকা এবং সমগ্র দেশের সঙ্গে।

অনুভব করুন কাল ২৬ জুন থেকে ঢাকা -খুলনা, ঢাকা - বরিশাল, যাতায়াত কত নির্বিঘ্ন হবে। কলকাতা থেকে ঢাকা যাতায়াতে কোনো ফেরি পার হতে হবে না। আর হয়তো ২ বছর পর রেলপথেও টেকনাফ , তেঁতুলিয়া থেকে পায়রা যাতায়াত করা যাবে। মংলা, পায়রা সাগর সংযুক্ত নদী বন্দর, ভোমরা, বেনাপোল স্থল বন্দর সংযুক্ত হলো সরাসরি সড়ক যোগাযোগে- সারা দেশের সঙ্গে। বাঁচবে যাত্রা পথের বিড়ম্বনা, বাজবে অমূল্য শ্রম ঘন্টা।  দিনে দিনে ঢাকা থেকে বৃহত্তর বরিশাল,খুলনা, ফরিদপুর ঢাকা যোগাযোগ করা যাবে।

পণ্য পরিবহনে ঝামেলা থাকবে না। ঈদ পার্বনে দক্ষিণ বাংলার মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন হবে। বিদ্যুতের আলো পৌঁছে গেছে। ৩-৫ বছরের মধ্যে গ্যাস বিতরণ হবে দক্ষিণ বাংলার ঘরে ঘরে। আমি মনে করি ৫১ বছরের স্বাধীনতায় পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সেরা অর্জন। ১৭ কোটি জনগণ এবং বিশেষ করে দক্ষিণ বাংলার ৬ কোটি মানুষের স্বপ্ন পূরণের বলিষ্ট নেতৃত্ব দেয়ার জন্য জাতির জনকের কন্যাকে প্রাণ খোলা অভিনন্দন।

এখন থেকে সড়ক পথে ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান আর কবরস্থান পরিদর্শন অনায়াস লব্দ হলো। যদি আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখেন, গ্যাস শিখা প্রজ্বলনের সময় উপস্থিত থাকবো। যার অনুপ্রেরণায় ১৯৭১ তরুণ বয়সে যতটুকু পেরেছি মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছি। যতটুকু পেরেছি কৌঁসুলি হয়ে গ্যাস সেক্টরের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছি। দেশ বিদেশে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছি।  এখনো নীরবে নিভৃতে প্রবাসে থেকেও নিবেদিত থাকছি, বাংলাদেশের উন্নয়ন চিন্তায়।

দেশে আর প্রবাসে থাকা ১৭ কোটি বাংলাদেশিদের কাছে নিবেদন বাংলাদেশের গর্ব আর অহংকারের প্রতীক  পদ্মা সেতুকে নিজের ভাবুন, নিজেদের ভাবুন। বিধাতা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, কার হাতে সেতুর চাবি? ইতিহাস যাদের বরণ করে নেয় তাদের কেউ দূরে রাখতে পারে না। আজ মনে পড়ছে শ্রদ্ধেয় প্রয়াত ডক্টর জামিলুর  রেজা চৌধুরী  কথা। মৃত্যুর আগের দিনেও ডিজিটাললি সংযুক্ত হয়ে আমাদের সাথে কথা বলেছেন সেতুর বিষয়ে। খুঁটিনাটি জেনেছি স্যারের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে তাকওয়া মসজিদ থেকে রবীন্দ্র সরণি প্রতি ভ্রমণ কালে।


প্রয়াত ডক্টর জামিলুর  রেজা চৌধুরী পদ্মা সেতু নিয়ে কথা বলছেন ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে/ফাইল ছবি   


আজ অনেক ভালো লাগতো স্যার যদি উদ্ধোধনের এ মহেন্দ্রক্ষনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতেন। অভিনন্দন পরামর্শক প্যানেল প্রিয় শিক্ষক ডক্টর সামসুজ্জামান বসুনিয়া। ডক্টর আইনুন নিশাত , ডক্টর সফিউল্লাহ কেবিনেট সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ( মিলু ভাই)কে। সেতু বিভাগের সচিব থাকা কালে সমন্বয় করার জন্য। অভিনন্দন বুয়েট অনুজ প্রকল্প পরিচালক সহ ম্যাথ পর্যায়ে এবং দেশে বিদেশ থেকে সংযুক্ত সকল প্রকৌশলী, কর্মবীরদের। 

সর্বোপরি বাংলাদেশের সকল মানুষদের। 

সেতুটি নানা কারণে অন্যান্য যে কোনো সেতু থেকে ব্যাতিক্রম ধর্মী অতুলনীয়। শুধু ভারতের ভুপেন হাজারিকা সেতু কেন তুলনা হতে পারে না। এমনকি দুনিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ হংকং - ম্যাকাউ ( ৪১.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ) সেতুর সঙ্গেও। আমাজন অববাহিকার মিসিপি নদীতেই শুধুমাত্র পদ্মা যদি থেকে সামান্য বেশি জল প্রবাহ হয়ে থাকে। নদী তলদেশের এস্কয়ারিং, সেডিমেনটেশন হয়ে সবচেয়ে বেশি। আবার তাই এখানে বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তৃত নদী শাসন করতে হয়েছে। কিছু কিছু পাইল নদী তলদেশে দুবাই বুর্জ খলিয়ার থেকেও বেশি গভীরে গ্রোথিত হয়েছে। ৪৫০ বছরের ভূমিকম্প ডাটা বিবেচনায় নিয়ে ৯ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প সহনীয়। সেতুর জোন প্রতিটি ১০,০০০ টন প্রয়োজনীয় সংখক ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বেয়ারিং সংযুক্ত করা হয়েছে। সেতু এবং সংযোগ সড়কের ল্যাম্প পোস্ট গুলো ২২০ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত ঘূর্ণিঝড়ের দাঁড়িয়ে থাকবে।

সেতুটি দ্বিতল সেতু , উপরের তলায় সড়ক পথে চলবে যান বাহন, নিচের তলায় চলবে রেল গাড়ি। সেতুতে গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন, ফাইবার অপটিক্স ক্যাবল সংযোজিত আছে। সেতুর সমান্তরালে নদী বক্ষে আছে ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। দুই পাড়ে ঢাকা থেকে জাজিরা পর্যন্ত দেশে প্রথম এলেভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে।  সেতুতে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে বিপুল ক্ষতিপূরণ দেয়া ছাড়াও আন্তর্জাতিক মানের আবাসস্থল গড়ে দেয়া হয়েছে। যদি এর পরেও সেতুটির বিশেষত্ব নিয়ে কারো বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকে তাদের যে কোনো ধরনের জবাব দিতে প্রস্তুত আছি। 

সেতু ডিজাইন করেছে যুক্তরাষ্টের আইকম।  একই কোম্পানি জন এফ কেনেডি বিমান বন্দর, পার্ল হারবার মেমোরিয়াল সেতু, আবুধাবি বিমান বন্দর, সিডনি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, সিঙ্গাপুর মেরিন বে ডিজাইন করেছে। 

সেতুটিকে কেন্দ্র করে বিশাল  অর্থনীতিক করিডোর করার মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে। ব্যাপক শিল্পায়ন হবে, বন্দরগুলো অন্ত আঞ্চলিক বাণিজ্য প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। কুয়াকাটা , সুন্দরবন, ফরিদপুর , বরিশাল , খুলনা , যশোরে , কুষ্টিয়া অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটাবে। শুধু মনে রাখতে হবে, শিল্পায়ন এবং উন্নয়ন যেন জনসম্পৃক্ত হয়। পরিবেশ বান্ধব হয়।

ইতিমধ্যেই ২টি এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন, ১৭ টি বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা শুনেছি। পায়রায় বিদ্যুৎ জ্বালানি হাব বাস্তবায়নাধীন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহসাই ২০২৩ জুনের মধ্যে চালু হবে। ভোলার গ্যাস ক্ষেত্র সমূহ ২০২৬ নাগাদ জাতীয় গ্যাস গ্রীডে সংযুক্ত হবে। অচিরে গ্যাস প্রাপ্তির লক্ষ্যে শরীয়তপুরে খনন করবে বাপেক্স। 

 ঢাকা - ভাঙ্গা রেল যোগাযোগ অচিরেই প্রতিষ্ঠিত হবে। পরে পর্যায়ক্রমে রেল সংযোগ পৌঁছে যাবে যশোরে পর্যন্ত। অদূর ভবিষতে বরিশাল ,পটুয়াখালী রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এটি মধ্যেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিপুল বিনিয়োগের জন্য অভুত পূর্ব সাড়া পরে গেছে। আন্তর্জাতিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। 

অনুরোধ করবো - রাজনৌতিক বিভেদ ভুলে সবাই যেন সেতুটি নিয়ে গর্ব করে,আপন করে নেয়। কিছু মানুষের বিরোধিতা ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিল। আজ তারা কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। আসুন আমরা বিভেদ ভুলে দক্ষিণ অঞ্চলের উন্নয়নে ইস্পাত দৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলি।


শেয়ার করুন