২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৯:৫৯:৫৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ক্ষমতাসীনরা
বিএনপিকে মোকাবিলায় রাজপথে আওয়ামী লীগ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৮-২০২২
বিএনপিকে মোকাবিলায় রাজপথে আওয়ামী লীগ


আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপিসহ বিরোধীদলকে রাজপথেও শক্ত জবাব দিতে এবার মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের শরিকদেরও এধরনের কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। কারণ তারা বিএনপিসহ বিরোধীদলকে মোকাবিলায় একা দায়িত্ব নেবে না। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। দেশের রাজনীতির মাঠ ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এতে করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পাশাপাশি তাদের দলের ভেতরে বাইরে টেনশন ছাড়াও নেতাকর্মীদের মধ্যে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। সারা দেশে শীর্ষনেতারা এখন দলের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে যে দেশে আসলে কি হচ্ছে।

কি করছে সরকার ও তাদের বিভিন্ন থিংক টেঙ্ক। এসব খবর জানা গেছে, বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে একান্ত আলাপচারিতায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে দলের নেতাকর্মীরা আশ্বস্ত হতে চাইছেন যে প্রধানমন্ত্রী ও এর পাশাপাশি দলের সভানেত্রী সব ঠিক করে ফেলবেন। সভানেত্রীর হাত অনেক লম্বা। তাদের ধারণা অতীতেও এভাবে অনেক হাঁকডাক দিয়েও বিরোধীদল বিশেষ করে বিএনপির মতো পার্টি তেমন কিছু করতে পারেনি। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় নেতাকর্মীরা এখন তেমনভাবে আশ্বস্ত হতে পারছেন না। তাদের ধারণা এবার তাদের সরকার বড় ধরনের ধাক্কা সামলাতে হবে। এই ধাক্কা সামলাতে না পারলে তাদের কি পরিণতি সেব্যাপারেই নেতাকর্মীরা উদ্বিগ্ন। 

রাজপথই আসল পথ..

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে, এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ তার দলের নেতাকর্মীদের ঘরে বসে থেকে রাজনীতি করাতে ক্ষান্ত থাকবে না। এমন সময়ে আওয়ামী লীগের সুপ্রিম কমান্ড চায় দলটি হাটে-মাঠে-ঘাটে নড়ে চড়ে বসুক। সব কাজ প্রশাসন নিয়ে মোকাবিলার নীতিতে আর চলতে চাইছে না আওয়ামী লীগ। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে রাজনৈতিক ময়দানে নেমে বিরোধীদল বিশেষ করে বিএনপির মতো এবং আরো যারা বিরোধিতা করবে তাদের মোকাবিলা করা। আওয়ামী লীগের মতে, এটি তাদের সম্পূর্ণ রাজনৈতিক পদক্ষেপ। রাজনৈতিকভাবেই তারা বিরোধীদলকে মোকাবিলা করবে। যাবে জনগণের আরো কাছাকাছি। করা হবে দেশজুড়ে নানাধরনের গণসংযোগ কর্মসূচি। জেলা-উপজেলায় সভা-সমাবেশ। 

যে কারণে এমন সিদ্ধান্ত

জানা গেছে, রাজপথে বিএনপিসহ বিরোধীদলকে মোকাবিলার সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ এমনিতেই নেয়নি। দেশে বিদেশে নানাকারণের সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে বিরোধী মত ও দলকে মোকাবিলার। এমন চাপ যেমন আছে তেমনি আওয়ামী লীগ ও তার শরিকরা কেন রাজনৈতিক ময়দানে একেবারে চুপ তানিয়ে কথা উঠেছে। বলা হচ্ছে, পদ-পদবি ও বিভিন্ন পর্যায়ে ক্ষমতা পেয়ে আওয়ামী লীগেরনেতাকর্মীরা সাংগঠনিকভাবে রাজনৈতিক মাঠে তেমন কিছুই করছে না।  তাছাড়া নিজেদের মধ্যে দলাদলির পাশাপশি কেউ কেউ আকণ্ঠ দুর্নীতির সাগরে নিমজ্জিত।

এসব বিষয়ে শীর্ষ পর্যায় থেকে কঠোর হুঁশিয়ারির পরও দলের সাংগঠনির কর্মকাণ্ড একধরনের স্থবির হয়ে পড়েছে। আর এদিকে দিনের পর দিন মাঠে বিরোধীদল বিশেষ করে বিএনপি নানাধরনের কর্মসূচি দিয়ে আসছে, যা সরকারকে একধরনের ব্যতিব্যস্ত করে রাখছে। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে না, কিছুই করবে না এমনটা দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে মোটেও আশা করা হচ্ছে না।

আর এজন্যই মাঠে রাখতে চাওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। মোদ্দাকথা, আওয়ামী লীগ সরকার এখন তাদের  রাজনৈতিক দলটিকে মাঠে বিরোধীদলের হুমকি ধামকি মাঠে থেকেই মোকাবিলা করবে। এমন ধারণাই ফুটে উঠেছে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাদের বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য ও বিবৃতিতে। বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোর যে কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি রাজপথে মোকাবিলা করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদের আরো বলেছেন ‘আমরা রাজপথের পুরাতন খেলোয়াড়। বিএনপি তো এই পথে নতুন। আসুন, রাজপথে মোকাবিলা হবে, ফয়সালা হবে।’ তার এধরনের বক্তব্যে প্রচ্ছন্ন কঠোর বার্তাও ছিল। তিনি বিএনপিকেই মূলত উদ্দেশ্য করে বলেছেন। তিনি বলেছেন আগুন নিয়ে না খেলার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, আগুন নিয়ে খেলতে এলে পরিণাম হবে ভয়াবহ।

তবে কঠোর থাকবে প্রশাসন

এদিকে জানা গেছে, মাঠে আওয়ামী লীগকে নামিয়ে প্রশাসনকে বসিয়ে রাখা হবে না শুধু। এর পাশাপাশি মাঠকে শক্ত রাখতে বিএনপিসহ বিরোধীদলকে একধরনের চাপে রাখতে প্রশাসনও শক্ত থাকবে। তার নমুনা মিলেছে ভোলায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ, গুলিতে যুবদলের দু’জন নেতা নিহতের ঘটনায়। সারা দেশে লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে ভোলায় বিক্ষোভ মিছিলে বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আবদুর রহিম নামে একজন যুবদল নেতা নিহত হয়েছেন, পরে আরেকজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় থেকে মারা যান। আবার অন্যদিকে জ্বালানির দাম বাড়িয়েও হুঙ্কার দিয়েছে সরকার। সম্প্রতি বলা চলে আকস্মিকভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এতে দেখা গেছে, সরকার ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা, অকটেনের দাম লিটারে ৪৬ টাকা আর পেট্রলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়িয়েছে।

এহিসাবে এখন এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে ১১৪ টাকা লাগবে। এক লিটার অকটেনের জন্য দিতে হবে ১৩৫ টাকা। আর প্রতি লিটার পেট্রলের দাম হবে ১৩০ টাকা। সরকারের এমন পদক্ষেপে সর্বমহল থেকেই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। কিন্তু এমন ঘটনার প্রতিবাদে বেধড়ক পিটুনিরও শিকার হতে হয়েছে বিরোধীদের। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ৭ আগস্ট শাহবাগ মোড়ে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের সমাবেশে লাঠিপেটা করে পুলিশ। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর বিক্ষোভ সমাবেশে ব্যাপক লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। রোববার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে ছাত্রসংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

জানা গেছে,একজন ছাত্রনেতার বক্তব্য চলাকালে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে পুলিশ হঠাৎ সমাবেশের নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা শুরু করে। লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বিক্ষোভকারীদের জাতীয় জাদুঘর পর্যন্ত দিয়ে আসে পুলিশ। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ডাকা সমাবেশে লাঠিপেটার পর বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলাও করেছে পুলিশ। মামলায় বাম সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ‘বেআইনি জনতাবদ্ধে দাঙ্গার উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে লাঠিসোটা, ইটপাটকেলসহ পুলিশের কাজে বাধা দেয়াসহ হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে গুরুতর রক্তাক্ত ও হাড়ভাঙা জখমের’ অভিযোগও আনা হয়েছে। 

শেষকথা

আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। মাঠের একটি পাকা খেলোয়ায়। তারা শুধু প্রশাসনিকই না দলটি রাজনৈতিকভাবেও বিএনপির মতো একটি পার্টিকে নানাধরনের কৌশলে টানা ১৩ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে রেখেছে। এখন এই আওয়ামী লীগই মনে করে বিএনপিকে আগেরবারের মতো এবার ঠেকিয়ে রাখতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। আর এজন্যই পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন,রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুইভাবে বিরোধীদলকে মোকাবিলা করেই সাম্প্রতিক গুমোট সংকট থেকে সরকার মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করবে। সে কৌশল নিয়েই রাখা যাবে বিএনপিসহ বাকি বিরোধীদলগুলিকে-এমনটাই ধারণা তাদের। তবে এমন প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ কতটা সফল হবে তা সময় বলে দেবে।


শেয়ার করুন