০২ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৮:১০ অপরাহ্ন


টেক্সাসে মসজিদ সাইটে খ্রিস্টান প্রতীক এঁকে ভাঙচুর
মুসলিম সম্প্রদায়ে ক্ষোভ ও উদ্বেগ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৯-২০২৫
মুসলিম সম্প্রদায়ে ক্ষোভ ও উদ্বেগ ধর্মীয় গ্রাফিতি দিয়ে সাইনবোর্ড বিকৃত করার ঘটনায় তদন্তে নেমেছে ম্যাককিনি পুলিশ


টেক্সাসের ম্যাককিনি শহরে একটি নতুন মসজিদ নির্মাণের প্রচেষ্টার মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে ঘটে গেছে একটি আপত্তিকর ও ঘৃণামূলক ঘটনা। শহরের ভারর্জিনিয়া পার্কওয়ে এবং ক্রাচার ক্রসিংয়ের কোণে অবস্থিত ম্যাককিনি ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশনের ভবিষ্যৎ মসজিদ নির্মাণ সাইটে সম্প্রতি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। অজ্ঞাত ব্যক্তি মসজিদের সাইনবোর্ডে স্প্রে পেইন্ট দিয়ে বড় ক্রস ও ‘জেসাস ক্রাইস্ট’ শব্দ লিখে দেন। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে স্থানীয় চিকিৎসক ও ম্যাককিনি সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে অংশ নেওয়া তাহা আনসারির একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে। তিনি লেখেন, ম্যাককিনি ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশনকে লক্ষ্য করে এই ভাঙচুরের ঘটনা আমাদের ব্যথিত ও চিন্তিত করেছে। এটি ম্যাককিনির মূল্যবোধকে প্রতিনিধিত্ব করে না এবং এখানকার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ভালো মানুষদেরও নয়। তিনি আরো বলেন, ঘৃণার এখানে কোনো স্থান নেই, এখানে রয়েছে ভালোবাসা, ঐক্য এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার।

ম্যাককিনি পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, তারা ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের শিশুরা এবং প্রতিবেশীরা মিলে সেই ঘৃণার বার্তাগুলো মুছে দিয়ে লিখেছে, ‘মুসলিমরাও যিশুকে ভালোবাসে’ এবং ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ’। এছাড়াও অনেক স্থানীয় মানুষ নিজেদের ভালোবাসার বার্তা জানিয়ে সাইনবোর্ডে কাগজের হৃদয় চিহ্ন আটকে রেখেছে। একটির বার্তায় লেখা, আপনাদের প্রতি ভালোবাসা ও সমর্থন জানাচ্ছে ট্রিনিটি প্রেসবাইটেরিয়ান চার্চ। ম্যাককিনি শহরের মেয়র বিল কক্স এক বিবৃতিতে বলেন, বিভাজনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত কোনো কার্যকলাপ আমাদের শহরের বা জনগণের মানসিকতার প্রতিনিধিত্ব করে না। আমরা এমন একটি সম্প্রদায়, যেখানে সদয়তা ও পারস্পরিক সম্মানকে মূল্য দেওয়া হয়।

কেয়ার-টেক্সাসের নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফা ক্যারল এ ঘটনার বিষয়ে বলেন, এ ধরনের ঘটনা এখন খুব সাধারণ হয়ে গেছে। আমরা আরো খারাপ ঘটনাও দেখেছি, তাই তেমন অবাক হইনি। তবে এটি প্রমাণ করে অনেকেই এখনো মুসলিমদের বিশ্বাস সম্পর্কে অজ্ঞ। প্রসঙ্গত, ম্যাককিনি ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশন ২০২৪ সালে শহরের এক রেসিডেন্সিয়াল এলাকায় মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিন্তু জুলাই মাসে শহরের প্ল্যানিং অ্যান্ড জোনিং কমিশন তাদের রিজোনিং অনুরোধ নাকচ করে দেয়। স্থানীয় কিছু বাসিন্দা সভায় উপস্থিত হয়ে বলেন, একটি ধর্মীয় কেন্দ্র এই এলাকায় ট্রাফিক জ্যাম তৈরি করবে এবং এটি প্রধানত খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এলাকায় দৃষ্টিকটূ দেখাবে।

ম্যাককিনি ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সামাদ সায়েদ জানান, তারা এমন প্রতিক্রিয়ায় হতবাক হয়েছেন, কারণ এর আগে এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা সভা করা হলেও খুব কম সংখ্যক মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। বাসিন্দাদের সমর্থন না থাকায় আগস্ট মাসে অ্যাসোসিয়েশন তাদের রিজোনিং আবেদন প্রত্যাহার করে নেয়, যার ফলে মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত রয়েছে। তবে সাইটে মসজিদের আগমনের ঘোষণা দেওয়া বড় সাইনগুলো তখনো সেখানেই ছিল, যা পরবর্তী সময়ে এ ঘৃণাজনিত হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্ম ও মতের স্থানীয় জনগণের পক্ষ থেকেও সহানুভূতি ও সংহতির বার্তা উঠে এসেছে। এ ঘটনা শুধু ঘৃণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীকই নয়, বরং সমবেদনা, সহানুভূতি এবং ধর্মীয় সহাবস্থানের চেতনা জাগ্রত করার এক বাস্তব নিদর্শন হিসেবেও রয়ে গেল। ঘটনার পর ম্যাককিনির অনেক বাসিন্দা সামাজিক মাধ্যমে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। প্রতিবেশী ক্রিস্টিন ডেকুড্রো-এনগঙ্গা বলেন, আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি। আমি এখানে থাকি, আমার পরিবার এখানে থাকে। আমি চাই মুসলিম সম্প্রদায় যেন এখানে স্বাগত বোধ করে। তাই আমি নিজেই একটি নতুন সাইনবোর্ড তৈরিতে সাহায্য করতে চেয়েছি। তার এই উদার মানসিকতা স্থানীয় সম্প্রদায়ের ঐক্যের প্রতিফলন বলে মনে করছেন অনেকে।

অন্যদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প আবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে। যদিও ম্যাককিনি ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশন তাদের রিজোনিং আবেদন আপাতত প্রত্যাহার করেছে, তবে মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকেই মনে করছেন, এই ঘৃণার ঘটনার মধ্য দিয়ে তারা আরো স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছেন কেন একটি স্থায়ী উপাসনালয়ের প্রয়োজন। ধর্মীয় স্বাধীনতার স্বার্থে ও সহাবস্থানের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য, তারা ভবিষ্যতে আবারও এই উদ্যোগ চালিয়ে যাবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

শেয়ার করুন