০৩ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:১২:২০ পূর্বাহ্ন


২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে ৬৯ হাজার ৩৫৫ বাংলাদেশির আশ্রয় আবেদন
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৯-২০২৫
২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে ৬৯ হাজার ৩৫৫ বাংলাদেশির আশ্রয় আবেদন আশ্রয় প্রার্থনা


বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ২০২৪ সালে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ বছর মোট ৬৯ হাজার ৩৫৫ জন বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন। তবে এর মধ্যে মাত্র ২ হাজার ৪১৩ জন অনুমোদন পেয়েছেন, যা মোট আবেদনকারীর মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৯৩ জনের আবেদনই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

সবচেয়ে ইতিবাচক চিত্র দেখা গেছে উত্তর আমেরিকায়। যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৪ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী আবেদন করেছে ১ হাজার ৮৩৯ জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে ২৮ জন অনুমোদন পেয়েছেন এবং ৫৫ জনের আবেদন সরাসরি বাতিল হয়েছে। অন্যদিকে কানাডা ছিল বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য সবচেয়ে সফল গন্তব্য। সেখানে আবেদন করেছে ১৫ হাজার ৭৩৬ জন, এর মধ্যে ৭৩৮ জন অনুমোদন পেয়েছেন। অনুমোদনের হার দাঁড়িয়েছে ৮০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা বৈশ্বিক পরিসরে অন্যতম সর্বোচ্চ।

ইউরোপে বাংলাদেশিদের অভিজ্ঞতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। ইতালিতে আবেদন করেছে সর্বোচ্চ ৩৩ হাজার ৪১৫ জন, কিন্তু অনুমোদন পেয়েছে মাত্র ২০২ জন। যুক্তরাজ্যে আবেদন করেছে ৭ হাজার ২২৫ জন, অনুমোদন মিলেছে ৯০২ জনের। ফ্রান্সে আবেদন করেছে ৬ হাজার ৩১ জন, অনুমোদিত হয়েছে ৪৫৩ জন। আয়ারল্যান্ডে আবেদন করেছে ১ হাজার ৭ জন, অনুমোদন পেয়েছে মাত্র ২৯ জন। গ্রিসে ৭৭০ জন আবেদন করলেও অনুমোদন হয়েছে মাত্র পাঁচটি। এছাড়া জার্মানিতে ১৫৫ জন আবেদন করে অনুমোদন পেয়েছে পাঁচজন, অস্ট্রিয়ায় ১১২ জনের মধ্যে অনুমোদন পেয়েছে ১৪ জন। সুইডেনে ৫৮ জন আবেদন করে অনুমোদন পেয়েছে ১০ জন, সাইপ্রাসে ৫০ জন আবেদন করে অনুমোদন মেলে পাঁচজনের। স্পেনে আবেদন করেছে ৪১৯ জন, অনুমোদন পেয়েছে মাত্র পাঁচজন।

অন্যদিকে নেদারল্যান্ডস (৩৮ জন), রোমানিয়া (১২৬ জন), লাটভিয়া (৫০ জন), পোল্যান্ড (৩৩ জন), ক্রোয়েশিয়া (২৮ জন), মাল্টা (২৭ জন), বেলজিয়াম (২১ জন), পর্তুগাল (১৬ জন), ফিনল্যান্ড (১৩ জন), নরওয়ে (১৪ জন), সেøাভেনিয়া (৫৫ জন), সুইজারল্যান্ড (১০ জন), চেকিয়া (৫ জন) ও ডেনমার্কে (৫ জন) আবেদন করলেও কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এ চিত্র প্রমাণ করে যে ইউরোপের অধিকাংশ দেশ কার্যত বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীদের গ্রহণ করছে না।

এশিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলে বাংলাদেশিদের সাফল্য আরো কম। জাপানে আবেদন করেছে ৫৬৮ জন এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩৯৪ জন, কিন্তু কেউ অনুমোদন পায়নি। মালয়েশিয়ায় আবেদন করেছে ১১ জন, তবে পূর্ববর্তী বছরের আবেদনের সঙ্গে মিলিয়ে অনুমোদন পেয়েছে ১২ জন, যা কার্যত ১০০ শতাংশ সফলতা। প্রশান্ত মহাসাগরীয় ছোট দেশ নাউরুতে আবেদন করেছে ৬৭ জন, অনুমোদিত হয়েছে পাঁচজন (১০০ শতাংশ)। লেবাননে আবেদন করেছে ৬৪ জন, যদিও অনুমোদনের তথ্য প্রকাশিত হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকায় আবেদন করেছে ৪১৯ জন, ব্রাজিলে ৪১৫ জন, মেক্সিকোতে ২৮ জন, জর্জিয়ায় ১২ জন, সার্বিয়ায় ১১ জন এবং মলদোভায় ৩৩ জন, কিন্তু অনুমোদিত হননি কেউই। অন্যদিকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বড় দেশ অস্ট্রেলিয়ায় কোনো আবেদনই করা হয়নি।

সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ২০২৪ সালের সবচেয়ে নিরাপদ গন্তব্য ছিল কানাডা। যুক্তরাষ্ট্র থেকেও কিছুটা সুযোগ এসেছে। তবে ইউরোপের অধিকাংশ দেশ, বিশেষত ইতালি ও গ্রিস, কার্যত বাংলাদেশি আবেদনকারীদের গ্রহণ করছে না। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো উন্নত এশীয় দেশেও একই বাস্তবতা লক্ষ্য করা গেছে।

এ তথ্য শুধু সংখ্যার খাতা নয়, বরং প্রতিটি আবেদনকারীর পেছনে রয়েছে অনিশ্চয়তা, দমন-পীড়ন কিংবা অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্তির আকুতি। তবু বাস্তবতা হলো যে বিশ্বব্যাপী অভিবাসন নীতি ক্রমশ কঠোর হচ্ছে, আর বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ থেকে মানুষের বিদেশমুখী স্রোত থামছে না।

শেয়ার করুন