সেপ্টেম্বর, ২০২৫ মাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তেমন একটা না থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করে ঘোষণা দেওয়ায় দেশে একটি নির্বাচনী আমেজ চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। চলতি মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ও মামলার সংখ্যা কমে গেলেও দুস্কৃতিকারী কর্তৃক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের উপর হামলার ঘটনাসহ রাজনৈতিক দলসমূহের নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্ব অব্যাহত রয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিএনপি'র দলীয় কর্মীদের অর্ন্তদ্বন্দ্ব লক্ষ্যণীয়ভাবে বেড়ে যাওয়ায় হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ ছাড়া দুষ্কৃতিকারীদের অপতৎপরতায় হতাহতের ঘটনা জনমনে নিরাপত্তাহীনতা ও ভীতির সৃষ্টি করেছে।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) এর মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদন সেপ্টেম্বর, ২০২৫ এ তথ্য উঠে এসেছে। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী সেপ্টেম্বর ২০২৫ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮ টি ঘটনায় হামলার শিকার হয়েছেন ২৯৪ জন। তাঁদের মধ্যে ৭ জন নিহত এবং ২৮৭ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ১৯ জন গুলিবিদ্ধ। নিহতদের মধ্যে ৭ জন বিএনপির কর্মী সমর্থক এবং ১ জনের রাজনৈতিক পরিচয় স্পষ্ট নয়। সহিংসতার ৩৮টি ঘটনার মধ্যে ৫টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ এবং সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকান্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এ সকল ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
সহিংসতার ৩৪ টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্দ্বন্ধে ১৭টি, বিএনপি-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ১০টি, এনসিপি--অওয়ামি লীগ দ্বন্ধে ১টি, বিএনপি-এনসিপি দ্বন্ধে ১টি, বিএনপি-জামাত সংঘর্ষের ৫টি ঘটনা ঘটেছে।
এর পাপশাপাশি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সময়ে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে ৪ (চার) জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যা উদ্বেগজনক। অপরদিকে থানা হেফাজতে থাকা অবস্থায় দুইজনের আত্মহত্যাসহ অপর ৩ জন বন্দি মারা যায় যা অনাকাঙ্খিত। হঠাৎ করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু বেড়ে যাওয়া জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক করছে। সেই সাথে গ্রেফতার এড়াতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভয়ে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে ৩ জন নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি তিন বন্দিকে আটকের পর থানা হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এ মাসে সমাবেশ ব্যাতিত অন্য কোন রাজনেতিক কর্মকাণ্ড না থাকলেও নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে অন্তর্দ্বন্ধকালীন সহিংসতায় হতাহত ও দুস্কৃতিকারীদের হাতে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিহত হওয়ার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা যেমন ধর্ষণ, ধর্ষণ চেষ্টা, যৌন হয়রানি, হত্যা এবং শিশু ও নারীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন বেড়েছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ মাসে কারা হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। সনাতন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ভাংচুর লুটপাট ও জমি দখলের ঘটনা ঘটেই চলেছে। সীমান্তে হতাহতের ঘটনা বন্ধ হয়নি, সেই সাথে পুশইনের ঘটনা ঘটছেই। অপরদিকে আরাকান আর্মি ও মায়ানমার আর্মি কর্তৃক বাংলাদেশী জেলেদের ধরে নেওয়ার ঘটনায় সে অঞ্চলের বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা কিছুটা কমলেও গণপিটুনি ও মব সহিংসতার মত আইন হাতে তুলে নেয়ার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে যার ফলে নিহত ও আহতের সংখ্যা বেড়ে নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। সরকারের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা এ বিষয়ে নাগরিকদের জীবনে আতংঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে তুলেছে। নতুনভাবে সামনে এসেছে মব সন্ত্রাস। মব সৃষ্টি করে মাজার ও আখড়ায় আক্রমণ করে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগসহ লুটপাট করা হচ্ছে। মানবাধিকার লংঘন প্রতিরোধ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক চর্চা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমমর্যাদা ও নাগরিক জীবনে নিরাপত্তার বিষয়গুলো প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। এ সমস্ত কিছুর নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এমএসএফ জোর দাবি জানাচ্ছে।