০৮ অক্টোবর ২০২৫, বুধবার, ০৭:১৩:৩৬ অপরাহ্ন


অন্তর্বর্তী সরকারের ভুল নীতিতে অস্থির সাধারণ মানুষ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-১০-২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকারের ভুল নীতিতে অস্থির সাধারণ মানুষ ঢাকায় পোশাকশ্রমিকদের প্রতিবাদ (ফাইল ছবি)


বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত অন্তর্বর্তী সরকার। দেশ ও দেশের বাইরে ওইসব সমস্যা থেকে উত্তরণের উদ্যোগ নেই। সরকারের বাহ্যিকভাবে ভারত বিমুখী বিদেশি নীতির কারণে সীমান্ত অস্থির। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান না হয়ে ভুল পথে হাঁটা। সরকার বঙ্গোপসাগর নিয়ে আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির চারণভূমিতে পরিণত হয়ে পড়া। দেশ পরিচালনায় আনাড়ির মতো অবস্থানের কারণে সরকার সবকিছু লেজে গোবরে করে ফেলেছে।

সামাজিক জীবনে নানা অস্তিরতা, কথায় কথায় আন্দোলন ঘেরাও, জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকটে শিল্পাঙ্গনে অস্থিরতা। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান। লক্ষ শ্রমিক বেকার। ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি বেড়েই চলেছে। দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি সীমিত আয়ের মানুষদের জীবন অতিষ্ঠ্য করে তুলেছে। সার্বিকভাবে বাড়ছে মুল্যস্ফিতি। অনেক মানুষ দেশ ছেড়ে বিদেশে পারি জমানোর কথা ভাবছে এবং তরুণরা দেশ ছাড়তে মরিয়া। দেশে বিদেশি বিনিয়োগ দূরের কথা, দেশি বিনিয়োগকারীরাও হতাশ, ক্ষুব্ধ।

এমনিতর অবস্থায় যখন সরকারের উচিত সংযত আচরণ তখন দেখি দৃষ্টিকটুভাবে সরকার ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষ অকারণে অতিশয় উক্তি করছে, সরকারের উপদেষ্টারা কেউ কেউ নিরাপদ এক্সিট খুঁজছে সন্দেহ নেই। নাহিদ ইসলামের কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। নিজেদের দুর্বলতা ও ভুল কতিপয় সিদ্ধান্তে মানুষ অতিষ্ঠ ও বিপাকে। 

এমতাবস্থায় সরকারের উচিত সংশ্লিষ্ট সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মুক্ত আলোচনা করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা, কিন্তু সেটা নিয়েও ক্রিস্টাল ক্লিয়ার কোনো উদ্যোগ নেই। সবকিছুতেই ধীরে চলা নীতি। 

অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি চাপে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বারবার ঘোষিত সময় ফেব্রুয়ারি ২০২৬ প্রথম ভাগে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের অঙ্গীকার ঘোষণা করলেও নির্বাচন কমিশন এখনো নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা করেনি। কবে ঘোষণা হবে সেই রোডম্যাপ? কিছু মৌলিক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীতমুখী অবস্থান এবং কোনো কোনো উপদেষ্টা এবং সরকারি মুখপাত্রের অতিশয় আক্রমণাত্মক উক্তির কারণে হিংসাবিদ্বেষ সৃষ্টি হয়ে পরিবেশ বিষিয়ে তুলেছে। দেশের মালিক জনসাধারণ। জনগণ চায় অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে নিজেদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দেশ পরিচালনা করুক। রাজনৈতিক দলগুলোর ভাগ্য নির্ধারণের ভার জনসাধারণের ওপর ন্যস্ত হোক। অনস্বীকার্য যে ১৯৭১-২০২৪ জনগণের ভোটাধিকার কখনো পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত হয়নি। রাজনৈতিক সরকারগুলো জনগণের কাছে দেওয়া অঙ্গীকার রক্ষা করেনি। 

দেশজুড়ে অপশাসন, দুর্নীতি, লুটেরা শাসনব্যবস্থা জনগণকে বঞ্চিত করেছে। কৃষক, শ্রমিক খেটে খাওয়া মানুষগুলোর মাথার ঘাম পায়ে ফেলা অর্জনে দেশের অর্থনীতি সম্প্রসারিত হলেও লুটেরা রাজনীতিবিদ, সুযোগসন্ধানী সামরিক-বেসামরিক আমলাদের দুর্নীতি লুটপাটের কারণে দেশে তৃণমূল মানুষগুলোর ভাগ্য বিড়ম্বনা সৃষ্টি হয়েছে। জুলাই-আগস্ট ২০২৪ জনবিক্ষোভের অন্তরালে সুবিধাভোগী মহল পরিবর্তনের সুযোগে ক্ষমতার কাছাকাছি থেকে দেশে নয়া কর্তৃত্ববাদ সৃষ্টি করে, সেদিন দেশের সব অর্জন-বিসর্জন দিতে অবাধ লুণ্ঠন, বিচারহীন মব সন্ত্রাস, ছিনতাই, রাহাজানি সৃষ্টি করছে। দুর্বল সরকার কিছুই সামাল দিতে পারছে না। মিথ্যা মামলা, নিয়োগবাণিজ্য করে, সরকার ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষ বিপুল সম্পদ অর্জন করেছে। সরকারের মদত এবং পৃষ্ঠপোষকতায় সৃষ্ট ছাত্রদের রাজনৈতিক দল এনসিপি প্রধান নাহিদ ইসলাম নিজেই কিছু উপদেষ্টার ভূমিকা নিয়ে বিষোদগার করেন। প্রধান উপদেষ্টার বিতর্কিত প্রেস সচিবের অতিকথন জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং ঘৃণার সৃষ্টি করে। প্রধান উপদেষ্টার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।

সবাই উপলব্ধি করছে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো মৌলিক সংস্কার করতে পারবে না। জুলাই আগস্ট ২০২৪ গণহত্যার নির্মোহ নিরপেক্ষ বিচার হবে না, দুর্নীতিবাজরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে। নড়বড়ে বেসামরিক প্রশাসন, সামরিক বাহিনীর সহায়তায় আদৌ নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে কি না, সংশয় ঘনীভূত হচ্ছে। কি করবে এ সরকার আওয়ামী লীগ, ১৪ দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে? গণতান্ত্রিক দেশে অনির্বাচিত সরকারের কোনো অধিকার নেই কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার।

শেয়ার করুন