সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ‘গণভোট’ প্রসঙ্গে রাজনীতির মাঠে ফের বিতর্ক তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন রাজনৈতিক দলসমূহ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকের পরও এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াতে অস্পষ্টতা রেখে বিষয়টি নতুন সমস্যা হিসেবে উত্থাপিত হয়েছে। জুলাই সনদ তৈরিতে নানা মতবিরোধ কাটিয়ে একটা প্লাটফর্মে মোটামুটি এলেও এখন যেন সেই সূচনায় ফিরে গেছে দলগুলো। এক ইস্যুতে এখন চরম বিতর্ক।
মাঠে নভেম্বরে গণভোট আয়োজনে একদিকে আন্দোলন দাবি অন্যদিকে বিএনপিও তাদের মতামত দিয়ে সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছে। সব মিলিয়ে বল যখন এখন সরকার তার নিজের কোর্টে নিয়ে রেখেছে, ফলে সব পক্ষের চাপ এখন সরকারের দিকেই ফিরে আসছে।
এদিকে জুলাই সনদের বাইরে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হলে এর দায় ‘সরকারের ওপরেই বর্তাবে’ বলে সতর্ক করেছে বিএনপি। ১১ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির এই মতামতের কথা জানিয়েছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। দলের স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, জুলাই সনদের বিষয়াদির বাইরে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে সনদে স্বাক্ষরকারী কোনো দলের জন্য তা মান্য করার বাধ্যবাধকতা থাকবে না। সে ক্ষেত্রে সকল দায় দায়িত্ব সরকারের উপরই বর্তাবে। এই ব্যাপারে সর্তক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
‘উপদেষ্টাদের কারো কারো বক্তব্য বিভ্রান্তিকর’
উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে কেউ কেউ জুলাই জাতীয় সনদের বাইরে কোনো কোনো বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের ঘোষণা প্রসঙ্গে যে সকল বক্তব্য দিচ্ছেন তা বিভ্রান্তিকর এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করার শামিল।”
১০ নভেম্বর সোমবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত জানাতে এদিন সংবাদ সম্মেলনে আসেন খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, “জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যে প্রস্তাব গ্রহীত হয়েছে তা হল, রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ প্রায় এক বছর যাবৎ আলোচনার ভিত্তিতে কতিপয় নোট অফ ডিসেন্টসহ ঐকমত্যের ভিত্তিতে রচিত জুলাই জাতীয় সনদ বিগত ১৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হয় এবং দেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী তা বাস্তবায়নে সকলে অঙ্গীকারবদ্ধ হই।”
খন্দকার মোশাররফের কথায়, নির্বাচন নিয়ে ‘ষড়যন্ত্র চলছে’।
যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারছে না, নানাভাবে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে তারাই এ বিশৃঙ্খলা করছে। তাই এটা সরকারের সাথে এই বিষয়ের কারণেই কিন্তু হচ্ছে না। আজকে যে বিষয়ে আমরা সরকারকে সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছি। এটার সাথে বর্তমানে যে সৃষ্ট যে অসন্তোষ বা অশান্তি তার কোনো সম্পর্ক নেই বলে আমরা মনে করি।
এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে। সেই সনদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন দফায় কিছু নোট অফ ডিসেন্ট আছে, সেই নোট অফ ডিসেন্টগুলোর ক্ষেত্রে বলাও আছে সনদে যে, দলগুলো যদি নির্বাচনি ইশতেহারে উল্লেখ করে জনগণের ম্যান্ডেট পায় নোট অফ ডিসেন্টগুলো তারা সেভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে।
“এখানে আমরা একশত ভাগ একমত, এখনো আমরা সেই জায়গায় আছি এবং আমরা স্বাক্ষরিত সনদের বাইরে নই। কিন্তু যেভাবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে সনদ বাস্তবায়নের উপায় সংক্রান্ত যে সুপারিশ প্রদান করেছে তার মধ্যে নোট অফ ডিসেন্ডার অংশগুলো উল্লেখিত নেই-একদম নেই। শুধু প্রস্তাবগুলোর ব্যাপারে ৪৮টা দফা দিয়ে তারা একটা তফসিল করেছে। সেই তফসিলে প্রস্তাবগুলো সম্পর্কে গণভোটের প্রস্তাব করেছে।”
তিনি বলেন, “গণভোটের বিষয়ে আমরা একটা জাতীয় ঐকত্যের স্বার্থে একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের সম্মতি নেওয়ার জন্য জুলাই জাতীয় সনদের উপরে আমরা রাজি হয়েছিলা- সেই জায়গায় আমরা আছি। এখন এই স্বাক্ষরিত সনদের বাইরে গিয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য যে অযৌক্তিক এবং নতুন নতুন ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করছে সে ব্যাপারে তারা বক্তব্য প্রদান করতে পারেন। এর বাইরে আমরা সনদের স্বাক্ষরিত যে বিষয়গুলো আছে তার বাইরে যদি সরকার কোন সিদ্ধান্ত নিতে যায় সেটা কোন রাজনৈতিক দল যারা সই করেছে তাদের উপরে কোন দায় দায়িত্ব বর্তাবে না বা মানতে বাধ্য নয়।
‘রাষ্ট্রপতির আদেশ জারির বিধান সংবিধানে নেই’
সালাহউদ্দিন বলেন, আদেশের বিষয়ে আমরা স্পেসিফিক কোনো প্রস্তাব এরকম দেইনি যে আদেশ কে জারি করবে। আমরা একটা সাংবিধানিকতার মধ্যে আছি। সাংবিধানিকভাবে এই সরকার শপথ নিয়েছে, সবকিছু আইনানুকভাবে চলছে। এখন কোন অধ্যাদেশ জারি করার ক্ষমতা এই সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতির। যদি কোনো আদেশ জারি করতে হয় সেই আদেশের মর্যাদা যদি আইনি হয় সেই আদেশ জারি করার মত কোন সাংবিধানিক অবস্থা বাংলাদেশে নেই।
“কারণ প্রেসিডেন্ট অর্ডারটা জারি করার একটা বিধান একসময় ছিল যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয়নি। আপনারা সবাই জানেন, সেরকম ‘পিও’ অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট অর্ডার নিয়ে তখন রাষ্ট্র চলত। সংবিধান গৃহীত হয়ে যাওয়ার পরে রাষ্ট্রপতির আদেশ জারির আর কোনো বিধান রইল না। সেটা বিলুপ্ত হয়েছে। এখন কী রকম আদেশ দিবে সেই আদেশের মর্যাদা কি আইনি মর্যাদা হবে সেটা এখনো সরকার নির্ধারণ করেনি। একমাত্র অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা ছাড়া রাষ্ট্রপতির অন্য কোনোভাবে আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতা এখন নেই। আদেশ জারি করার কোনো বিধান বর্তমান সংবিধানে নেই।” তিনি বলেন, তবে এখন কোনো প্রজ্ঞাপনকে আদেশ নামকরণ করতে চায় এবং সেটার আইনি মর্যাদা না থাকে সেটা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার প্রকাশ করতে পারে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে। আইন হবে না সেটা।
গণভোট নিয়ে আলোচনার সুযোগ নিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, সেটা সরকার যদি আলোচনার জন্য আহ্বান জানায় সেক্ষেত্রে আলোচনার সুযোগ থাকতে পারে। রাজপথে তো নয়।
সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।