০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:১১:১৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


স্ন্যাপ সুবিধাভোগীদের আবারও আবেদন করতে বললেন ইউএসডিএ প্রধান
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-১১-২০২৫
স্ন্যাপ সুবিধাভোগীদের আবারও আবেদন করতে বললেন ইউএসডিএ প্রধান বক্তব্য রাখছেন ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার সেক্রেটারি ব্রুক রোলিনস, পাশে দাঁড়িয়ে স্পিকার মাইক জনসন


ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)-এর প্রধান ব্রুক রোলিনসগত ১৪ নভেম্বর ঘোষণা করেন যে, ট্রাম্প প্রশাসন পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত স্ন্যাপ সুবিধাভোগীদের পুনরায় আবেদন করতে। রোলিনসের দাবি, একটি তদন্তে ২৯টি রিপাবলিকান পরিচালিত স্টেটে ১ লাখ ৮৬ হাজার জন ব্যক্তি স্ন্যাপ সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। রোলিনস বলেন, আপনি কি কল্পনা করতে পারেন যে ব্লু-স্টেটের তথ্য হাতে আসার পর আমরা কী খুঁজে পাব? তিনি আরো বলেন, এটি আমাদের এই প্রোগ্রামকে মূলভিত্তিতে পুনর্গঠনের সুযোগ দেবে। সবাইকে পুনরায় আবেদন করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে যারা স্ন্যাপ বা ফুড স্ট্যাম্পের মাধ্যমে করদাতাদের অর্থ গ্রহণ করছে তারা সত্যিই সেই সুবিধার প্রাপ্য এবং এটি ছাড়া বেঁচে থাকতে পারবে না।

ইউএসডিএ প্রধানের দাবি, এ সুবিধা ঘিরে প্রতারণা ব্যাপকভাবে চলছে। তিনি উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে ওহাইওতে ১২০ জনকে স্ন্যাপ প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। রোলিনসের কথায়, ১৭ হাজার অবৈধ লেনদেনের তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, বছরের পর বছর এই সমস্যা যথাযথভাবে খতিয়ে দেখা হয়নি। স্ন্যাপ সুবিধা প্রায় ৪২ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিককে খাদ্য সহায়তা প্রদান করে এবং ২০২৪ সালে সরকারের জন্য এর ব্যয় প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। স্টেট পর্যায়ে সুবিধাভোগীরা নিয়মিতভাবে তাদের তথ্য আপডেট এবং পুনঃসত্যায়ন করতে হয়, সাধারণত ছয় মাস অন্তর। তবে রোলিনস অভিযোগ করেন, প্রোগ্রামটি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা প্রয়োজন। রোলিনসের দাবি, এই নীতির লক্ষ্য হলো স্ন্যাপে বিরল প্রতারণা শনাক্ত করা এবং করদাতাদের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করা। ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল আইনের আওতায় কঠোর কর্মসংক্রান্ত শর্ত আরোপ করা হয়েছে এবং স্টেট সরকারকেও স্ন্যাপ ব্যয়ের একটি অংশ বহন করতে হবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই নতুন নীতিমালা এমন সময়ে এসেছে যখন সরকারি শাটডাউন শেষ হওয়ার পর নভেম্বর মাসের সম্পূর্ণ স্ন্যাপ সুবিধা প্রদান বন্ধ করা হয়েছিল। ইউএসডিএ প্রধান নিশ্চিত করেছেন, ১৭ নভেম্বর থেকে সুবিধাভোগীরা তাদের পূর্ণ সুবিধা পাবেন। রোলিনস বলেন, আমরা এমন তথ্য উন্মোচন করছি যা পূর্বে কেউ খতিয়ে দেখেনি। এখন আমাদের হাতে সঠিক সিস্টেম আছে। রাষ্ট্রপতি এই বিষয়টিকে অগ্রাধিকার হিসেবে নিয়েছেন এবং আমরা এই প্রোগ্রামকে ঠিক করবো। তিনি আরো জানান, পুনঃআবেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে যে সুবিধাভোগীরা প্রকৃতপক্ষে প্রাপ্য এবং কারো সঙ্গে প্রতারণা হচ্ছে না। এটি করদাতাদের অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পদক্ষেপের ফলে প্রায় ৪২ মিলিয়ন মানুষের সুবিধা পুনঃমূল্যায়ন এবং পুনরায় যাচাই করা হবে। স্ন্যাপ -এর মাধ্যমে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে খাদ্যসামগ্রী ক্রয় সহায়তা দেওয়া হয়, যা অনেক পরিবারের জন্য অপরিহার্য।

ক্রান্তিকালে স্ন্যাপ পুনঃআবেদনের নীতি নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জন্য একটি নতুন বোঝা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, দ্রুত প্রয়োগের ক্ষেত্রে সুবিধাভোগীরা অপ্রত্যাশিত সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। প্রবাসী ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে পুনঃআবেদন প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হলে তারা খাদ্য সহায়তা হারাতে পারেন। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচারের দাবি অনুযায়ী, পুনঃআবেদন প্রক্রিয়ায় প্রতারণা রোধ এবং করদাতাদের অর্থ সঠিক ব্যবহারের নিশ্চয়তা প্রদান হবে। স্ন্যাপ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে সুবিধাভোগীদের সমস্ত তথ্য যাচাই এবং নবায়ন অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

রোলিনসের মন্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে ট্রাম্প প্রশাসন স্ন্যাপে দীর্ঘদিন ধরে চলমান দুর্নীতি ও প্রতারণা চিহ্নিত করতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চায়। ইউএসডিএর এই পদক্ষেপকে কর্মকর্তারা ‘মূলগত পুনর্গঠন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা দেশের খাদ্যসহায়তা প্রোগ্রামের স্বচ্ছতা এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এ পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে আশঙ্কা রয়েছে, বিশেষত যারা শাটডাউনের সময় ইতিমধ্যেই তাদের সুবিধা গ্রহণে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। তবে ইউএসডিএ প্রধানের মতে, পুনঃআবেদন প্রক্রিয়া তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং প্রতারণার সুযোগ কমাবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের অনুমোদিত ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল একটি বৃহৎ কর ও ব্যয় আইন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তা ও খাদ্য সহায়তা প্রোগ্রামে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। প্রধান বিষয়গুলো হলো: সুবিধাভোগীদের জন্য নতুন শ্রমশর্ত আরোপ করা হয়েছে, যাতে তারা নিয়মিত কর্ম সম্পাদন করতে বাধ্য হয়। স্ন্যাপ সুবিধার ব্যয় রাজ্য সরকারকেও ভাগ করতে হবে, ফলে কেন্দ্রীয় অর্থায়ন সীমিত হবে। অনেক আইনগত অভিবাসী, শরণার্থী এবং মানবিক ভিসাধারী নাগরিক এই আইনের কারণে স্ন্যাপ সুবিধা হারাতে পারেন। আইনটি দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কাটছাঁট হতে পারে।

আইনের আওতায় স্ন্যাপ সুবিধাভোগীদের জন্য আরো কঠোর কর্মসংক্রান্ত শর্তারোপ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এই শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হলে সুবিধাভোগী স্ন্যাপ থেকে বাদ পড়বেন। নিউইয়র্ক এবং ক্যালিফোর্নিয়ার মতো কিছু স্টেটে উচ্চ বেকারত্বের কারণে আংশিক অব্যাহতি রয়েছে, যা প্রভাব কিছুটা কমাবে। তবে অনেক আইনগত অভিবাসী, বিশেষত শরণার্থী, তাৎক্ষণিকভাবে স্ন্যাপে অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন।

স্ন্যাপ সুবিধার পুনঃআবেদন এবং ইউএসডিএর নতুন নীতিমালা দেশের নিম্ন আয়ের নাগরিকদের জন্য বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এটি সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা দীর্ঘদিন ধরে চলমান দুর্নীতি, প্রতারণা ও তথ্যগত অসংগতি দূর করতে সহায়ক হবে। তবে সুবিধাভোগীদের দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি নতুন চ্যালেঞ্জ এবং অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন এই নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্ন্যাপে স্বচ্ছতা এবং যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।

শেয়ার করুন