বেগম খালেদা জিয়া
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনো বেশ উদ্বেগজনক পর্যায়েই রয়ে গেছে। বিশেষ করে তাঁর হৃদযন্ত্র, লিভার, কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতা কাটছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেখা যাচ্ছে চিকিৎসায় এ সমস্যাগুলোর একটির সামান্য উন্নতি হলে অন্যটির অবনতি ঘটছে; যা কয়েক দিন ধরে নানা মাত্রায় উদ্বেগজনকভাবে ওঠানামা করছে। তবে চিকিৎসকেরা এখনো এই অর্থে আশাবাদী যে তাঁরা খালেদা জিয়াকে যে চিকিৎসা দিচ্ছেন, তিনি তা গ্রহণ করতে পারছেন। ওষুধ কাজ করছে।
এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর অসুস্থ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকরের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিটি সংস্থাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরে যমুনার সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের একটি বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সভায় তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক রাষ্ট্রপতির স্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপরসন বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করে দোয়া করা হয় এবং জাতির কাছে তার জন্য দোয়ার আহ্বান জানানো হয়।’
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘সভায় বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় হাসপাতালে তার নির্বিঘ্ন চিকিৎসা, প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা, তার নিরাপত্তা ও যাতায়াতের সুবিধা এবং উচ্চ মর্যাদা বিবেচনায় তাকে রাষ্ট্রের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকরের জন্য সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।’
এ সময় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
চিকিৎসা গ্রহণ করছেন খালেদা জিয়া
‘গুজবে কান দেবেন না, চিকিৎসকদের দেয়া চিকিৎসা খালেদা জিয়া গ্রহণ করছেন’ বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন। ২ ডিসেম্বও মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ ব্রিফিঙে বিএনপির চেয়ারপারসনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানাতে গিয়ে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক একথা জানান।
তিনি বলেন, ‘‘আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে ডাক্তাররা যে চিকিৎসা দিচ্ছেন, সেই চিকিৎসা উনি (বেগম খালেদা জিয়া) সেটি উনি গ্রহণ করতে পারছেন অথবা আমরা যদি বলি উনি মেনটেইন করছেন।”
আমরা এই সংকটময় মুহূর্তে আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে উনার সুস্থতার জন্য দোয়া চাই। এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যাতে দেশবাসীর দোয়া, সারা পৃথিবীর অনেক মানুষের উনার প্রতি ভালোবাসা এবং দোয়ার কারণে হয়তো বা উনি এই যাত্রায় সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আমরা আশা করি।
দুপুরে সাড়ে ১২টায় বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালের বাইরে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ার সামনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা জানাতে আসেন অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন।
‘গুজবে কান দেবেন না’
জাহিদ বলেন, আমরা আপনাদের মাধ্যমে সবাইকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন এবং সেই সাথে কোন ধরনের গুজব ছড়ানো এবং গুজবে কান না দেওয়ার জন্য বিনীতভাবে পরিবারের পক্ষ থেকে, দলের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে আমরা অনুরোধ করছি। আমাদের দল কিভাবে আপনাদেরকে ইনফরমেশন দিবে সেটিও আমাদের দলের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আবেগপ্রবণ কণ্ঠে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত এই জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক বলেন, সম্মানিত সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা আপনারা ধৈর্য ধরুন দীর্ঘ ছয় বছর যাবৎ আপনারা আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন। ইনশাআল্লাহ আমরা এই যাত্রাও আপনাদের ভালোবাসা, আপনাদের সহযোগিতা এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ মেহেরবানীতে আমরা আবারো আমাদের প্রাণপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে আজকে দেশের মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রতীক সেটি আজকে প্রমাণিত সেই লক্ষ্যেই আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাই।
আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করেছেন যে ধৈর্য ধারণ করার জন্য এবং উনি সার্বক্ষণিকভাবে বিরামহীনভাবে দেশী বিদেশী চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল টিমের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া চিকিৎসাকার্য সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। কোন ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার জন্য আপনাদেরকে অনুরোধ করছি এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য সুস্থতার জন্য আপনাদের মাধ্যমে দেশ তথা সকল ধর্মের মানুষের প্রতি আমরা উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ‘আজকেও ইউকে থেকে উনাকে দেখার জন্য বিশেষজ্ঞরা আসবেন এবং উনারা দেখবেন। দেখার পরবর্তীতে উনাকে যদি ট্রান্সফারেবল হয়, আমাদের যদি ট্রান্সফার করার প্রয়োজন পড়ে, উনার মেডিকেল বোর্ড মনে করে তখনই উনাকে যথাযথ সময়ে উনাকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে।
হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে তিন বাহিনী প্রধান
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা জানতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গেছেন তিন বাহিনীর প্রধানরা।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাতে সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধান হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান মেডিকেল বোর্ড সদস্যদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন। পরে নৌবিহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান বিদায় নেন। সবশেষ বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন হাসপাতাল ছাড়েন।
খালেদা জিয়াকে দেখে এসে স্বস্তি প্রকাশ করলেন জামায়াত আমির
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে তিনি রাজধানীর বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। কিছু সময় সেখানে থাকার পর বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। জামায়াত আমির বলেন, “আল্লাহতালার হাতে সব কিছুই আছে, তিনি জীবিতকে ধরে নিয়ে যেতে পারেন। আবার মরার মধ্যে জান দিতে পারেন। উনি (খালেদা জিয়া) আলহামদুলিল্লাহ যেহেতু সারভাইব করছেন, আমরা আশা রাখি- দোয়া করি উনি সুস্থ হয়ে উঠবেন ইনশাল্লাহ।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি দুই চোখে একটু দেখে আসতে পেরেছি এটা আমার সান্ত¦না। আবারও আল্লাহতালার কাছে দোয়া করি তিনি যেন তাকে ক্ষমা করে তার ওপর রহম করুন, তার ওপর সুস্থতার নেয়ামত দান করুন।” পরিবারের সদস্যদের ধৈর্যের সঙ্গে এ পরিস্থিতি মোকাবেলার করার জন্য তিনি দোয়া করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গত ২৩ নভেম্বর এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। সেদিন রাতে প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে তাকে ভর্তি রাখা হয়। সেই থেকে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন। ২৭ নভেম্বর তার অবস্থা সংকটাপন্ন হলে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে নিয়ে নিবিড় চিকিৎসা দিচ্ছে মেডিকেল বোর্ড।