নিউইয়র্ক স্টেট ড্রাইভিং লাইসেন্স
নিউইয়র্ক স্টেটে ২০২৬ সাল থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত নিয়মে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসছে পয়েন্ট সিস্টেমে। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে ড্রাইভারদের জন্য লাইসেন্স স্থগিত হওয়ার ঝুঁকি আগের তুলনায় অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে, এবং গাড়ির বীমা প্রিমিয়াম থেকে শুরু করে ড্রাইভিং রেকর্ড এই সবকিছুর ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে। নিউইয়র্ক স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব মোটর ভেহিকলস (ডিএমভি) ইতোমধ্যেই এই নতুন পয়েন্ট সিস্টেম অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে, এবং স্টেট লেজিসলেচারও তা পাস করেছে। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর হবে। এ পরিবর্তনগুলো মূলত উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ, অসাবধানী ও নিয়মিত ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারী ড্রাইভারদের চিহ্নিত করতে এবং প্রয়োজন হলে দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে তৈরি করা হয়েছে।
বর্তমানে নিউইয়র্কের নিয়ম অনুযায়ী কোনো ড্রাইভার ১৮ মাসে ১১ পয়েন্ট পেলে তার ড্রাইভিং লাইসেন্স স্থগিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এই নিয়ম বহুদিন ধরে চলমান। তবে নতুন সিস্টেমে সময়সীমা ১৮ মাস থেকে বাড়িয়ে ২৪ মাস করা হচ্ছে এবং পয়েন্ট সীমা কমিয়ে আনা হচ্ছে ১০-এ। অর্থাৎ নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ২৪ মাসের মধ্যে ১০ পয়েন্ট পেলেই ড্রাইভার লাইসেন্স সরাসরি স্থগিত হতে পারে বা কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপের মুখে পড়তে পারে। ডিএমভি জানায়, দীর্ঘ সময়সীমা প্রবর্তনের মাধ্যমে একজন ড্রাইভারের আচরণ আরও বিস্তৃতভাবে মূল্যায়ন করার সুযোগ তৈরি হবে। এতে স্টেট প্রশাসন আরও ভালভাবে শনাক্ত করতে পারবে কারা নিয়মিত আইন ভঙ্গ করছে বা রাস্তা ব্যবহারকারীদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। স্টেটের হিসাব অনুযায়ী, সময়সীমা বাড়ালে প্রায় ৪০শতাংশ বেশি ড্রাইভার ধারাবাহিক নিয়মভঙ্গকারী ক্যাটেগরিতে পড়বে, যা সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়নে সহায়তা করবে।
নতুন পয়েন্ট সিস্টেমে অসংখ্য অপরাধের পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে, বিশেষ করে যেগুলো সরাসরি প্রাণঘাতী ঝুঁকি তৈরি করে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তনগুলোর একটি হলো যে দাঁড়িয়ে থাকা স্কুল বাস অতিক্রম করা, যা আগে ৫ পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হতো, সেটিকে বাড়িয়ে ৮ পয়েন্ট করা হচ্ছে। একইভাবে বেপরোয়া বা রেকলেস ড্রাইভিং, স্পিড কনটেস্ট বা রেসিং, এবং ওয়ার্ক জোনে গতি সীমা লঙ্ঘন করার মতো গুরুতর অপরাধগুলোও এখন থেকে ৮ পয়েন্টের শাস্তির আওতায় পড়বে। উচ্চতা সীমা অতিক্রম করার কারণে সেতু বা হাইওয়ে স্ট্রাকচারে আঘাত করলেও একই ধরনের শাস্তি প্রযোজ্য হবে। এসব আচরণ যাত্রী, পথচারী এবং অবকাঠামোর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় পয়েন্ট বৃদ্ধির মাধ্যমে শাস্তি কঠোর করা হয়েছে। স্পিডিংয়ের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম আরও কঠোর। আগে গতি সীমার চেয়ে ১০ মাইল বেশি গতিতে গাড়ি চালালে ৩ পয়েন্ট দেওয়া হতো, কিন্তু নতুন সিস্টেমে তা বাড়িয়ে ৪ পয়েন্ট করা হচ্ছে। অনেকেই ছোট খাটো স্পিডিংকে স্বাভাবিক মনে করেন, কিন্তু ডেটা বলছে, সীমার চেয়ে ১০ মাইল বেশি গতিতেও দুর্ঘটনার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। তাই ডিএমভি স্পিডিং লঙ্ঘনগুলোতে কঠোর বার্তা দিতে চায়।
মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিষয়েও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্টিয়ারিং হাতে রেখে মোবাইল ফোন ব্যবহার অথবা টেক্সটিং হাইওয়ে নিরাপত্তার অন্যতম বড় হুমকি হিসেবে বিবেচিত। আগের নিয়ম অনুযায়ী এটি ছিল ৪ পয়েন্টের লঙ্ঘন, কিন্তু নতুন নিয়মে তা বাড়িয়ে ৬ পয়েন্ট করা হচ্ছে। অর্থাৎ, কয়েকটি ছোটখাটো লঙ্ঘন ও একটি সেলফোন সম্পর্কিত লঙ্ঘন মিলেই একজন ড্রাইভার দ্রুত ১০ পয়েন্টের সীমার কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারেন, যা লাইসেন্স স্থগিতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে।
মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো বা অ্যালকোহল-সম্পর্কিত সাজায় পয়েন্ট বাড়ানোর সিদ্ধান্তও গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম অপরাধে যেখানে আগে ৫ পয়েন্ট দেওয়া হতো, নতুন নিয়মে তা হবে ৮ পয়েন্ট। দ্বিতীয় অপরাধে ৮ থেকে ১১ পয়েন্ট এবং তৃতীয় অপরাধে ১১ থেকে ১৪ পয়েন্ট করা হচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলো দেখায় যে রাজ্য বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দিচ্ছে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর মতো প্রাণঘাতী আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে। কারণ এসব অপরাধে শুধুমাত্র ড্রাইভার নয় বরং অন্যদের জীবনও ঝুঁকিতে পড়ে।
অন্যদিকে কিছু অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর লঙ্ঘনেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেমন ট্রাফিক বাধা সৃষ্টি করা বা নিষিদ্ধ স্থানে ইউ-টার্ন করলে ২ পয়েন্ট প্রযোজ্য হবে। জরুরি গাড়িকে- যেমন অ্যাম্বুলেন্স, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস-পাশ কাটাতে ব্যর্থ হলে ৩ পয়েন্ট শাস্তির বিধান রয়েছে। এসব নিয়মের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ ড্রাইভারদের মনে করিয়ে দিতে চায় যে জরুরি পরিস্থিতিতে রাস্তা পরিষ্কার রাখা একটি দায়িত্ব, যা অবহেলা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নতুন নিয়ম কার্যকর হলে ড্রাইভারদের প্রতিটি লঙ্ঘন এমনকি সামান্য স্পিডিং দীর্ঘমেয়াদে তাদের ড্রাইভিং রেকর্ড ও বীমা খরচকে প্রভাবিত করবে। এমনকি স্পিডিং টিকিট প্লিডাউন করলেও ড্রাইভার পয়েন্ট থেকে বাঁচতে নাও পারেন। অনেক ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের জরিমানা দিয়ে কম পয়েন্টের একটি ডিল করার চেষ্টা করলেও নতুন নিয়মে তা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। প্যামের মতে, একটি ৮-পয়েন্টের দণ্ডই একজন মানুষের ভবিষ্যতের ড্রাইভিং সুবিধাকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বীমা কোম্পানি প্রিমিয়াম বাড়াতে পারে, পলিসি বাতিলও করতে পারে।