১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০২:৩০:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ত্রোয়েদশ জাতীয় নির্বাচন ও গনভোট ফ্যাক্টচেকিং ও কনটেন্ট মডারেশন কর্মীদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা ৮ ডিসেম্বর থেকে এফ ও এম সাবওয়ে লাইন সপ্তাহের দিনে রুট পরিবর্তন উইন রোজারিওর খুনি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনে লেটিকেয়ার অস্বীকৃতিতে জাপানের প্রথম রাজধানী নারা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া পদত্যাগ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘোষণা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বয়কট নিষিদ্ধ করে অ্যাডামসের বিতর্কিত আদেশ হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারির ভাতিজার মাকে মুক্তির নির্দেশ বিশ্বকাপ ফাইনালে টিকেটের দাম ৬ হাজার ডলার


জামায়াতের বক্তব্যে ‘ফোর মাইনাস’ ফর্মুলার গন্ধ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-১২-২০২৫
জামায়াতের বক্তব্যে ‘ফোর মাইনাস’ ফর্মুলার গন্ধ


বেকায়দায় পড়েছে জামায়াত। চারিদিক থেকে বাকযুদ্ধের চাপে দিশেহারা দলটি। বর্তমানে রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় সবক’টি দলই জামায়াতের বিরুদ্ধে কমবেশি নেতিবাচক বক্তব্য দিচ্ছে। তবে বিএনপিসহ মাঠের সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলি জামায়াতের বিরুদ্ধে এমন সাড়াশি আক্রমণের ভিন্ন কারণ রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। কারো কারো মতে, নেপথ্যে একটি বড়ো ধরনের চক্রান্তের গন্ধ পেয়েই জামায়াতের বিরুদ্ধে এমন বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। 

কে কি বলছেন?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামায়াত এখন রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত হয়ে পড়ায় ভীষণ চিন্তিত। বিশেষভাবে তাদের একসময়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র দীর্ঘদিনের সহযাত্রী খোদ বিএনপি হাইকমান্ড থেকে একের পর এক আক্রমণাত্মক বক্তব্য আসছে। প্রথমে বিএনপি’র প্রভাবশালী নেতারা মুখ খুলেছেন জামায়াতের বিরুদ্ধে। দলের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘জামায়াতের টিকিট (ভোট) কাটলে জান্নাতের টিকিট কাটা হবে। কোথায় আছে আমাকে বলুক তারা, দেখিয়ে দিক কোথায় আছে।’ আবার বলেছেন, ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা নিয়ে নেওয়ার কথা ইসলাম সমর্থন করে না বলে জানান ফখরুল। তিনি এমন বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এই কথাগুলো আমি এ জন্যই বলছি যে, এগুলো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কথাগুলো বলছে সবাই। এই কথাগুলো আজকে জনগণের সামনে আসা উচিত। বেশি করে আসা উচিত।’

এর আগে দলের আরেক নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছিলেন, শেখ হাসিনার আমলে ব্যাংক লুটকারী এস আলমদের উত্তরসূরি হয়েছে অনেকে। বড় বড় কথা বলে বিএনপির নামে কলঙ্ক লেপন করছে। টেন্ডারবাজি, পাড়া-মহল্লা টার্মিনালসহ নানা কিছু দখল করেছে একটি দল। পায়ের রগ কারা কাটে-তাদের চেনে জনগণ। জামায়াত নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করেন। ইসলাম মানে তো মোনাফেকি করা না। একটি দল নিজেরা মোনাফেকি করছে আর বিএনপিকে সবক দিচ্ছে; কলঙ্ক লেপনের চেষ্টা করছে। শেখ হাসিনার সঙ্গে আঁতাত করে সেদিন আপনারা এরশাদ কুলাঙ্গারের নির্বাচনে যাননি? আপনাদের একাত্তরের অর্জন কী? আপনারা একাত্তরের বিরোধিতা করেছেন।

এতিকে সর্বশেষ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, একটি দল ধর্মের নামে ট্যাবলেট বিক্রি করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘তারা (জামায়াতে ইসলামী) কেবলই বলছে যে, এখানে একটু মার্কাতে ভোট দিলে তরতরাইয়া জান্নাতে যাবে। তার আগে ইহকালে কীভাবে চলবো, এর কোনো বক্তব্য নাই। যেই দলের কোনা নীতি আদর্শ নাই, কোনো পরিকল্পনা নাই, শুধুমাত্র ধর্মের নামে একটা ট্যাবলেট বিক্রি করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করার পরিকল্পনা করছে তাদেরকে জনগণ ইতিমধ্যে চিনেছে, তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে।’

ছাড় দিচ্ছে না এনসিপি

জামায়াতে ইসলামী ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বিভাজন, ঘৃণা ও সহিংসতার রাজনীতি উসকে দিচ্ছে বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির অভিযোগ, ৫ আগস্ট পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে গ্রহণ করার পরিবর্তে তারা পুরনো সহিংস ও আধিপত্যবাদী রাজনীতির পথে ‘নতুন খেলোয়াড়’ হিসেবে আবির্ভূত হতে চাচ্ছে, যা দেশের জন্য অশুভ সংকেত। এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনের বিরুদ্ধে জামায়াতের দেওয়া এক বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এনসিপি এ কথা বলেছে। এনসিপির মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন দলের পক্ষে বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন।

তারেক রহমান যা বললেন

জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, কিছু কিছু মানুষ বা কোনো কোনো গোষ্ঠী বিভিন্ন জায়গায়, কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় বলে যে-অমুককে দেখলাম, তমুককে দেখলাম; এবার অমুককে দেখুন। যাদের কথা বলে অমুককে দেখুন, তাদেরকে তো দেশের মানুষ ১৯৭১ সালেই দেখেছে। ১৯৭১ সালে তারা তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে কিভাবে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। ঠিক যেভাবে পতিত স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার আগে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য। শুধু তাই নয়, তাদের সহকর্মীরা কিভাবে মা-বোনদের ইজ্জত পর্যন্ত লুট করেছিল। এই কথাটি আমাদেরকে মনে রাখতে হবে। উল্লেখ্য এটা ছিল সাম্প্রতিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারী জামায়াত সর্ম্পকে অত্যন্ত কঠোর ও নেতিবাচক বক্তব্য। 

কি ইঙ্গিত দিলেন তারেক রহমান ও শেষ কথা

জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এই বক্তব্য নিয়ে দলটির বেশ কয়েকজন নেতার সাথে কথা হয় দেশ প্রতিনিধির। তার মতে, এবারে তাকের রহমান তার বক্তব্যের এক জায়গায় যে বলেছেন, ‘কিছু কিছু মানুষ বা কোনো কোনো গোষ্ঠী বিভিন্ন জায়গায়, কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় বলে যে-অমুককে দেখলাম, তমুককে দেখলাম; এবার অমুককে দেখুন। ’-এতে অনেক কিছুর ইঙ্গিত রয়েছে। তিনি বলেন, তারেক রহমান আওয়ামী সরকারের পতনের পরপর জামায়াত সম্পর্কে বলেছিলেন প্রতিবেশী দলের সাহায্যে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। তার এই বক্তব্য নিয়ে বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। সর্বশেষ তারেক রহমান জামায়াত সম্পর্কে যে বক্তব্য দিলেন এতে স্পষ্ট হয়ে উঠছে মাঠের কোনো দল হয়তবা ‘ফোর মাইনাস’ নিয়ে গোপনে কাজ করছেন। ওয়ান-ইলেভেন’র সময় দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের ‘মাইনাস’ করার চেষ্টা হয়েছিল বলে শোনা যায়। বর্তমানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও তারেক রহমান দেশে না আসা নিয়ে মাইনাস ফোর ...নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনা চলছে। এনিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান ধরনের গুঞ্জন মাঠে চষে বেড়াচ্ছে। ঠিক এমন সময়ে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে জোরে সোরে বলা হচ্ছে অনেক দলকে দেশবাসী দেখেছে এখন জামায়াতকে দেখতে চায়। বলা হচ্ছে ‘সব দল দেখা শেষ জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশ’। কারো কারো বিশ্লেষণ হচ্ছে এমন বক্তব্য মাইনাস ফোর তত্ত্বকে উৎসাহিত করে বা কেউ কেউ ইন্ধন দিচ্ছে। কারো কারো মতে, জামায়াতের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সোসাল মিডিয়ার এ সময়ে এই ধরনের বক্তব্যে তারেক রহমানকে ক্ষুব্ধ করেছে। আর সে কারণে জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, কিছু কিছু মানুষ বা কোনো কোনো গোষ্ঠী বিভিন্ন জায়গায়, কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় বলে যে-অমুককে দেখলাম, তমুককে দেখলাম; এবার অমুককে দেখুন। যাদের কথা বলে অমুককে দেখুন, তাদেরকে তো দেশের মানুষ ১৯৭১ সালেই দেখেছে। ১৯৭১ সালে তারা তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে কিভাবে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। 

এদিকে এনসিপি’র পক্ষ থেকেও জামায়াত সর্ম্পকে বক্তব্যটি ইঙ্গিতপূর্ণ। কেননা তারাও বলেছেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে গ্রহণ করার পরিবর্তে তারা পুরনো সহিংস ও আধিপত্যবাদী রাজনীতির পথে ‘নতুন খেলোয়াড়’ হিসেবে আবির্ভূত হতে চাচ্ছে, যা দেশের জন্য অশুভ সংকেত।

শেয়ার করুন