২৫ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার, ০১:৪৩:০৯ অপরাহ্ন


নিরপেক্ষতা হারিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-১০-২০২৫
নিরপেক্ষতা হারিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস


যতই দল নিরপেক্ষ দাবি করুক নিজেদের ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বের অন্তর্বর্তী সরকার, সচেতন বা অচেতনভাবে নিজেদের নানা কার্যক্রমে নিজেদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতভাবে হারিয়েছে সরকার। জুলাই-আগস্ট ২০২৪ হত্যাকাণ্ড এবং ৮ আগস্ট পরবর্তী হত্যাকাণ্ড, মব সন্ত্রাস, মামলাবাণিজ্য বিষয়ে দ্বিমুখী নীতি সরকারের ভাবমূর্তি দেশ-বিদেশে দারুণভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে পূর্ববর্তী সরকারের মন্ত্রী সাংসদ, নেতাদের বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে যৌক্তিক সন্দেহ দেখা দিয়েছে। 

একই সঙ্গে পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে আদালত থেকে দীর্ঘ বিচারব্যবস্থায় দণ্ডিত অনেক সাজাপ্রাপ্ত এমনকি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। অনেক বিচারাধীন সন্ত্রাসীদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সময়ে এবং পরবর্তী সময়ে সংগঠিত পুলিশ বা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসমূহ এবং সাধারণ মানুষদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সরকারববস্থা গ্রহণ করেনি। 

অকারণে বিরুদ্ধ মতের অসংখ্য মানুষকে কারাবন্দি রাখা হয়েছে। সরকার ঘনিষ্ঠ অনেকে বিশেষত কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠলেও ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। এমনকি সরকার বিগত সরকারের সময়ে চলতে থাকা কিছু চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের (যেমন সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড) বিচারকাজ শেষ করেনি। সরকারের কর্মকাণ্ডে প্রতীয়মান যে একমাত্র শেখ হাসিনা সরকার এবং আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে দ্রুতবিচার যেন সরকারের একমাত্র প্রাধিকার। পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে। তড়িঘড়ি করে আইসিটি পুনর্গঠন করে বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে নেপথ্যের গোষ্ঠীর দূরভিসন্ধি প্রকাশিত হচ্ছে। এমনি এক পক্ষপাতদুষ্ট অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে কীভাবে নিরপেক্ষ, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে সংশয় দেখা দিয়েছে।

আইসিটি থেকে সম্প্রতি চাকরিরত এবং অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুম, খুনের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় পরিস্থিতি উষ্ণ হয়ে উঠেছে। মারাত্মক ফৌজদারি অপরাধে যে কোনো সামরিক এবং বেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া চালু থাকায় কোনো বাধা নেই। কিন্তু সরকার ঘোষিত সাধারণ নির্বাচন সময় সমাগত। এ সময়ে ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা কি না-সন্দেহের অবকাশ আছে। 

জানা গেছে, অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের সামরিক হেফাজতে বিশেষ ব্যবস্থায় বিশেষ কারাগারে রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নানা গুজবে সোশ্যাল মিডিয়া সয়লাব।

সরকারের বিরুদ্ধে কিছু দল এবং গোষ্ঠীকে অযাচিত সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ আছে। বর্তমানে সরকারের প্রণোদনায় গঠিত একটি রাজনৈতিক দলের নেতারাই সরকারের কিছু উপদেষ্টার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলছে।

বাংলাদেশের মত বহুধা বিভক্ত সমাজ ব্যবস্থায় জাতীয় স্বার্থেও ঐক্য হয় না। সরকারের সকল কাজ সবার মন পুত হবে না। তবুও অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত নিজেদের যতটা সম্ভব বিতর্ক মুক্ত থেকে নিরপেক্ষ থাকা। কোন নির্বাচিত সরকার পারবে না দেশে সংগঠিত সকল হত্যাকাণ্ড, মব সন্ত্রাস দীর্ঘদিন বিচারের বাইরে রাখতে। সময় সবকিছুর সমাধান দেবে।

আশা করি, সরকারপ্রধান অন্তত দুর্নীতি এবং পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠা উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে নিজেদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা। না হলে কিন্তু ফেব্রুয়ারি ২০২৬ নির্বাচন প্রক্রিয়া দারুণ বাধাগ্রস্ত হবে।

শেয়ার করুন