সায়রভিলে প্রস্তাবিত মসজিদ নির্মাণ পরিকল্পনা
নিউজার্সির সায়রভিল শহরে মসজিদ সাদারের পক্ষ থেকে শহর প্রশাসন ও প্ল্যানিং বোর্ডের বিরুদ্ধে মসজিদ নির্মাণ পরিকল্পনা বাতিল করায় গত ২১ নভেম্বর নিউজার্সির ফেডারেল আদালতে বৈষম্যের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। ৭৩ পৃষ্ঠার এই মামলায় দাবি করা হয়েছে যে বোর্ড স্থানীয় কিছু বাসিন্দার প্রকাশ্য বৈরিতা ও ধর্মীয় পক্ষপাতদুষ্টতার প্রভাবেই মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প প্রত্যাখ্যান করেছে। মামলায় বোর্ডকে রিলিজিয়াস ল্যান্ড ইউজ অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনালাইজড পারসনস অ্যাক্ট (আরএলইউআইপিএ) লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক ভূমি ব্যবহার নীতিমালা গ্রহণকে নিষিদ্ধ করে। মসজিদ সাদারের আবেদন নিয়ে ১৩ মাসে মোট আটটি জনশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানির মন্তব্য অনুযায়ী মসজিদ কর্তৃপক্ষ চারবার নকশা সংশোধন করে ভবনের আয়তন ৩৬ হাজার ৫৫২ বর্গফুট থেকে ২৫ হাজার ৩৬৩ বর্গফুটে কমিয়ে আনে। তাদের হিসেব অনুযায়ী ১১৩টি পার্কিং স্পেস প্রয়োজন হলেও চূড়ান্ত পরিকল্পনায় ১০৯টি পার্কিং স্পেস রাখা হয়। এর মধ্যে ৪৫টি সামনের অংশে এবং ৬৪টি ভবনের নিচতলায়। তবে বোর্ডের প্রকৌশলী দাবি করেন, ভবন ধারণক্ষমতা অনুযায়ী ৩৭৭টি পার্কিং স্পেস বাধ্যতামূলক। অতিরিক্ত গাড়ির চাহিদা মেটাতে একটি বন্ধ হয়ে যাওয়া হটডগ স্ট্যান্ডের ২২টি পার্কিং ব্যবহার ও তিন ব্লক দূরের সামসেল আপার এলিমেন্টারি স্কুলের পার্কিং ব্যবহারের প্রস্তাবও বোর্ড আমলে নেয়নি।
মামলায় বলা হয়েছে, মসজিদের প্রতি বোর্ডের আচরণ ছিল অস্বাভাবিকভাবে কঠোর ও অযৌক্তিক। যেমন মসজিদের ভেতরকার দেয়াল-থেকে-দেয়াল কার্পেটের বর্ণনা চাইতে থাকা বা ধর্মীয় আচার নিয়ে প্রশ্ন তোলা। এমনকি যাতায়াত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শুক্রবারের জুমা, রমজান ও বিশেষ অনুষ্ঠানের সময় অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগের প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়ার পরও প্ল্যানিং বোর্ড ২৪টি শর্ত পূরণ সত্ত্বেও প্রকল্পটি বাতিল করে।
মসজিদ সাদার কমিটি আরো অভিযোগ করেছে, সায়রভিলের জোনিং নীতিমালায় উপাসনালয়ের প্রতি বৈষম্যমূলক বিধান রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, উপাসনালয়ের ক্ষেত্রে তিনটি আসনে একটি পার্কিংয়ের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও শপিং সেন্টারের ভেতর থিয়েটারের জন্য চার আসনে একটি পার্কিং যথেষ্ট ধরা হয়। এটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, সায়রভিলে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের বৈরিতা রয়েছে। এর প্রমাণ হিসেবে ১৯৯৩ ও ২০১৪ সালে হিন্দু মন্দির শ্রী দ্বারকাধীশ মন্দিরকে ঘিরে করা দুটি মামলার কথা তুলে ধরা হয়। উভয় ক্ষেত্রেই শহর প্রশাসনের সঙ্গে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর মন্দির কর্তৃপক্ষ জয়ী হয়। মসজিদ সাদারের অভিযোগ, মন্দিরের মতো তাদের আবেদনেও জনসাধারণের মধ্যে স্পষ্ট বৈষম্যমূলক মন্তব্য শোনা গেছে, যা শুনানিতে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। এক জনসভায় কেউ প্রশ্ন করেন, মসজিদের চূড়ায় থাকা চাঁদের প্রতীক, রুট ৯ থেকে দৃশ্যমান হবে কি না, সঙ্গে সঙ্গে আরেকজন কটাক্ষ করে বলেন, তাহলে তো আর সূর্য দেখাই যাবে না! আবার আরেকজন অভিযোগ করেন, ইন্ডিয়ানদের মতো তাদের ছুটির সময় বাইরে থেকে লোক আসবে, রমজানে দূরদূরান্ত থেকে লোক আসবে। ফলে এটি সম্প্রদায়গত বৈরিতা প্রকাশ করে।
মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানায়, সায়রভিল ও আশেপাশে প্রায় ২ হাজার ৫০০ মুসলিম বসবাস করেন এবং নিকটতম মসজিদটি সাউথ রিভারে অনেকের জন্য দূরবর্তী। ২০২১ সালে তারা ২১২-২১৬ আর্নস্টন রোডের একটি পুরোনো আইন অফিসে নামাজের আয়োজন শুরু করেন। প্রথমে প্রায় ৬০ জন উপস্থিত থাকলেও পরে মুসলমানদের জানাজানি হওয়ায় উপস্থিতি দ্বিগুণ হয়। নামাজের পর আলাপের সুবিধার্থে বাইরে কিছু টেন্ট স্থাপন করা হলে শহরের নির্মাণ কর্মকর্তা তা ‘অনুমতিহীন স্থাপনা’ বলে জরিমানা আরোপ করেন। প্রথমে ১ লাখ ১২ হাজার ডলার, পরে আবারো ৬ লাখ ৯২ হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করা হয়। যদিও ভবনের মালিক শামীম প্রোপার্টিজ প্রথম জরিমানাটি কমিয়ে পরিশোধ করেন, শহর কর্তৃপক্ষ পরপর স্টপ-ওয়ার্ক অর্ডার জারি করতে থাকে।
২০২৩ সালে আদালত রায় দিয়ে ভবনটিতে উপাসনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর মুসল্লিরা সেন্ট বার্নাডেট চার্চের জিমে এবং পরে পার্লিনের একটি ভাড়াকৃত ফায়ার হলে নামাজ আদায় করতে বাধ্য হন। মসজিদ সাদারের দাবি-এসব ভবন স্থায়ী মসজিদ হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নয়। কারণ এগুলো কেবলা-উন্মুখ নয় এবং মসজিদের বৈশিষ্ট্য যেমন গম্বুজ, মিনারএসব কিছু নেই। ২০২৩ সালের আগস্টে সংশোধিত আবেদন প্ল্যানিং বোর্ডে স্থানান্তর করা হয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আবেদনটি অসম্পূর্ণ বলে বিবেচিত হওয়ায় শুনানি শুরু হয় এপ্রিল মাসে। ছয় মাস পর জুন ২০২৪-এ বোর্ড প্রকল্পটি বাতিল করে এবং ৩ ডিসেম্বর সেই সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক রেজল্যুশন গ্রহণের কথা। অপরদিকে শহর পরিষদের ১০ নভেম্বরের সভায় কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট ডোনা রবার্টস একই জমি ওপেন স্পেস হিসেবে কিনে নেওয়ার প্রস্তাব করলেও অন্য কাউন্সিলররা সমর্থন না করায় তা বাতিল হয়ে যায়। মেয়র কেনেডি ও’ব্রায়েন মন্তব্য করেন, শহরের আইনগত লড়াইয়ে সাফল্যের হার খুব ভালো নয়, যা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে।
মসজিদ সাদার কমিটি বলছে, এই সমস্ত ঘটনা সায়রভিলের মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। শহর প্রশাসন এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। মসজিদ কর্তৃপক্ষ আশা করছে, আদালত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে এবং সম্প্রদায়টি তাদের নিজস্ব ধর্মীয় উপাসনালয় নির্মাণ করতে পারবে।