২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৪:৪৪:৪৪ পূর্বাহ্ন


চলে গেল আরো একটি বিবর্ণ বিজয় দিবস
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-১২-২০২৫
চলে গেল আরো একটি বিবর্ণ বিজয় দিবস


দুঃখ, ক্ষোভ এবং হতাশার সঙ্গে দেখলাম বাংলাদেশের গৌরব, গর্ব আর অহংকারের বিজয় দিবস অনেকটা প্রাণহীন বিবর্ণভাবেই চলে গেল। সাধারণ মানুষের আনন্দ, উচ্ছ্বাসের কমতি না থাকলেও বিজয় দিবসে জাতীয় প্যারেড না হওয়া, মুক্তিযুদ্ধের মহানায়কদের নাম অনুচ্চারিত থাকা, কিছু কিছু সোশ্যাল মিডিয়ায় মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মকে অবমাননার দৃষ্টতা আমাদের দারুণভাবে আহত করেছে। অনেকে আবার ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পরাজিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। দেখলাম কিছু ভুঁইফোঁড় মানুষ ১৪ ডিসেম্বরে বুদ্ধিজীবী হত্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

আমরা মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ অসামান্য গৌরব আর অহংকারের। দাম দিয়ে কেনা স্বাধীনতা কারো দয়ার দান নয়। নিঃশঙ্ক চিত্তে স্বীকার করবো স্বাধীনতা সংগ্রামের সফলতার জন্য ভারতের জনসাধারণ এবং তৎকালীন সরকারের সর্বাত্মক সহায়তার কথা, পাশাপাশি স্মরণ করবো সোভিয়েট রাশিয়ার সমর্থনের কথা। একই সঙ্গে এই সময়ে বাংলাদেশে গণহত্যায় মত্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীনের ভূমিকার কথাও স্মরণে আছে। বুঝতে অসুবিধা নয় স্বাধীনতার ৫৪ বছর কেন কীভাবে, কোন প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি পাল্টে গেল? এখন যারা রাজনীতিতে সক্রিয় তাদের কাছে ভারত বিরোধিতা, আওয়ামী লীগ ভীতি প্রধান কৌশল। কিন্তু সব কিছু পেরিয়ে বিজয় দিবস, বিজয় মাসে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধারা কেন অবমূল্যায়িত? রাজপথে যখন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি উপস্থিত ঠিক তখনি ১৯৭১ এ পরাজিত শক্তির স্থানীয় সহযোগী দলের উপস্থিতি উজ্জীবিত। জানি রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। তাই বলে বর্তমান প্রজন্মকে কেন বাংলাদেশের সর্ব যুগের শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ মূল্যায়ন নেই। স্বাধীনতা বিরোধী, দেশবিরোধী একটি গোষ্ঠী বাংলাদেশকে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টিতে উসকানি দিচ্ছে।

আমরা জানি, জুলাই আগস্ট ২০২৪ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের সব স্মারক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, মেহেরপুরে আম্রকাননের স্মারক, বীরশ্রেষ্ঠদের স্মারকসহ অসংখ্য সড়ক পরিকল্পিত উপায়ে ধ্বংস করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারের লাঞ্ছিত করে গলায় পরানো হয়েছে জুতার মালা। এমনকি অনেক জায়গায় পরলোকগত মুক্তিযোদ্ধাদের কবর ধ্বংস করা হচ্ছে। এই সব দুর্ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকারের মেটিকুলাস ডিজাইনের অংশ কি না বোধগম্য নয়।

বাংলাদেশে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর বরাবর উৎসবের মাস হিসাবে পালিত হয়ে আসছিল। মাস জুড়ে বিজয় মেলা অনুষ্ঠিত হতো। প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের গুরুত্বের সঙ্গে স্মরণ করা হতো। বলবো না এবারে একেবারে হয়নি। কেমন জানি এবার সব কিছুতেই বিবর্ণ মনে হয়েছে। নানাভাবে ২৪কে ৭১-এর প্রতিদ্বন্দ্বী বানানোর অশুভ চেষ্টা হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকার এখন ফেব্রুয়ারি ২০২৬ ঘোষিত সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সর্বাত্মক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আশা করি ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে এসে মুক্তিযুদ্ধকে যথাযথ অবস্থানে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবে। এবারেও ১৬ ডিসেম্বরের বৈরী সময়েও সাধারণ মানুষদের স্বতঃস্ফূর্ত সক্রিয়তা দেখা গেছে সেটিও কিন্তু আগামী সময়ে ক্ষমতায় আসা রাজনৈতিক শক্তির জন্য সতর্ক বাণী দিয়েছে।

শেয়ার করুন