বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ থেকে শুরু করে সর্বত্রই এখন আলোচনা কূটনৈতিক পাড়ার লোকদের প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একাধিক মন্তব্য। বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা জোটের বেশ দৌড়ঝাঁপ রয়েছে। বরাবরই জাতীয় নির্বাচন এলে বাংলাদেশে যেভাবে বিরোধ তৈরি হয় সেটা নিষ্পত্তির জন্য পশ্চিমা জোটের বাংলাদেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলোতে সরকারি ও বেসরকারি দুই পক্ষের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা যখন এক টেবিলে বসে দেশের রাজনীতিবিদরাই সমাধানে ব্যর্থ হন, তখনই সমঝোতা করতে কূটনীতিকের শরণাপন্ন হন। যুগ যুগ ধরে সে সুযোগ নিয়ে আসছেন তারা। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। দুই মেরুতে দেশের শীর্ষ দুই রাজনৈতিক দল। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে যখন নির্ঘাত সংঘাত, ঠিক তখনই দেশের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে দেশের শান্তি-সমৃদ্ধির কথা চিন্তা করেই একটা সমঝোতার উদ্যোগ নিয়ে দ্বারস্থ হচ্ছেন সবার। চেষ্টা করছেন একটা সমঝোতার। কিন্তু এমন কাজ করতে যেয়ে ঢাকায় অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতরা ব্যস্ততা দেখাচ্ছেন, ঠিক সে মুহূর্তেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রীর অতিকথন বেশ আলোচিত হচ্ছে।
মন্ত্রীরা বলেছেন, পৃথিবীর কোথাও দলবেঁধে কূটনীতিকরা এভাবে কথা বলেন না, বিবৃতি দেন না, বাংলাদেশেই কেবল এমনটা হচ্ছে। এটাও ঠিক, কিন্তু সমস্যা হলো বাংলাদেশ যখন অন্য দেশের তুলনায় দরিদ্র একটি দেশ। সম্প্রতি বাংলাদেশে যেসব ঘটনা ঘটছে, সেটাও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। বিশেষ করে নির্বাচন কার অধীনে হবে, সেটা নিয়ে যখন ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল ঐকমত্যে পৌঁছতে না পেরে আবারও হরতাল, ধর্মঘট, মানুষ পুড়িয়ে মারা, বাসে পেট্রল বোমা নিক্ষেপ প্রভৃতি সংঘাতপূর্ণ পরিবেশের দিকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
ভিনদেশিরা বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ চাওয়ার অর্থ এ দেশে তাদের অনেক স্বার্থ জড়িত, রয়েছে ইনভেস্ট। এখান থেকে ব্যাপক পরিমাণ গার্মেন্টস পণ্য তৈরি করে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের দেশে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপজুড়ে বাংলাদেশের বড় একটা শ্রমিক মার্কেটও। সব মিলিয়ে একটি দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ রয়েছে দুইয়ের মধ্যে। বাংলাদেশও নির্ভরশীল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদেশসমূহের ওপর। সেখান থেকে আসা রেমিট্যান্স, তৈরি পোশাকের বাজার থেকে উপার্জিত ডলার বাংলাদেশে না এলে দেশের অর্থনীতি চরম সংকটের মধ্যেই পড়বে এ কথা বাস্তব সত্য। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জোটের কিছুটা হলেও দায়বদ্ধতা রয়েছে বৈকি! যা হয়তো উন্নতশীল (ভারত, চীন, রাশিয়া, ইরান বা খোদ ওইসব দেশ) অনেক দেশেরই প্রয়োজন হয় না। তাই সে দেশে দলবেঁধে বিবৃতি বা মাতব্বরি (পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষ্য) করতে তারা যানও না।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো দেশের নাম উচ্চারণ না করে বলেছিলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল, কীভাবে? তখন তো গ্যাস বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। তাহলে এখন তারা দেশ বিক্রি করবে, নাকি সেন্টমার্টিন বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে আসতে চায়? তিনি বলেন, আমি এতোটুকু বলতে পারি, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা, আমার হাত থেকে এই দেশের কোনো সম্পদ কারো কাছে বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চাই না। ওই গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় থাকতে পারতাম। আর এখনো যদি আমি বলি, ওই সেন্টমার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কাউকে লিজ দেবো, তাহলে আমাদের ক্ষমতায় থাকতে কোনো অসুবিধা নেই। আমি জানি সেটা। কিন্তু আমার দ্বারা সেটি হবে না। এরপর সেন্টমার্টিন নিয়ে সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছিলেন মহাজোটের শীর্ষ দুই নেতা রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিটা স্পষ্ট। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব। কারোর সঙ্গেই বৈরিতা নয়। এ নীতিতে বাংলাদেশ ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের মাথার ওপর চাপিয়ে দেয়া সত্ত্বেও কোনো বিরোধে জড়ায়নি। বরং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদারতা দেখিয়ে বলেছেন, ১৬ কোটি মানুষকে যদি আমি খাওয়াতে পারি, তাহলে আরো ১২ লাখ মানুষকেও আমি খাওয়াতে পারবো। প্রধানমন্ত্রীর এ উদারতা ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। সেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বর্তমান সময়ের কূটনীতিকদের নিয়ে প্রকাশ্যে এমন সব বক্তব্য কিছুটা হলেও দেশের ইমেজ ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে আলোচনা টেবিলের কেন্দ্রবিন্দুতে।
কী বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্যরা?
মূলত গত ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা ১৭ আসনের উপনির্বাচন। দিনভর সুষ্ঠু ওই নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর প্রচণ্ড হামলা হয়। গুলশানের মতো রাজধানীর এক অভিজাত এলাকার একটি কেন্দ্রে ওই প্রার্থীকে রাস্তায় ফেলে বেড়ধক পেটানো হয়। কিল-ঘুসি মেরে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন, বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে এমন ঘটনায় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এ ঘটনায় অন্যদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তিনি এটাও বলেন, যারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন, তারা আমাদের ভালো চান না। পুলিশ ওই হামলায় অংশগ্রহণকারী প্রায় সবাইকে আটকে সামর্থ্য হয়েছে। কিন্তু ওই ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা হয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ অনেকেই বিবৃতি দেন। একই সঙ্গে বিবৃতি দেন ঢাকায় অবস্থিত ১২ কূটনীতিক। এতেই ক্ষিপ্ত হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
‘বিদেশিরা নিজেদের এ দেশের সম্রাট মনে করে’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ২১ জুলাই, স্থান সিলেট
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করায় কারো নাম উল্লেখ না করে বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্দেশ্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, “বিদেশিরা নিজেদের এ দেশের সম্রাট মনে করে।” গণমাধ্যমে অতি প্রচারের কারণে কূটনীতিকরা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলে ‘মজা পায়’ বলেও মনে করেন মন্ত্রী।
এদিন সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সম্মাননা পদক প্রদান অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মোমেন বলেন, “পৃথিবীর আর কোথাও রাষ্ট্রদূতরা অ্যাকটিভিস্টদের মতো দলবেঁধে মন্তব্য করে বেড়ায় না।” পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২১ জুলাই শুক্রবার বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৪০ জন মারা গেল। একটা দেশও কথা বলেনি। আমাদের দেশে কে, কী করলো, সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার। এটি অভ্যন্তরীণ বিষয়ের ওপর হস্তক্ষেপ, যা ভিয়েনা কনভেশনশনের ধারেকাছেও নেই। বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ বলে তারা এটা করে।”
জোটবদ্ধ হয়ে বিবৃতি দেওয়া ভিয়েনা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ২০ জুলাই, স্থান ঢাকা
এদিন ২০ জুলাই দুপুরে সচিবালয়ে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) প্রকাশিত ‘সাংবাদিকের স্মৃতি ভাষ্যে বঙ্গবন্ধু’ সংকলন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘১৩টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা যেভাবে বিবৃতি দিয়েছেন, রাজনৈতিক দলের মতো এমন জোটবদ্ধ হয়ে বিবৃতি দেওয়া রাষ্ট্রদূতদের আচরণবিধির যে ভিয়েনা কনভেনশন আছে, সেটির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমি বন্ধুরাষ্ট্রগুলোকে অনুরোধ জানাব ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলার জন্য।’ তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, ভারত কিংবা পাকিস্তানে যখন সহিংসতা হয়, কিংবা আশপাশের অন্য দেশে যখন সহিংসতা হয়, সেখানে রাষ্ট্রদূতরা এ রকম বিবৃতি দেন না। আমাদের দেশে কেন এ ধরনের বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে? আসলে আমাদের কিছু রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের কেউ কেউ এগুলো দেওয়ার জন্য উসকানি দেয়।
সুতরাং রাষ্ট্রদূতদের এ ব্যাপারে প্রশ্ন তোলার আগে তাদের যারা “প্রোভোক” করে, তারা এই ক্ষেত্রে দায়ী। তবে অবশ্যই কূটনীতির বিষয়ে রাষ্ট্রদূতদের ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলা প্রয়োজন।’
‘অ্যাকটিভিস্ট ডিপ্লোম্যাট’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯ জুলাই, স্থান ঢাকা
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২টি দূতাবাস বিবৃতি দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। যুক্তরাষ্ট্রে মানুষ মারা গেলে তারা এভাবে বিবৃতি দেয় কি না, সে প্রশ্ন ও তিনি করেছেন।
এদিন ১৯ জুলাই বিকেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তার দপ্তরে হিরো আলম প্রসঙ্গে বিদেশি দূতাবাসের বিবৃতিদান প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, “আমি এ বিষয়ে জানি না। আমি অ্যাকটিভিস্ট ডিপ্লোম্যাটদের সম্পর্কে বলতে চাই, আমেরিকায় যখন তখন লোক মেরে ফেলে, তখন কি তারা বিবৃতি দেয়, জাতিসংঘ কি বিবৃতি দিয়েছে? তারা কি বলেছে যে, আমেরিকাতে লোক মারা যায় কেন?’
এ নিয়ে ক্ষুব্ধ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘কেমব্রিজে ফয়সাল নামের একজন বাংলাদেশি ছেলে মারা গেল। জাতিসংঘ কি বলেছে, ওই ছেলের মৃত্যুর তদন্ত কত দূর এগোলো কিংবা রাষ্ট্রদূতরা কি দলবেঁধে কোনো বিবৃতি দিয়েছে?’ এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা কেন তাদের জিজ্ঞাসা করেন না? যখন তাদের দেশে লোক মারা যায়, তখন কেন বিবৃতি দেয় না আর বাংলাদেশ হলেই মগের মুল্লুক পাইছে ওরা।’
এভাবে বিবৃতি দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আর কোথাও হইচই করে কেউ? আমাকে একটি রিপোর্ট দেন, সেখানে একজন লোক মারা যাওয়ার পরে একটি বিবৃতি দিয়েছে। কিছুদিন আগে ফ্রান্সে কতগুলো লোক আক্রান্ত হলো। ওরা কি দলবেঁধে বিবৃতি দিয়েছিল? কাজেই কেন শুধু বাংলাদেশ হলে তারা বিবৃতি দেয়?’ এখন ওই সব বিবৃতি বন্ধ করার সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এমন হতে পারে, এটিতে কেউ জড়িত ছিল, যা আমরা জানি না। হয়তো কেউ আমাদের আগামী নির্বাচন চায় না, একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য, বানচাল করার জন্য অকাম-কুকাম শুরু করছে।’
বিদেশিরা এলেই অনেকে অনেক কিছু মনে করেন বলে মন্তব্য করেন আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন সম্পর্ক উন্নতি করতে চান বলে একটির পর একটি দল পাঠাচ্ছে। আর আপনারা সেখানে খালি সন্দেহ খোঁজেন। আমার সঙ্গে ব্লিঙ্কেন সাহেবের বৈঠক হয়েছে কীভাবে সম্পর্ক উন্নয়ন করা যায়, অন্য কোনো বিষয় নয়। বিদেশ থেকে কেউ এলে আপনারা খালি ষড়যন্ত্র শুরু করেন, এটি বন্ধ করেন।’
জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধিকে তলব
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ২০ জুলাই, স্থান ঢাকা
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় এক টুইট বার্তায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। তার এই উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি সরকার। এ কারণে বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) জাতিসংঘের ঢাকা অফিসে গোয়েন অনুপস্থিত থাকায় তার পরিবর্তে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সমন্বয়কারী শেলডন ইয়েটকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে অসন্তোষের কথা জানানো হয়। একই সঙ্গে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য তাকে সতর্ক করা হয় বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আসাদ আলম সিয়াম ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সমন্বয়কারীকে তলব করে সরকারের অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তলবের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়টি জানি না। কিন্তু জাতিসংঘের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হলো তারা আমাদের উন্নয়নের অংশীদার। তারা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এম এ মোমেন বলেন, ‘দুনিয়ার বহু জায়গায় লোক মারা যায়। ভারতে প্রায় ৪৮ জন মারা গেছে। বিভিন্ন দেশে মারা যায়।’ ‘অন্য দেশে যখন লোক মারা যায়, তখন কি জাতিসংঘ টুইট করে? আমাকে সেই দৃষ্টান্ত আগে দেখাক’, বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এর আগে হিরো আলমের ওপর হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘সহিংসতামুক্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ সবার মৌলিক অধিকার এবং সেটিকে রক্ষা করা উচিত।
যুক্তরাজ্যে কী নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন?
ওবায়দুল কাদের ২০ জুলাই, স্থান ঢাকা
ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুকের কাছে যুক্তরাজ্যের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে জানতে চেয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনার একপর্যায়ে এমন পাল্টা প্রশ্নের মুখে পড়েছেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুক। নির্বাচনের সময় তাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন কি না কিংবা পার্লামেন্ট বিলুপ্ত হয় কি না; ব্রিটিশ হাইকমিশনারের কাছে জানতে চেয়েছেন কাদের। বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) রাজধানীর বনানীতে সেতু ভবনে সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠকে এ প্রশ্ন করেন ওবায়দুল কাদের। দেশের সার্বিক অবস্থা বিশেষ করে নির্বাচন ইস্যুতে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত কথা বলতে গেলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনাদের (ব্রিটেন) নির্বাচন কেমন হয়, হাউস অব কমন্স কি বিলুপ্ত হয়, প্রধানমন্ত্রী কি পদত্যাগ করেন?’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে যা বলেছি, আমেরিকানদের সঙ্গে যে কথা হয়েছে, ব্রিটিশ হাইকমিশনারকেও একই কথা বলেছি। আমাদের বক্তব্য অভিন্ন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির যে দাবি, সেটা নিয়ে তাদের (ব্রিটিশ) কোনো বক্তব্য নেই। তারা প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন চায়। এ সময় বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে অদ্ভুত ও উদ্ভট বলেও আখ্যা দেন তিনি।
পশ্চিমা দেশসমূহ কতটা নির্ভরশীল বাংলাদেশ এর এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির তিন-চতুর্থাংশ বা ৭৬ শতাংশই হয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ ১২টি দেশে। এই দেশগুলোর প্রতিটিতে রপ্তানির পরিমাণ ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। এর মধ্যে নতুন করে বিলিয়ন ডলার ক্লাবে যুক্ত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার নাম। ফলে বিভিন্ন কারণেই পশ্চিমাদেশসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ঘনিষ্ঠতা বেশি।