২০ মে ২০১২, সোমবার, ৬:৪৯:৩৭ পূর্বাহ্ন


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন
নির্বাচনকালীন সরকার হাবে না, এ সরকারই কন্টিনিউ করবে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-১১-২০২৩
নির্বাচনকালীন সরকার হাবে না, এ সরকারই কন্টিনিউ করবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


‘নির্বাচন হবেই, কে চোখ রাঙালো কে চোখ বাঁকালো তাতে যায় আসে না। নির্বাচনকালীন কোনো সরকার গঠিত হচ্ছে না। বরং তফশিল ঘোষণার পর এ সরকারই নিয়মমাফিক তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। নতুবা তো সব কাজ স্থবির হয়ে যাবে। সেটা উচিৎ হবে না। অন্যান্য দেশে সংসদীয় গনতন্ত্রে যা রয়েছে তেমনই হবে’ মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে যোগদান উপলক্ষে সস্প্রতি বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে তিনদিনের সরকারি সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন কোনো সহিংসতা করে লাভ হবে না। ২০১৩ সালে পারেনি, ২০১৮ সালে পারেনি। বিএনপি প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘মাঝখানে তারা (বিএনপি) কিছুটা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করছিল। আমাদের সরকার তাদের কোনো বাঁধাও দেয়নি। তাদের ওপর একটি শর্ত ছিল তারা যেন অগ্নিসন্ত্রাস-ভাঙচুর, এগুলো না করে। তারা যখন সুস্থ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি করছিল, মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসও ধীরে ধীরে অর্জন করতে শুরু করেছিল। কিন্তু ২৮ তারিখে তাদের যেই ঘটনা, বিএনপির যেসব ঘটনা ঘটাল, বিশেষ করে মাটিতে ফেলে পুলিশকে যেভাবে কোপাল, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, এই ঘটনার পরে জনগণের ধিক্কার ছাড়া বিএনপির আর কিছু জুটবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়েছে, সেখানেও পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে। আজকে ইসরায়েল ফিলিস্তিনির ওপর যেভাবে হামলা করছে, এখানে হাসপাতালে বোমা হামলা করল, নারী-শিশুদের অত্যাচার করেছে, তাদের সবকিছু বন্ধ করে রেখে দিয়েছে, আমি তফাত কিছু দেখতে পারছি না। আমরা এর নিন্দা জানাই। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকা- করে নিজেরাই পালাল, পালিয়ে গিয়ে এখন আবার অবরোধের ডাক। কীসের অবরোধ? কার জন্য অবরোধ? যখন সারা বিশ্ব বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে প্রশংসা করছে তখন তাদের কাজ হলো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। বাংলাদেশের এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, দেখাবে বাংলাদেশে কিছু হয়নি। তাদের হামলার শিকার একদিকে পুলিশ, আর হচ্ছে সাংবাদিক। এদের ওপর তারা হামলা চালিয়েছে। সেগুলো কারা করেছে, তাদের নাম ডাক....। তারা তো প্রকাশ্যে করেছে। শুধু তাই নয়, গতকালকে তারা লালমনিরহাটে আমাদের যুবলীগের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এভাবে হত্যা করা আর মানুষের সম্পদ নষ্ট করা, আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করাই তাদের চরিত্র। হঠাৎ কেন সাংবাদিকদের ওপর তারা চড়াও হলো? সাংবাদিকরা তাদের পক্ষে ভালো ভালো নিউজ দিচ্ছিল। টকশোতে ভালো ভালো কথা। বরং সরকারের দোষটাই সাংবাদিকরা বেশি দেখে। তাহলে তাদের রাগটা কেন সাংবাদিকদের ওপর হলো? সেটাই বুঝতে পারলাম না।

সংলাপ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘খুনিদের সঙ্গে কোনো সংলাপ বা আলোচনা হবে না এবং বাংলাদেশের জনগণও তা চায় না। আর আগামী জাতীয় নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে এবং কেউ তা ঠেকাতে পারবে না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশকে হত্যা, সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। আমি বলব এসব কাজ থেকে তাদের বিরত থাকা উচিত। এতে রাজনৈতিক ভাবে তাদেরই ক্ষতি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, আর নির্বাচনের ব্যাপারে যেটা আমার ধারণা, এরা আসলে নির্বাচন চায় না। এরা একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। তিনি এসব সন্ত্রাসিদের উচিত শিক্ষা দেওয়াও প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘তারা জঘন্য কাজ বন্ধ না করলে তাদের এই ধরনের অপরাধমূলক কাজের পরিণতি ভোগ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যেই সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ জারি করা হয়েছে।

‘শঠের সঙ্গে শঠের মতো আচরণ করতে হবে’, এমনটা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘তারা (বিএনপি) এখানে সেখানে চোরাপথে গিয়ে একেকটা গাড়ি পোড়াচ্ছে। তাদেরকে চিহ্নিত করে ও গ্রেফতার করে যথাযথ শাস্তি দেওয়া হবে। আর যে হাত দিয়ে গাড়ি পোড়াবে, আমার তো মনে হয় যে গাড়ি পোড়াবে আর যে ধরা পড়বে, তার হাতও ওই আগুন দিয়ে পোড়ায়ে দেওয়া উচিত। তাহলে তাদের শিক্ষা হবে, না হলে শিক্ষা হবে না।

এ সময় দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, দেশবাসীকে সজাগ ও সচেতন থাকার আহ্বান জানাই। যারা এসব অগ্নিসন্ত্রাস করছে তাদের ধরিয়ে দিন। এর আগে তারা যখন শুরু করেছে তখনও মানুষ ঠেকিয়েছে। এবারও মানুষই ঠেকাবে।

২৮ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে ঢাকায় ঘটে যাওয়া ঘটনায় সরকারের পক্ষে গেল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাভ-লোকসানের ব্যাপার না। মানুষকে হত্যা করছে, মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে। বরং আমাদের লাভ-লোকসান না জিজ্ঞেস করে বিএনপিকে জিজ্ঞেস করা দরকার- তারা যে গুন্ডামি-সন্ত্রাস ও অগ্নিসন্ত্রাস করে যাচ্ছে তাতে তারা কতটুকু লাভবান হচ্ছে? এটা আপনারা (প্রশ্ন করা সাংবাদিককে প্রধানমন্ত্রী) বরং বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞেস করুন, এসব করে তারা কী অর্জন করছে। 

নির্বাচনকালীন সরকারের কলেবর যা আছে তাই থাকার ইঙ্গিত দিয়ে এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আরপিও অনুযায়ী যখনই নির্বাচনীর তারিখ ঘোষণা হবে এবং নমিনেশন সাবমিট করা হবে তখন থেকেই মন্ত্রীরা আর কোনো সরকারি সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন না। তখন একজন প্রার্থী হিসেবে তাদেরকে ভোট চাইতে হবে।  তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচারের সময় কোনো মন্ত্রী তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবেন না। কোনো রকম সরকারি সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন না। এটাই নিয়ম। কিন্তু সরকার তো থেমে থাকবে না। সরকারি দৈনন্দিন যে কাজগুলো (রুটিন ওয়ার্ক) সেগুলো কিন্তু করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আকার ছোট করলে অনেক মন্ত্রণালয়ের কাজ আর হয় না। সেগুলো বাধাগ্রস্ত হয়। সেগুলো যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, উন্নয়নের ধারা যাতে অব্যাহত থাকে আমাদের সেটাই প্রচেষ্টা।

আওয়ামী লীগ থাকলে দেশের উন্নতি হয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়ন তো শুধু মেট্রোরেল আর টানেল দিয়ে না, যান না গ্রামে- ঘুরে আসুন না। উন্নয়নটা আমি তৃণমূল থেকে করে দিয়েছি। কোন বিদেশি শক্তি চোখ রাঙাচ্ছে এই প্রশ্ন যিনি রেখেছিলেন, তাকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন, আপনাকে আমার বলতে হবে কেন?  আপনারা বোঝেন না? ডায়ালগ করতে হবে! ট্রাম্প সাহেব আর বাইডেন কি ডায়ালগ করতেছে? যেদিন ট্রাম্প সাহেব আর বাইডেন ডায়ালগ করবে, সেদিন আমি করবো। 

শেয়ার করুন