২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৪:৪৪:৪৮ পূর্বাহ্ন


সুপ্রিম কোর্ট শিকাগোতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের অনুমতি দেয়নি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-১২-২০২৫
সুপ্রিম কোর্ট শিকাগোতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের অনুমতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট


যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শিকাগো এলাকায় ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের সরকার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের আপত্তির মুখে ২৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দেওয়া আদালতের এই প্রাথমিক আদেশে ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত হয়ে গেল। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরে সেনা বা ন্যাশনাল গার্ড ব্যবহারের উদ্যোগও বড় ধরনের আইনি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশ এখনও চূড়ান্ত নয়, তবে এতে আপাতত প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সীমা স্পষ্টভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। শিকাগো এলাকায় সাম্প্রতিক অভিবাসন অভিযান ঘিরে ব্যাপক ধরপাকড়, বিক্ষোভ এবং ফেডারেল এজেন্টদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প প্রশাসন সেখানে শত শত ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করতে চেয়েছিল। কিন্তু আদালত জানিয়েছে, বর্তমান পর্যায়ে ট্রাম্প প্রশাসন দেখাতে পারেনি যে সংশ্লিষ্ট আইন প্রেসিডেন্টকে ইলিনয়ে স্বাভাবিক বাহিনী ব্যবহার করতে না পারার অজুহাতে ন্যাশনাল গার্ড ফেডারালাইজ করার ক্ষমতা দেয়।

আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, এই মামলায় ট্রাম্প প্রশাসন প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে যে প্রেসিডেন্টের তথাকথিত অন্তর্নিহিত ক্ষমতা ব্যবহার করে ফেডারেল কর্মী ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন আইনসিদ্ধ। বিচারপতি ক্লারেন্স থমাস, স্যামুয়েল আলিটো জুনিয়র ও নীল গোরসুচ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ভিন্নমত দিয়েছেন। এই রায়টি সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্টের এক বিরল অবস্থান হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কারণ গত কয়েক বছরে আদালতের রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠ বেঞ্চ প্রাথমিক পর্যায়ের অনেক মামলায়ই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতার পক্ষে রায় দিয়েছে। কিন্তু শিকাগো সংক্রান্ত এই আদেশে আদালত স্পষ্টভাবে প্রেসিডেন্টকে যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোতে সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে ব্যাপক স্বাধীনতা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন রাজ্য ও স্থানীয় সরকারের আপত্তি উপেক্ষা করে পোর্টল্যান্ড (ওরেগন), লস অ্যাঞ্জেলেস এবং ওয়াশিংটন ডিসিতেও ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছিল। এসব পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে একাধিক মামলা দায়ের হয়, যেখানে অভিযোগ করা হয় যে প্রেসিডেন্ট তার সাংবিধানিক ক্ষমতা ছাড়িয়ে গিয়ে রাজ্যগুলোর ঐতিহ্যগত আইনশৃঙ্খলা রক্ষার অধিকার ক্ষুণ্ন করছেন। সাধারণত ন্যাশনাল গার্ড রাজ্য গভর্নরের অনুরোধে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জরুরি পরিস্থিতিতে মোতায়েন করা হয়।

ফেডারেল আইনে কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট রাজ্যের অনুমতি ছাড়াই ন্যাশনাল গার্ড ফেডারালাইজ করতে পারেন, যেমন বিদ্রোহ বা বিদ্রোহের আশঙ্কা থাকলে, অথবা যখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের আইন কার্যকর করতে অক্ষম হয়। তবে দেশজুড়ে ফেডারেল আদালতগুলো সাধারণত মত দিয়েছে যে শিকাগো ও পোর্টল্যান্ডের পরিস্থিতি এসব শর্ত পূরণ করে না। যদিও ওয়াশিংটন ডিসির ক্ষেত্রে একটি আপিল আদালত ভিন্ন সিদ্ধান্ত দিয়েছে, শহরটির বিশেষ ফেডারেল মর্যাদার কথা উল্লেখ করে সেখানে সেনা মোতায়েন বহাল রেখেছে।

সুপ্রিম কোর্ট আদেশ দেওয়ার আগে একটি অস্বাভাবিক পদক্ষেপ হিসেবে উভয় পক্ষকে আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারার ব্যাখ্যা দিতে বলে। সেখানে বলা হয়েছে, ন্যাশনাল গার্ড ফেডারালাইজ করতে হলে প্রেসিডেন্টকে সিদ্ধান্তে আসতে হবে যে তিনি স্বাভাবিক বাহিনী ব্যবহার করেও যুক্তরাষ্ট্রের আইন কার্যকর করতে পারছেন না। বিচারপতিরা জানতে চান, এখানে স্বাভাবিক বাহিনী বলতে সামরিক বাহিনী বোঝানো হয়েছে, নাকি বেসামরিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তি দেয়, স্বাভাবিক বাহিনী বলতে বেসামরিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেমন ফেডারেল অভিবাসন এজেন্টকে বোঝায়। তাদের দাবি, এই বাহিনী চাপের মুখে পড়ায় প্রেসিডেন্ট একতরফাভাবে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করতে পারেন। সলিসিটার জেনারেল ডি. জন সাওয়ার আদালতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী সামরিক বাহিনীকে আইন কার্যকরের প্রথম সারির শক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে বাধ্য করা হলে তা হবে নজিরবিহীন ও ইতিহাসবিরোধী।

অন্যদিকে ইলিনয়ের ডেমোক্র্যাট অ্যাটর্নি জেনারেল কোয়ামি রাউল বলেন, স্বাভাবিক বাহিনী বলতে পূর্ণকালীন পেশাদার সামরিক বাহিনীকে বোঝায়। তার যুক্তি, প্রেসিডেন্ট সেই বাহিনী ব্যবহার করার চেষ্টা করেননি, এমনকি তা করার সুযোগও তার নেই। ফলে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের আবেদন খারিজ করা উচিত।

শেয়ার করুন