০৪ জুলাই ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০১:১৫:৪৩ পূর্বাহ্ন


দেশকে মিশা সওদাগর
পেছন থেকে কেউ না কেউ নিপুণের কলকাঠি নাড়ছে
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৫-২০২৪
পেছন থেকে কেউ না কেউ নিপুণের কলকাঠি নাড়ছে অভিনেতা মিশা সওদাগর


মিশা সওদাগর। সম্প্রতি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে। এর আগে দুই মেয়াদে তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে এবার দায়িত্ব নেওয়ার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কারণ একই প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোয়ার হোসেন ডিপজল নির্বাচিত হয়েও দায়িত্ব নিতে পারেননি। এই পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

প্রশ্ন: চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন ঘিরে গত দুই মেয়াদে ঝামেলা হচ্ছে এর কারণ কি বলে মনে হয় আপনার?

মিশা সওদাগর: ঝামেলাটা হচ্ছে আমাদের আচরণের কারণে। শিল্পী হিসাবে যে দায়িত্ববোধ আমাদের মধ্যে থাকা দরকার সেটা অনেকের মাঝে নেই। এ কারণেই এমনটা হচ্ছে। হাতেগুণা কয়েকজন শিল্পী এমন আচরণের কারণে সব শিল্পীরাই এখন বিভ্রতকর প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন। 

প্রশ্ন: কিন্তু শিল্পীদের আচার আচরণও তো এখন অসহিষ্ণু। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ অনেক কমে গেছে। 

মিশা সওদাগর : দেখেন, আমি কোনো দিন কোনো শিল্পী নিয়ে কোনো কথা বলিনি। এটা উচিতও না। চলচ্চিত্রের মানুষদের আমাদের অবশ্যই কথা বলায় সহিষ্ণু হওয়া উচিত, পারস্পরিক শ্রদ্ধা থাকা উচিত। শব্দচয়নে সতর্ক থাকা উচিত। এমন কোনো কথা বলা উচিত নয়, যাতে চলচ্চিত্র সম্পর্কে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়। সহকর্মীরা মনে কষ্ট পান।

প্রশ্ন: কিন্তু বাস্তবতা তো ভিন্ন। ফুল দিয়ে বরণ করে মামলা দিয়ে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ার আটকিয়েছেন নিপুণ। একটা অলাভজনক পদ নিয়ে এতো বৈরী আচরণ কেন?

মিশা সওদাগর: নিপুণ এই কাজটি ভেবেচিন্তে করেছে কি না সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। পেছন থেকে কেউ না কেউ নিপুণের কলকাঠি নাড়ছে। কারও কথায় এসব করতেছে। গতবারও কিন্তু তো সে জায়েদের কাছে ১৩ ভোটে হেরেছে। পরপর দুইবার হারল। তার ধারণা থাকতে পারে, সে জিতবে। কিন্তু জেতেনি, এটাই বাস্তবতা। কাগজে-কলমেও লেখা, সে পরাজিত। একবার ইসি পদেও নির্বাচন করেছিল, সেখানেও হেরেছে। কিন্তু ব্যর্থতাকে মেনে না নেওয়া তো খেলার অংশ হতে পারে না- এটা মানতে হবে। একটা কথা কি, নিপুণ তো কোনো দিন চাইলেও শাবনূর, মৌসুমী হবে না। এটা দর্শকেরা বানান। মিশা সওদাগরকে দর্শক বানিয়েছেন। আমিও কিন্তু শিল্পী সমিতির নির্বাচনে শুরুতে ইসি ছিলাম, এরপর কালচারাল সেক্রেটারি, তারপর সেক্রেটারি, এরপর ভাইস প্রেসিডেন্ট এখন মিলিয়ে তিনবারের প্রেসিডেন্ট। রাজনৈতিকভাবেও যদি উদাহরণ দিই, তৃণমূল থেকে উঠে আসা। বলতে চাই না তারপরও বলতে হচ্ছে, আমার কললিস্টে আছে, নিপুণ আমাকে একাধিকবার ফোন করেছে। লোক পাঠিয়েও কথা বলেছে- আমাকে তার প্যানেল থেকে সভাপতি করতে চেয়েছিল। শাকিব খানকেও চেয়েছিল। তার আগে পত্রপত্রিকায় যখন দেখছি, নিপুণ একে প্রেসিডেন্ট চায়, ওকে চায়, ডিপজল ভাইকে বলেছেন- তিনিও না করে দিয়েছেন। আর আমি করিনি। কারণ, ডিপজল ভাইকে কথা দিয়ে দিয়েছি। তবে নিপুণের যেন শুভবুদ্ধির উদয় হয়। আশা করব সে আরও ধৈর্যশীল হবে। আমি তাকে দেখতে চাই একজন অভিনেত্রী হিসেবে। আমার জুনিয়র হিসেবে। সহকর্মী ও সহযোদ্ধা হিসেবে। নির্বাচনের পরদিন সে যে মননশীল, ধীশক্তিসম্পন্ন উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে আমাদের ফুলের মালা পরিয়েছিল, তাতে আমাদের মস্তিষ্ক অক্সিজেন পেয়েছিল- চাইব এটার ধারাবাহিকতা বজায় রাখুক, তাহলে অনেক ভালো কিছু হবে, চলচ্চিত্রের জন্যও তা ইতিবাচক বার্তা দেবে।

প্রশ্ন: কিন্তু এখন শিল্পী সমিতিতে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তা থেকে উত্তরণের উপায় কি?

মিশা সওদাগর: উত্তরণের প্রধান উপায় হলো নমনীয়তা শেখা। শিল্পীদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া। আমি ও শাকিব খান যখন শিল্পী সমিতিতে ছিলাম, তখন কিন্তু এমনটা হয়নি। তার আগে তো এমনটা শোনাও যায়নি। শাকিব-আমি যখন শিল্পী সমিতিতে আসি, তখন শাকিব তার জায়গায় সেরা, আমিও। শাকিবকে জাতি চেনে, বাংলাভাষীরাও চেনে। মিশাকেও তা-ই। এরপর যখন কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি আরম্ভ হলো, তা শুধুই অনভিজ্ঞদের কারণে। আমি বলব জায়েদ-নিপুণদের কারণে। তারা কেউই আবার কার্যনির্বাহী থেকে আসেনি। গতবার নিপুণ কীভাবে সাধারণ সম্পাদক হয়েছিল, তা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না, এটা সবাই জানেন। ইসি থেকে পর্যায়ক্রমে যদি আসত, তাহলে হয়তো এই সমস্যা হতো না। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, শাকিব খান তো সরাসরি সভাপতি নির্বাচন করেছেন। কিন্তু এটাও ঠিক, শাকিবের পেছনে মিশার মতো দক্ষ একজন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। হামলা-মামলা মূলত জায়েদ খান-নিপুণদের আমলে হয়েছে। আমি-মৌসুমী দাঁড়িয়েছি, ওমর সানীও দাঁড়িয়েছিল- কোনো সমস্যা হয়নি। সমালোচনা হয়নি। হয়েছে যা, সেটা শুধুই আলোচনা। কারণ, আমরা স্টার। কিন্তু জায়েদ-নিপুণ কতটা স্টার, তাদের কতটুকুই স্টারডম আছে, এটাও সবাই জানেন। তারা যখন শিল্পী সমিতির নেতা হয়ে গেছে, যেভাবেই হোক হয়ে গেছে- শিল্পীরা হামলা-মামলা করেন তখন থেকেই মানুষ জানল। শিল্পীরা আবার হামলা করেন কীভাবে, মামলা করেন কীভাবে! জায়েদ-নিপুণরা হামলা-মামলার মতো কাজ করে শিল্পী সমিতির পদকে ছোট করেছে। তারা কেউই কিন্তু শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আগে যথেষ্ট পরিমাণে ফোকাসড ছিল না। শিল্পী সমিতির চেয়ার দিয়েই পরিচিতি পেয়েছে। এটাই তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই হামলা-মামলার মতো ঘটনাও তাদের সময়ে ঘটেছে। তারা প্রকৃত শিল্পীদের সম্মানের বিষয়টার কদর বুঝতে পারেনি। সম্মান হারালেও তাই তাদের কিছু যায় আসে না। তারা শিল্পীসত্তায় বিচার করে নেই। প্রকৃত শিল্পীদের দর্শকেরাই দেশ-বিদেশ চিনিয়েছে। প্রযোজক, পরিচালক, পরিবেশকেরাই চিনিয়েছে। আর জায়েদ-নিপুণকে শিল্পী সমিতির চেয়ারই মানুষের কাছে চিনিয়েছে। কোনো চেয়ার আমাকে মানুষের কাছে পরিচিত করেনি। একজন শিল্পী কিন্তু শিল্পী সমিতি দিয়ে নন, শিল্পী তাঁর সৃজনশীল কাজ দিয়ে। ইতিহাসে কাজই থাকে। একজন প্রকৃত শিল্পী নেতৃত্বে থাকাটা শিল্পী সমিতির জন্য সুন্দরের। কারণ শিল্পী হিসেবে প্রমাণিত তাঁরা। যখন থেকেই চলচ্চিত্রের মানুষেরা মামলা-হামলায় জড়িয়েছেন, তখন থেকে আলোচনা নয়, সমালোচনা তাঁদের কপালে জুটেছে। এতে করে প্রকৃত শিল্পীদের সম্মানটাই নষ্ট হয়েছে, হচ্ছে। গোটা চলচ্চিত্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। আরেকটা বিষয় বলে রাখি, আমিও আগের নির্বাচনে কাঞ্চন ভাইয়ের কাছে হেরে গিয়েছিলাম। তারপরও মেনে নিয়েছিলাম। কাঞ্চন ভাইকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিয়েছিলাম।

প্রশ্ন: আপনাদের শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিপুণ। এই বিষয়টাকে কিভাবে দেখছেন?

মিশা সওদাগর: নিপুণের ভেতরে শিক্ষা থাকলে একজন শিল্পীকে অশিক্ষিত বলতে পারতেন না। নিপুণের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। ভুল বুঝতে পারুক। তিনি একজন শিল্পী। আমরাও শিল্পী। এখানে কেউ বাবা-মার পরিচয়ে পরিচিত নই, সবাই যার যার কর্ম দিয়ে পরিচিত।

শেয়ার করুন