০৬ জুলাই ২০১২, শনিবার, ০২:৩৯:৫৩ অপরাহ্ন


মানুষ তুমি মানুষ হও
হাবিব রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৬-২০২৪
মানুষ তুমি মানুষ হও


মানুষ হওয়ার সংজ্ঞা কী? মানুষ হওয়া মানে কী এই- লেখাপড়ায় ভালো করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা জজ, ব্যারিস্টার হওয়া? বিদেশে যাওয়া? অধিকহারে টাকা পয়সা উপার্জন? আমাদের হাত-পা ওয়ালাদের মধ্যেই আমরা কেউ মানুষ আবার কেউ অমানুষ। হাত, পা, চোখ, কান থাকলেই মানুষ হওয়া যায় না। মানুষ হতে হলে সবার আগে চাই মনুষ্যত্ব। যে মনুষ্যত্বকে প্রতি মুহূর্তে কর্ষণ করতে হয়। কেউ হয়তো একটু কম ভালো মানুষ কেউ বেশি ভালো। যদিও এই শ্রেণির সবাই মানুষ। অমানুষ তারা যাদের মনুষ্যত্বই নেই।

প্রসঙ্গত মধ্যযুগের অন্যতম কবি চন্ডীদাসের বিখ্যাত চরণ স্মরণ করা যেতে পারে।

শুনহ মানুষ ভাই,

সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’

ভাবতে অবাক লাগে, এত আগে, সেই মধ্যযুগে কত না সুন্দরভাবে বাংলার এক কবি তাঁর কবিতায় মানবতার ছবি এঁকেছেন। মানুষের জয়গান গেয়েছেন।

ভূমিকাটা টানলাম এজন্য যে, আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত এমন সব ঘটনা ঘটছে যে, কে সত্যিকার মানুষকে-এ নিয়ে প্রশ্ন জাগছে নিয়ত।

প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে নিউইয়র্কে আমার বসবাস। প্রবাসী বাংলাদেশীদের নানা কর্মকান্ড দেখে নিজেও মাঝে মাঝে লজ্জা পাই। একই সাথে দুঃখও হয়। দুঃখ ও লজ্জা হয় এ জন্য যে আমি নিজেও একজন বাংলাদেশী বলে।

আমি যে এপার্টমেন্ট ভবনে থাকি এর নিচতলায় একটি ডিসকাউন্ট স্টোর। সাইনবোর্ডের উপরে বড় উজ্জল হরফে লেখা- একটি বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান।

দোকানটি বেশ বড়সড়। খুবই গর্ব হয় এর মালিকানা একজন প্রবাসী বাংলাদেশীর বলে। গত কয়েকদিন আগে দেখলাম দোকানের বাইরে রঙিন কাগজে অনেকগুলো সাইন-স্টোর ক্লোজিং সেল। দোকানটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সব পণ্যের উপর আকর্ষণীয় সেল দিচ্ছে তারা। মালিক আমার পরিচিত। জানতে চাইলাম কেন বন্ধ করছেন। বল্লেন-ডলার ট্রি, ফাইভ বিলো ইত্যাদির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না তারা। দুঃখ লাগলো। সান্ত্বনা দিয়ে ফিরে এলাম।

পরে একদিন দেখি মার্শাল এসে দোকানে তালা লাগিয়ে দিলো কোর্টের নির্দেশে। অর্থাৎ তিনি ভাড়া বন্ধ করেছেন বহুদিন। মালিক কোর্টে গেছে। তারপর এই মার্শাল কাণ্ড। শুনলাম ভাড়া মাসিক ১৮ হাজার ডলার। তার মানে লক্ষ লক্ষ ডলার ভাড়া না দিয়ে তিনি স্টোর ক্লোজিং নাটক সাজিয়েছেন। কাহিনীর আরো একটু বাকি ছিলো।

আমার একজন পরিচিত বল্লেন, দোকানটা ভাড়া নিতে চাই। একটু হেল্প করেন। আমি দোকান কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলাম। প্রথমে যে কথাটা বল্লেন, তা হলো-ভাড়া দেবো, তবে কোন বাংলাদেশীকে নয়। আমি যে কন্ডোমিনিয়াম কম্পলেক্সে থাকি এখানে অনেকগুলো এপার্টমেন্ট। একটি দুই বেড রুমের এপার্টমেন্ট ভাড়া নিলেন একজন বাংলাদেশী। মালিক একজন গায়ানিজ ভদ্রলোক। কিছুদিন পর তিনি শুধু ভাড়া বন্ধই করেন নি। একটা রুম সাব লেট দিলেন। তাকে উঠাতে বছরের বেশি সময় লাগলো। মালিকের চোখের জল নাকের জল এক সাথ হলো। মর্টগেজ, মেইনটেনেন্স দিতে পারছেন না। ভদ্রলোকের আব্বা মসজিদে জামাত বাদ দেন না। লম্বা জুব্বা পরেন। অথচ ছেলের এই কর্মকাণ্ডের কোন নিন্দা করেন না।

এমনি আরো কত যে কাহিনী।এসব দেখে শুনে বুক ফেটে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে। রবি ঠাকুরের ভাষায় বলতে হয়- “সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালী করে মানুষ করনি।”

শেয়ার করুন