২৯ জুন ২০১২, শনিবার, ০৮:৫৪:৪০ অপরাহ্ন


মার্কিন নাগরিকরা বিদেশি স্বামী-স্ত্রীর ভিসা প্রত্যাখ্যানে মামলা করতে পারবে না
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৬-২০২৪
মার্কিন নাগরিকরা বিদেশি স্বামী-স্ত্রীর ভিসা প্রত্যাখ্যানে মামলা করতে পারবে না মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট


মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট গত ২১ জুন শুক্রবার ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট বনাম মুনোজ মামলার রায়ে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের অনাগরিক স্বামী/স্ত্রীর কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ও ভিসা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে। মার্কিন অনাগরিক স্বামী/স্ত্রীকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশে বাধা দিলে মার্কিন নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয় না। আদালত একটি ৬-৩ সিদ্ধান্তে বলেছে, মার্কিন নাগরিকরা বিদেশি স্বামীর ভিসা প্রত্যাখ্যানের জন্য আদালতে মামলা করতে পারবে না। বাদী মার্কিন নাগরিক এবং নাগরিক অধিকারের আইনজীবী সান্দ্রা মুনোজ মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর তার এল সালভাদোরান স্বামীর ভিসা আবেদন করার তিন বছর অপেক্ষা করার পর তাকে গ্যাং মেম্বার বলে ভিসা প্রত্যাখ্যানের পর তিনি ফেডারেল কোর্টে মামলা করেন। মামলায় তিনি দাবি করেন, এজেন্সি তার আবেদন সন্দেহজনক বলে ব্যাখ্যা করতে বা ভিসা প্রত্যাখ্যান করতে পারে না। কনস্যুলার অফিসার তার স্বামীর ট্যাটুগুলোর ভুল ব্যাখ্যার কারণে তার স্বামীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকার করায় তার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।

মুনোজ ২০১০ সালে এল সালভাদোরান নাগরিক লুইস অ্যাসেনসিও কর্ডেরোকে লস অ্যাঞ্জেলেসে বিয়ে করেন। তাদের একটি সন্তান রয়েছে। এই দম্পতি ২০১০ সালে বিয়ের পর অভিবাসী ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। লুইস অ্যাসেনসিও-কর্ডেরো, যিনি আইনী মর্যাদা ছাড়াই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন। ইমিগ্র্যান্ট ভিসাপ্রাপ্তির এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করতে তার স্বামীর এল সালভাদরের কনস্যুলেটে যেতে হয়েছিল। ইন্টারভিউয়ের সময় কনস্যুলার অফিসার লুইস অ্যাসেনসিও-কর্ডেরোকে যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনি কার্যকলাপে অংশ নিতে পারে এমন একটি আইন উল্লেখ করেন এবং তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন।

স্টেট ডিপার্টমেন্ট কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানায়নি। তবে মামলা দায়ের করার পর মুনোজ দম্পতি জানতে পেরেছিল যে, প্রত্যাখ্যানটি একটি কনস্যুলার অফিসারের সংকল্পের ভিত্তিতে ছিল। তার ট্যাটু সম্ভবত সে গ্যাং এমএস-১৩ এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। অ্যাসেনসিও-কর্ডেরোর কোনো গ্যাংয়ের সঙ্গে যোগসূত্র ছিল তা অস্বীকার করেছেন এবং তার কোনো অপরাধমূলক ইতিহাস নেই। তার আইনজীবীরা আদালতের কাগজপত্রে বলেছেন, ট্যাটুটি আওয়ার লেডি অব গুয়াডালুপে, থিয়েটারের মুখোশ এবং মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের একটি প্রোফাইলসহ ট্যাটুগুলো তার বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রহ এবং ক্যাথলিক বিশ্বাস প্রকাশ করেছে।

মুনোজ ২০১৭ সালে স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিরুদ্ধে লস অ্যাঞ্জেলেস ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা করেন যখন এজেন্সি তার স্বামীর ভিসা প্রত্যাখ্যান করার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে অস্বীকার করেছিল। ফেডারেল বিচারক ২০২১ সালে রায় দিয়েছিলেন যে স্টেট ডিপার্টমেন্ট মুনোজকে আবেদনটি অস্বীকার করার কারণ সম্পর্কে অবহিত করতে বাধ্য নয়। বাদী কোর্ট অব আপিলে ২০২২ সালে ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। ইউএস ৯ম সার্কিট কোর্ট অব আপিল মুনোজের পক্ষে রায় দেয় এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টকে কারণটি শেয়ার করা এবং ভিসার আবেদন পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দেয়। স্টেট ডিপার্টমেন্ট আপিল করার পরে সুপ্রিম কোর্ট গত ২১ জুন সেই রায়টি বাতিল করে দেয়। 

কিন্তু ২১ জুন শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে মুনোজের সাংবিধানিক অধিকার তার স্বামীকে যুক্তরাষ্ট্রে তার সঙ্গে থাকার অধিকারের সমতুল্য নয়। ভিন্নমত পোষণ করে বিচারপতি সোনিয়া সোটোমায়র বলেছেন, যে সিদ্ধান্তটি কয়েক দশকের সুপ্রিম কোর্টের নজিরগুলোর সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ছিল, যা বিবাহের গুরুত্বকে স্বীকৃত করেছিল। যার মধ্যে আন্তঃজাতিগত এবং সমকামী বিবাহের ওপর রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা নিষিদ্ধ করার মৌলিক রায় এবং ১৯৭৩ সালের রো বনাম ওয়েড সিদ্ধান্ত, যা বিবাহের অধিকারকেও গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকারের অন্তর্নিহিত ভিত্তি হিসেবে আহ্বান করেছিল। আদালত দুই বছর আগে রো বনাম ওয়েডকে বাতিল করেছে। বিচারপতি এলেনা কাগান এবং কেতানজি ব্রাউন জ্যাকসন বিচারপতি সোনিয়া সোটোমায়র একমত প্রকাশ করে বলেছেন, কোন প্রশ্নই নেই যে একজন নাগরিকের পত্নীকে বাদ দেওয়া তার বিবাহের অধিকারকে বোঝায়, এবং সেই বোঝার জন্য সরকারকে তার সিদ্ধান্তের জন্য অন্তত একটি বাস্তব ভিত্তি প্রদান করতে হবে।

বিচারপতি অ্যামি কোনি ব্যারেট বলেছেন, আদর্শিক লাইন বরাবর ৬-৩ সিদ্ধান্তে দেখা গেছে, অভিবাসী পত্নী আইনত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে পারবে কিনা সে সম্পর্কে নাগরিকদের ফেডারেল সরকারের সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ করার অধিকার নেই। যদিও কংগ্রেস স্বামীদের জন্য অভিবাসন করা সহজ করে দিয়েছে, এটি স্বামী-স্ত্রী অভিবাসনকে কখনই অধিকারের বিষয় করেনি। ব্যারেট আরো বলেছিলেন, যদিও একজন নাগরিকের অবশ্যই বিবাহের একটি মৌলিক অধিকার আছে। এটি সেই ভিত্তি থেকে লাফিয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ছিলো ভ্রান্তি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের একটি মৌলিক অধিকার রয়েছে যা সীমিত করতে পারে। কংগ্রেস কীভাবে দেশের সার্বভৌম ক্ষমতাকে স্বীকার বা বাদ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করে। বিচারপতি সোনিয়া সোটোমায়র বলেছিলেনম নাগরিকদের তাদের স্বামী/স্ত্রীর কেন প্রবেশে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কারণ খোঁজার অধিকার অস্বীকার করা, অভিবাসন প্রসঙ্গে বিবাহের অধিকারকে গুরুতরভাবে অবমূল্যায়ন করে।

শেয়ার করুন