০৬ জুলাই ২০১২, শনিবার, ১০:৪৫:১৬ পূর্বাহ্ন


ভারত-বাংলাদেশ আন্তঃদেশ যোগাযোগে প্রয়োজন স্বচ্ছতা
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৭-২০২৪
ভারত-বাংলাদেশ আন্তঃদেশ যোগাযোগে প্রয়োজন স্বচ্ছতা


ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ নেপাল, ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের অবাধ রেল এবং সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হলে চারটি দক্ষিণ এশিয়া দেশগুলোর মধ্যে মুক্তবাণিজ্যের সুযোগ সম্প্রসারিত হবে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে ভারত একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে রেল যোগাযোগ সুবিধা উন্মুক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়টি নিষ্পত্তি করার আগে উভয় দেশের যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে বিস্তারিত ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করা হয়েছে কি না জানা সম্ভব হয়নি।

ভারত ছাড়াও এ ব্যবস্থায় বাংলাদেশ-নেপাল রেল যোগাযোগ সম্প্রসারিত হবে কি না, সেটি নিশ্চিত হয়েছে বলে মনে হয় না। তবে সম্প্রতি রেল সচিব এমন একটা সম্ভাবনার সমঝোতার কথা পত্রিকাতে বলেছেন। কিন্তু সেটা সচিব কেন এ অর্জন সত্যিই হলে মন্ত্রীর মুখ থেকেই শোনার প্রত্যাশা ছিল মানুষের। কিন্তু সেটা শোনা যায়নি। ভারত অবশ্যই এ ব্যবস্থায় পূর্ব থেকে পশ্চিমে অবাধ রেল যোগাযোগের কারণে বিপুলভাবে লাভবান হবে। বাংলাদেশিদের জানা প্রয়োজন এ ব্যবস্থায় কি পরিমাণ লাভ হবে বাংলাদেশের? তাই ব্যবস্থাটি চালু হওয়ার আগেই ভারত- বাংলাদেশ রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উভয় দেশের লাভ-ক্ষতির খতিয়ান নির্ধারণ জরুরি। ভারত কিন্তু এখন পর্যন্ত চিকেন নেক দিয়ে বাংলাদেশ-নেপাল বা ভুটান বাণিজ্য যোগাযোগ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করেনি। এমনকি বাংলাদেশ-নেপাল বিদ্যুৎ বিনিময় ব্যবস্থাও ভারতের অসহযোগিতার কারণে দীর্ঘদিন ঝুলে আছে।

অস্বীকার করা যাবে না বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ১৬ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় অনেক দ্বিপাক্ষিক সমস্যার সমাধান হয়েছে। তবে সাধারণ দৃষ্টিতে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের লাভের পরিমাণ অনেক বেশি। তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন ব্যবস্থা ভারতের একগুঁয়েমির কারণে ঝুলে আছে। বাংলাদেশের মাঝ দিয়ে প্রবাহমান নদীগুলো এখন মৃতপ্রায়। ভাটি অঞ্চলে পানির অভাবে কৃষক চাষাবাদে মারাত্মক সংকটে পড়েছে। দুটি সৎ প্রতিবেশীর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সুসম্পর্ক স্থাপনের প্রধান শর্ত উভয় দেশের সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের বিরোধী গোষ্ঠীর আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়ে ভারতকে স্বস্তি দিয়েছে। অথচ ভারতে অনেক বাংলাদেশের দণ্ডিত আসামি এবং অভিযুক্ত অপরাধী লুকিয়ে আছে। বাংলাদেশ ভারতের সুবিধার জন্য সব যোগাযোগ জানালা খুলে দিয়েছে। ভারত কিন্তু একইভাবে সাড়া দেয়নি।

বাংলাদেশ ভারত উন্মুক্ত বাণিজ্যব্যবস্থা চালু করতে হলে ভারতকে অবশ্যই বাংলাদেশের সব রফতানি করা পণ্যের ওপর থেকে ট্যারিফ নন-ট্যারিফ বাধা দূর করতে হবে। সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বচ্ছ এবং উভয়পক্ষের জন্য লাভজনক হলে আমার মনে হয় না কেউ আপত্তি করবে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় জনগণ, কিন্তু সর্বশেষ চুক্তি নিয়ে অন্ধকারে আছে। 

বিশেষত চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে বাংলাদেশের অধিকারকে প্রভাবিত করতে চাচ্ছে ভারত এই মর্মে অভিযোগ উঠেছে।

ভারত বাংলাদেশের বন্ধু দেশ। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সহায়ক দেশ। বাংলাদেশ কিন্তু ভারতের মতোই স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় দুটি দেশ একই সমতলে অবস্থান করে চুক্তি করলে উভয় দেশের সুসম্পর্ক সুদৃঢ় এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে।’

শেয়ার করুন