জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সহিংসতার সব ঘটনার স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তদন্ত করা এবং তদন্তে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে নাগরিক সংগঠন ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’-সুজন। সুজন বলেছে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। এর পাশাপাশি তারা সহিংসতা ও হত্যার স্বচ্ছ ও নির্মোহ তদন্ত এবং গণগ্রেফতার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
সুজন সভাপতিএম হাফিজউদ্দিন খান ও সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয় যে, আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সংকট এখনও নিরসন হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা হামলা ও ভাঙচুরের সঙ্গে যুক্ত নয় বলে উল্লেখ করা হলেও শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে গণগ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। এরফলে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৯ জুলাই পর্যন্ত রাজধানীতে ২৪৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং সারাদেশে দশ হাজারের অধিক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ অবস্থায় আমরা নাগরিক সংগঠন ‘সুজন’-এর পক্ষ থেকে আরো যে দাবি জানায় সেগুলি হলো সহিংসতার পর নিহতদের নাম-পরিচয়সহ বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করা। প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া, যারা আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং গুরুতর আহতের পুনর্বাসনের পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়া।
গায়েবি মামলা ও ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে ঢালাওভাবে গ্রেফতার বন্ধ করা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ করা ও তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত পক্ষপাতদুষ্ট মামলা প্রত্যাহার ও আটককৃতদের মুক্তি, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা দায়ের করা থেকে বিরত থাকা, ডিবি হেফাজতে থাকা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়ককে অবিলম্বে মুক্তি প্রদান এবং সাধারণ নাগরিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন থেকে দূরে থাকা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার বন্ধ করা এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করা থেকে বিরত রাখা। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে তুলে নিয়ে ডিবি অফিস কিংবা থানায় হাজির করা থেকে বিরত থাকা। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাঙ্গন-সহ জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে কাউফিউ তুলে নিয়ে এবং ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করে বাকস্বাধীনতাসহ জনগণের সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধিত) অধ্যাদেশ ১৯৭২ অনুযায়ী, নিবন্ধিত দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন রাখা বেআইনি। তাই লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি কিংবা ছাত্রদের ব্যবহারের রাজনীতি বন্ধ করা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গণরুম ও গেস্টরুম কালচার ও র্যাগিং বন্ধ করে যোগ্যতার ভিত্তিতে হলে সিট বরাদ্দ দেওয়া এবং তরুণদের নেতৃত্ব বিকাশে সকল ক্যাম্পাসে নিয়মিত ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজন করা। ভোটাধিকার থেকে শুরু করে জনগণের অন্যান্য নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।