৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:৩১:২০ অপরাহ্ন


ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির দায় কার?
সালেক সুফি
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৭-২০২৪
ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির দায় কার?


সুশাসনের অভাব এবং জবাবদিহিবিহীন রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার কারণেই নিরীহ গোছের কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ধ্বংসাত্মক জাতীয় সংকটের সৃষ্টি করেছে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে কয়েকশ জীবনহানি হয়েছে, অনেক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের নাগরিকদের আন্দোলনকে বিরুদ্ধে ভুল কৌশলে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ব্যবহার করে ব্যর্থ হয়ে সেনাবাহিনী নিয়োগ করে কারফিউ জারি করতে হয়েছে। ইন্টারনেট ও টেলিফোন সেবার ত্রুটিতে বাংলাদেশ গোটা বিশ্ব থেকে সম্পূর্ণ যোগাযোগবিহীন হয়ে পড়ায় সংযুক্ত বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দারুণভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।

যৌক্তিক প্রশ্ন উঠেছে বিশ্বসমাজে কেন একটি তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশে যথাসময়ে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন সহিংস আন্দোলনে রূপান্তরিত হলো? কেন ভুল কৌশলের কারণে দেশবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করার সুযোগ দেওয়া হলো। এতে করে নিরীহ, নিরপেক্ষ জনসাধারণ এখন আর সরকারের সদিচ্ছার ওপর আস্থা রাখতে পারছে না।

জুলাই মাসের শুরুতে কোটাবিরোধী আন্দোলনের পূর্বক্ষণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পরপর দু’বার ভারত সফর করেন। পূর্ব নির্ধারিত চীন সফরের পূর্বক্ষণে ভারত সফর এবং সফরে কিছু সমযোতা স্মারক নিয়ে জনমনে কিছু প্রশ্ন জমেছিল। এমন অবস্থায় সাধারণ ছাত্রসমাজ যৌক্তিক কিছু দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করায় সরকার হয়তো ভেবেছিল জনগণের দৃষ্টি হয়তো অন্যান্য জাতীয় সমস্যা থেকে আড়াল করা যাবে। ছাত্র আন্দোলন সাধারণ জনসাধরণের সহানুভূতি অর্জন করতে থাকা অবস্থায় সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ছাত্র লীগকে আন্দোলনকারী ছাত্রসমাজের মুখোমুখি দাঁড় করানোয় আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয়। কিছু নিরীহ ছাত্রের মৃত্যু ঘটায় আন্দোলন বিদ্যুৎগতিতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

আর এমনি সুযোগের অপেক্ষায় ছিল সরকার ও স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী। দেশে বিদ্যমান নানা সংকটের কারণে এমনিতেই সাধারণ জনসাধারণের মনে সরকারবিরোধী মনোভাব ছিল। রাজপথের আন্দোলনের মুখে পুলিশ, র‌্যাব, বিজেবি পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হলো। সমাজবিরোধী চক্র খুন, অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টি করে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সেতু ভবন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মতো স্থাপনার মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। ঘটনার এই পরিণতির জন্য সমাজবিরোধী শক্তিকে দায়ী করার আগে সরকারের ভিতর লুকিয়ে থকা মন্ত্রী, উপদেষ্টা এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের দায়ী করা উচিত। 

অতিব দুঃখের বিষয় হলো ছাত্র আন্দোলনের শুরুতে কয়েকজন মন্ত্রী এবং উপদেষ্টার পরামর্শে সরকার নিজেদের ছাত্র সমাজের প্রতিপক্ষ করে। ছাত্রদের আন্দোলনকে সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করলে পরিস্থিতি জটিল হত না। এটা দৃঢ়ভাবে বলা যায়, ছাত্রলীগ, নিরীহ ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানালে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। ছাত্রমৃত্যু না ঘটলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার সুযোগ পেতো না। দেশের অর্থনীতির বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল। অনেক সম্ভাবনাময় তারুণ্যের জীবনহানি ঘটলো। কিছু অপরিহার্য স্থাপনা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। কঠিন সময়ে অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়তো না। স্বাভাবিক কারণেই বলা যায়, দেশে দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু থাকলে, সর্বস্তরে সুশাসন থাকলে, বর্তমান সংকটের সৃষ্টি হতো না। নিরীহ গোছের আন্দোলন যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। সেনাবাহিনী নামিয়ে কারফিউ দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হতো না।

শেয়ার করুন