২০ সেপ্টেম্বর ২০১২, শুক্রবার, ০৫:২৩:০১ অপরাহ্ন


মেরিয়ট ফোবানা দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি উৎসর্গ করা হলো
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৯-২০২৪
মেরিয়ট ফোবানা দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি উৎসর্গ করা হলো বেলুন উড়িয়ে ফোবানা সম্মেলনের উদ্বোধন করছেন কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা


লেবার ডের ছুটি। এই ছুটিটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য স্পেশাল। কারণ আজ থেকে ৩৮ বছর আগে প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বার্থরক্ষা এবং দেশের উন্নয়নে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কালের বিবর্তনে এই ফোবানা এখন নানাভাগে বিভক্ত। এবারও আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটে চারটি ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একটি ফোবানা অনুষ্ঠিত হয় নিউইয়র্কের মেরিয়ট হোটেলের বল রুমে, আরেকটি ফোবানা অনুষ্ঠিত হয় মেরিল্যান্ডের হিলহোটেলের বল রুমে, তৃতীয় ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ভর্জিনিয়ায় এবং চতুর্থ ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় মিশিগানে।

নিউইয়র্কের ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় লাগোয়ার্ডিয়া ম্যারিয়ট হোটেলের বল রুমে। এই সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন হচ্ছে আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এবিসিসিআই)। গত ৩০ আগস্ট শুক্রবার সন্ধ্যায় এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা। চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ফাহাদ সোলায়মানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানের উপস্থিত ছিলেন কনভেনর আসিফ বারী টুটুল, প্রধান উপদেষ্টা ডা. মাসুদুর রহমান, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি দেওয়ান এ আজিম জুয়েল, বাংলা পোস্টের সম্পাদক মুনমুন কাসিনা বারী, লায়ন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট রকি আলিয়ান, সাধারণ সম্পাদক জে এফ রাসেল, বিশিষ্ট অ্যাটর্নি মীর মিজানুর রহমান, খলিল বিরিয়ানির খলিলুর রহমান, বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া, সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী, সহ-সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ নওশাদ হোসেন, জেবিএির সাবেক সভাপতি জাকারিয়া মাসুদ জিকো, ডা. চৌধুরী সারওয়ারুল হাসান, ডা. আব্দুস সবুর, মোশাররফ হোসেন সবুজ, জেবিবিএর সাধারণ সম্পাদক তারেক হাসান খান, ডা. বর্ণালী হাসান, শাহাদ হোসেন রাজু, জেড জয়, ভিপি জসীম, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক, রিয়াজ মাহমুদ, ইমরান শাহ রন, বদরুল হক আজাদ, সাইফুর খান হারুণ, দেওয়ান কাওসার, বিলাল চৌধুরী, এটর্নী মঈন চৌধুরী, দুলাল বেহেদু, ওয়াহেদ কাজী এলিন, মোহাম্মদ মহসীন, আব্দুস সবুর, নাফিউল ইসলাম পান্না প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বন্সাল জেনারেল নাজমুল হুদা বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশ এবং আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশকে কেন্দ্র করেই এই সম্মেলন। এই সম্মেলনে বাংংলাদেশের কৃষ্টি-কালচার এবং ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হবে। সেই প্রবাসের জন্ম নেওয়া এবং বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের মধ্যে আমাদের কৃষ্টি- কালচার তুলে ধরা হবে। তিনি বলেন, আপনারা জানেন বাংলাদেশে এখন ভয়াবহ বন্যা চলছে। এই বন্যায় অনেই সর্বস্ত হারিয়েছেন। তাদের সাহায্যে আপনাদের এগিয়ে আসা উচিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এই সরকারের হাতে এখন রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ। যখন তারা দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন বাংলাদেশে এক চরম পরিস্থিতি ছিল, চারিদিকে অরাজকতা। ছিল না দেশে কোনো গণতন্ত্র, দেশ অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর ছিল। সে ক্রান্তিলগ্নে বিশ্ববরেণ্য নোবেল লরিয়েটে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি এখন রাষ্ট্রীয় সংস্কারে নেমেছেন। কীভাবে বাংলাদেশকে জনগণের বাংলাদেশ করা যায় সেই কাজ করছেন। আমি বিশ্বাস করি, তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বের উন্নতির শিহরে পৌঁছাবেন। তার সেই যোগ্যতা এবং সারা বিশ্বে তার সেই গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের নতুন সরকারকে সহযোগিতার আহ্বান জানান।

গিয়াস আহমেদ বলেন, আমাদের এই ফোবানা সম্মেলনে এবার দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের প্রতি উৎসর্গ করা হলো। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতায় ছিল। সেই স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। তিনি বলেন, একজন প্রবাসী বাংলাদেশি হিসাবে আমরা চাই বাংলাদেশ ভালো থাকুক। বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকুক, আইনের শাসন থাকুন। বাংলাদেশ ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকি। বাংলাদেশ খারাপ থাকলে আমরা ব্যথিত হই, উদ্বিগ্নেœ থাকি।

আসেফ বারী টুটুল সম্মেলনে আসার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা বাংলাদেশে মানুষের পাশে আছি এবং থাকবো। বাংলাদেশের মানুষের সাহায্যার্থে আমাদের সংগঠন থেকে আমরা অনুদান প্রেরণ করবো। তিনি বলেন, আমরা নতুন সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। প্রথম দিনে ছিল শুধু উদ্বোধনী।

দ্বিতীয় দিনে শনিবার সম্মেলনের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা, স্টেট অ্যাসেম্বলীওমেন জেসিকা গঞ্জালেস রোহাস, নিউইয়র্ক সিটি মেয়র অফিসের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মীর বাশার। এছাড়াও স্টেট অ্যাসেম্বলিওমেন জেনিফার রাজ কুমারের পক্ষ থেকে তার প্রতিনিধির মাধ্যমে ফোবানা কর্মকর্তাদের মধ্যে সাইটেশন প্রদান করা হয়। এ সময় বক্তারা ফোবানা সম্মেলনের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। গিয়াস আহমেদ তার বক্তব্যে ফোবানা সম্মেলনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও প্রবাসে বাংলাদেশিদের ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, সকল বাংলাদেশি ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমাদের অধিকার আদায় সহজ হবে।

সেমিনার পর্বে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ডা. মাসুদুর রহমান। ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ এবং করণীয়’ বিষয়ক সেমিনারে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক-লেখক সাঈদ তারেক, বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার ফরহাদ। এই পর্ব পরিচালনা করেন সাংবাদিক রিমন ইসলাম। সাংস্কৃতিক পর্বে সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আঁখি আলমগীর ছাড়াও বাউল কালা মিয়া, চন্দন চৌধুরী, কৃষ্ণা তিথি, শশী, ত্রিনিয়া হাসান, প্রেমা, নাজুয়া আকন্দ, লুমিন, অমিত, শিল্পী দম্পতি প্রমি-তাজ প্রমুখ।

তৃতীয় দিনেও ছিল আলোচনা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে দেশের এবং প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। উপস্থাপনার সহযোগিতায় ছিলেন মিয়া মোহাম্মদ দুলাল ও জয়।

শেয়ার করুন