অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাসে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তাতে সরকার কিছু কিছু মন্ত্রণালয় এবং সংস্থায় যোগ্য লোক পদায়ন করলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় এবং সংস্থায় যোগ্য লোক খুঁজে পাচ্ছে না বলে জানা গেছে। বিগত সরকারের এমনভাবে দলীয়করণ হয়েছে সরকার কারো উপর ভরসা পাচ্ছে না। পুলিশ এখনো নিষ্কিয়। সেনাবাহিনীকে অনির্দিষ্ট কাল রাস্তায় রাখা যাবে না। ছাত্ররাও সবাই ধীরে ধীরে ফিরছে পড়ার টেবিলে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠনের মাঝেই ধীরে ধীরে বৈষম্য দেখা যাচ্ছে। বর্তমান বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তাদের কর্মকাণ্ডে এবং জ্বালানি সঙ্কট মেটাতে পারবে বলে ভরসা হয় না। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে- বিকল্প কোথায়?
বর্তমান সংকট বজায় থাকলে শিল্প উৎপাদনে ধ্বস নামবে। নানা ফন্দি ফিকির করে নিকট অতীতের কিছু শীর্ষ দুর্নীতিবাজ ভোল পাল্টে জ্বালানি সেক্টরের সংস্থাগুলোর শীর্ষ পদ দখলের ধান্ধা করছে। দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে যোগ্য দক্ষ মানুষ পদায়ণ করা না হলে সরকার বিপদে পড়বে। পেট্রোবাংলার সঙ্গে কোম্পানিগুলোর দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষোদ্গারও দেখা যাচ্ছে। এ সেক্টরে অভিজ্ঞদের মধ্যেও বিভেদ স্পষ্ট। দিন যতই যাবে অস্থিরতা বাড়বে। সরকারের উপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশিদের স্বাভাবিক মন- মানসিকতার মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না। ছাত্র জনতার আন্দোলনে জনতা ক্রমশই পিছনে পড়ে যাচ্ছে। প্রগতিশীল মানুষেরা কোনঠাসা হয়ে পড়ছে।
পতিত সরকারের লোকজন নেতা, দোসরদের বিরুদ্ধে মামলাগুলোর ধরনে কোন পরিবর্তন নেই। আগে সাড়া জাগানো হত্যাকাণ্ডসমূহের কোন অগ্রগতি চোখে পড়ছে না। ঈশান কোনে মেঘ প্রতীয়মান হচ্ছে। এই ধারা বেশি দিন চললে জনতা কিন্তু হতাশ হয়ে পড়তেও পারে। সবার প্রতি সুবিচার, বৈষম্য হীন সমাজ ব্যবস্থা করার সরকারি প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পদে পদে। সংস্কার প্রক্রিয়া ব্যাপক বিস্তৃত করা হলে গুরুত্বপূর্ণও সংস্কার বাধাগ্রস্ত হবে। প্রতিনিয়ত এমন ধারা বজায় থাকলে তিন মাস কেন, তিন বছরেও কাঙ্খিত অর্জন হবে না। অনির্বাচিত সরকার আঞ্চলিক পরিমণ্ডলে অনেক ব্যাপারেই প্রশ্নের সম্মুক্ষীণ হবে।
এখন পর্যন্ত আর্থিক খাত ছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, শিল্প, জ্বালানি বিদ্যুৎ খাতে মৌলিক পরিবর্তন দৃশ্যমান হয় নি। ধ্বংসের মুখে থাকা দেশের কঙ্কাল হাড্ডিমজ্জা শক্ত করে সবল করে তোলার জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার রূপ কল্প তিন মাসেই রচনা করা অত্যাবশ্যক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা সব গুণী মানুষ। কিন্তু ক্লাসের সেরা ছাত্ররা সব সময় দেশ শাসনে সেরা হবে তার নিশ্চয়তা নেই। বিশেষ যে দেশে সবাই রাজা সেখানে ভালো মন্দ সব কাজেই সমালোচনা হয়। সবাইকে প্রতিপক্ষ করে সরকার নতুন চ্যালেঞ্জ ডেকে আনছেন। নতুন জামাই পুরান হয়ে গেলে কিন্তু সমাদর থাকবে না। হয়তো একসময় শ্রদ্ধেয় ডক্টর এম ইউনূস মহোদয় ধৈর্য্য হারিয়ে ফেললেও অস্বাভাবিক হবে না।
তাছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা অস্থিরতাও কাজ করছে। সমাজের সকল স্টোরে কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার চাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। ছাত্র জনতার মহান আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলা যায়- কিছু কিছু সিদ্ধান্ত বিতর্কিত হতে শুরু করেছে। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মৌলবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠলে কিন্তু সমাজে বিভাজন আসবে। সেই ধরনের পরিস্থিতি কিন্তু কারো জন্য শুভকর হবে না।
আমি আশা করি সরকারের শুভাকাঙ্খীরা দ্রুত মন্ত্রণালয় এবং সংস্থাগুলোর কাজে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে অধিকতর তৎপর হবেন। অন্তর্বর্তী সরকারের হানিমুন সময় শেষ এখন দ্রুত কাজ সম্পাদনের পালা।