৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৪২:১৩ অপরাহ্ন


অভিবাসীরা কুকুর-বিড়াল চুরি করে খাচ্ছে, ট্রাম্পের দাবি মিথ্যা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৯-২০২৪
অভিবাসীরা কুকুর-বিড়াল চুরি করে খাচ্ছে, ট্রাম্পের দাবি মিথ্যা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প


সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ১০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাত ৯টায় যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিয়ে ভুল তথ্য প্রচার করেন যে, হাইতির অভিবাসীরা ওহাইওর স্প্রিংফিল্ড শহরে পোষা কুকুর ও বিড়াল চুরি করে খাচ্ছে। তিনি তার প্রচারণার সময়েও এমন প্ররোচতামূলক ও অভিবাসী-বিরোধী বক্তব্য তুলে ধরেছেন। কোনো প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প বিতর্কে স্প্রিংফিল্ড শহরের নাম উল্লেখ করে বলেন, তারা কুকুর খাচ্ছে, বিড়াল খাচ্ছে, এখানকার বাসিন্দাদের পোষা প্রাণীদের খাচ্ছে। ট্রাম্পের মন্তব্যের পর কমলা হ্যারিস তাকে ‘চরম’ বলে অভিহিত করেন এবং তার মন্তব্য শুনে হাসেন। বিতর্কের সঞ্চালক ডেভিড মুইর ও লিনসে ডেভিস বলেছেন যে, ওহাইওর স্প্রিংফিল্ড শহরের কর্মকর্তারা এ দাবিগুলোকে মিথ্যা বলে উল্লেখ করেছেন।

ট্রাম্পের মন্তব্য তার প্রচারণার দাবিগুলোকে তার রানিং মেট ওহাইও সিনেটর জেডি ভ্যান্স এবং অন্যান্য রিপাবলিকানরা পুনরায় তুলে ধরে বক্তব্য দিয়েছেন। এ দাবিগুলো গত সপ্তাহে যখন ভ্যান্স সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন যে, তার অফিস ‘অনেক প্রশ্ন’ পেয়েছে হাইতির অভিবাসীরা পোষাপ্রাণী চুরি করছে কি না তখন এই ভুল তথ্য প্রচার সম্পর্কে সব নজরে আসে। ভ্যান্স ১০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার স্বীকার করেন যে ‘এ সমস্ত গুজব মিথ্যা হতে পারে।’

ওহাইওর স্প্রিংফিল্ড শহরের অফিশিয়ালরা বলেছেন যে, এ দাবিগুলোর কোনো বিশ্বাসযোগ্য বা বিস্তারিত প্রতিবেদন তাদের নেই। যদিও ট্রাম্প এবং তার মিত্ররা এ দাবি ব্যবহার করে কালো ও বাদামি অভিবাসীদের সম্পর্কে বর্ণবাদী স্টেরিওটাইপ বক্তব্য প্রচার করছেন।

ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদে থাকা সময়ে, তিনি প্রশ্ন করেছিলেন কেন যুক্তরাষ্ট্র ‘পচা গর্ত’ দেশের মানুষ যেমন হাইতি এবং কিছু আফ্রিকার দেশ থেকে অভিবাসী গ্রহণ করবে। তার ২০২৪ সালের প্রচারণা বেআইনি অভিবাসনের ওপর ব্যাপকভাবে মনোযোগ কেন্দ্রিত করছে। প্রায়ই তিনি তার ভাষণে অভিবাসীদের দ্বারা অপরাধ ও মাদকাসক্তির উল্লেখ করছেন। ট্রাম্প যুক্তি দেন যে, অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধ ও মাদকদ্রব্যের ব্যবহার বাড়াচ্ছে এবং আমেরিকান নাগরিকদের কাছ থেকে সম্পদ নিচ্ছে।

কীভাবে এ দাবিগুলো ছড়িয়ে পড়লো?

৬ সেপ্টেম্বর, এক্স নামক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে স্প্রিংফিল্ড থেকে একটি সামাজিক মিডিয়া পোস্টের স্ক্রিনগ্র্যাবের মতো দেখানো একটি পোস্ট প্রকাশিত হয়। রিটুইট করা পোস্টে বলা হয়েছে যে, ‘প্রতিবেশীর মেয়ে বন্ধু’ একটি বিড়াল গাছের ডালে ঝুলতে দেখেছে এবং এটি হাইতির অভিবাসীদের বাসায় বসবাস করছে বলে দাবি করা হয়েছে, তবে এর কোনো প্রমাণ নেই। পোস্টের সঙ্গে একটি ছবি ছিল, যা একটি কালো মানুষকে কানাডার হাঁস নিয়ে যাচ্ছে দেখানো হয়েছে। এ পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার হতে থাকে।

ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ভ্যান্স এক্সে পোস্ট করেন, রিপোর্ট এখন দেখায় যে লোকেরা তাদের পোষাপ্রাণী চুরি হয়ে গেছে এবং যারা এই দেশে থাকা উচিত নয়, তাদের দ্বারা খাওয়া হয়েছে। পরদিন ভ্যান্স পুনরায় এক্সে পোস্ট করে বলেন যে, তার অফিস স্প্রিংফিল্ডের বাসিন্দাদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছে যে, তাদের প্রতিবেশীর পোষাপ্রাণী বা স্থানীয় বন্যপ্রাণী হাইতির অভিবাসীদের দ্বারা চুরি হয়েছে। সম্ভবত এ সমস্ত গুজব মিথ্যা হতে পারে।’

অন্যান্য রিপাবলিকানরাও অনুরূপ পোস্ট শেয়ার করেছেন। এর মধ্যে টেক্সাস সিনেটর টেড ক্রুজ, যিনি একটি ছবির সঙ্গে পোস্ট করেছেন, যাতে একটি ক্যাপশন ছিল ‘ট্রাম্পকে ভোট দিন যাতে হাইতির অভিবাসীরা আমাদের না খায়।’

ট্রাম্পের বিতর্কের কয়েক ঘণ্টা আগে, তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে দুটি সম্পর্কিত ছবি পোস্ট করেন। একটি ছিল ট্রাম্পকে বিড়াল ও হাঁসের সঙ্গে ঘেরা অবস্থায় এবং অন্যটি ছিল মাগা টুপি পরা সশস্ত্র বিড়ালের ছবি।

অ্যারিজোনার রিপাবলিকান পার্টি মিথ্যা গুজবগুলোর ওপর ভিত্তি করে একটি বিলবোর্ড প্রচারণা শুরু করেছে। বিলবোর্ডের চিত্র একটি চিক-ফিল-এ বিজ্ঞাপনের মতো, যেখানে চারটি বিড়াল এবং ‘ভোট দিন রিপাবলিকান!’ ও ‘কম বিড়াল খান’ লেখা রয়েছে।

ওহাইওর কর্মকর্তারা কি বলছেন?

স্প্রিংফিল্ড সিটি ম্যানেজার ব্রায়ান হেকের অফিস একটি বিবৃতি প্রকাশ করে গুজবগুলো অস্বীকার করেছে। বিবৃতিতে তিনি বলেন, সম্প্রতি আমাদের শহরের অভিবাসী জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কার্যকলাপের দাবিগুলোর প্রতি সাড়া দিয়ে, আমরা স্পষ্ট করতে চাই যে, পোষাপ্রাণীদের ক্ষতি, আঘাত বা নির্যাতনের কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন বা নির্দিষ্ট দাবি নেই। স্প্রিংফিল্ড পুলিশ ১৬ সেপ্টেম্বর সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, তারা চুরি বা খাওয়া পোষাপ্রাণীর কোনো রিপোর্ট পায়নি।

শেয়ার করুন