১৫ অক্টোবর ২০১২, মঙ্গলবার, ০৯:০৪:৪২ অপরাহ্ন


দেশকে ফাহমিদা নবী
শুরুতে ছিল শখ এখন পরিণত হয়েছে নেশায়
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৯-২০২৪
শুরুতে ছিল শখ এখন পরিণত হয়েছে নেশায় ফাহমিদা নবী


ফাহমিদা নবী। বলা চলে উত্তরাধিকার সূত্রেই শিল্পী তিনি। তার বাবা মাহমুদুন্নবী গত শতকের ৬০ থেকে ৮০’র দশকে বাংলা গানের জগতে ছিলেন উজ্জ্বল। নিজেও একের পর এক নতুন গান দিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেছেন। সেই সূত্রেই সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে তার নতুন গান ‘ও মন তোমার হব’। এই গান ও চলমান সময় তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির 

প্রশ্ন: দেশে এখন নতুন সরকার। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎফুল্লতাও আছে আবার হতাশাও আছে। এই বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন? 

ফাহমিদা নবী: যে কোনো বিপ্লবের পরে এমন একটি পরিস্থিতির তৈরি হয়। এখানে উৎফুল্লতা আর হতাশা প্রায় একই জায়গা থেকে হয়। কারণ কিছু মানুষ মনে করছেন দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পেয়েছি। আরেক পক্ষ মনে করেন, এতো কষ্ট করে ফ্যাসিস্ট সরকার তাড়িয়েছি অথচ আমরা কিছুই পাচ্ছি না। এখানে খেয়াল করলে দেখবেন উভয় পক্ষ ফ্যাসিবাদ থেকে মৃক্তি চেয়েছে। কিন্তু পরবর্তী অবস্থা নিয়ে হতাশা। আমার মনে হয় সময়ের সঙ্গে এই হতাশা দূর হবে। 

প্রশ্ন: হতাশাগ্রস্তদের জন্য আপনার কোনো পরামর্শ আছে?

ফাহমিদা নবী: একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে আমি কী পাব, আমার কী পাওয়ার আছে, আমি কী পেতে চাই, তার চেয়েও বড়, আমি কী দিতে পারি। কোনো কাজের বিনিময়ে কিছু পেতে হবে, এ ধারণা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে। মানসিক সংকটে ভোগা যাবে না। অনেক সময় মানুষ ভাবেন, আমি কী পারব, আমাকে দিয়ে কী হবে। এসব চিন্তায় অনেককে দেখেছি ভয় পেতে। এ ভয় একটা অসুস্থতা। একটা সময় অনেক মানুষ ভাবেন, আমাকে দিয়ে বোধ হয় আর কিছুই হবে না। এই ‘বোধ হয়’ শব্দটিই জীবন থেকে বাদ দিতে হবে। ভয়কে জয় করতে হবে। তাহলে সবার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যাঁদের উদ্দীপিত করার মতো কেউ নেই। তারা নিজেরাই নিজেকে উদ্দীপিত করে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি মাঝে খুবই অসুস্থ ছিলাম। এখন ভালোর দিকে। সেই সময়ে আমিও নিজেকে উদ্দীপিত করেছি। কারণ, আমি যতই ভাবব, ততই আমার অসুস্থতা বাড়বে। আমার জন্য পাশের মানুষ অসুস্থ হয়ে যাবে। আমার ওপর অনেক মানুষ নির্ভর করে থাকে। আমার অসুস্থতা মানে তাদের দুর্বল করে দেওয়া। এটা থেকে বেড়িয়ে আসার একমাত্র উপায়, ভয়কে জয় করা। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই কিছু না কিছু আলাদা গুণ আছে। সেই গুণ দিয়েই প্রত্যেক মানুষ জীবনকে সুন্দর করতে পারে। কারণ, এই ব্যস্ত শহরে কারও দিকে তাকানোর সময় কারও নেই। সবাইকে ভালো থাকার চেষ্টা করতে হবে।

প্রশ্ন: আপনার নতুন গান ‘ও মন তোমার হব’। মেলোডি সুরের গানটি প্রকাশের পর কেমন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন? 

ফাহমিদা নবী: শ্রোতাদের কথায় এটাই স্পষ্ট যে, তারা সবসময় আমার কণ্ঠে মেলোডি সুরের গানই শুনতে পছন্দ করেন। ‘ও মন তোমার হব’ তেমনই একটি গান, যার জন্য তারা প্রতীক্ষায় ছিলেন।

প্রশ্ন: গানের গীতিকার ও সুরকার দু’জনই নতুন। হঠাৎ নতুনদের কথা-সুরে গাইলেন?

ফাহমিদা নবী: নতুনদের কথা-সুরে আগেও গেয়েছি। এজন্য ‘ও মন তোমার হব’ গানের কথা ও সুর যখন ভালো লেগেছে, তখন এর গীতিকার-সুরকার কে বা কারা- তা নিয়ে খুব একটা ভাবিনি। আসল কথা হলো, কোনো কাজ যদি ভালো হয় তাহলে তার স্রষ্টা প্রতিষ্ঠিত কেউ নাকি তরুণ-সেটা দেখার প্রয়োজন হয় না। এ কথা ঠিক যে, গীতিকার শেখ নজরুল ও সুকার ফিদেল নাঈম গানের ভুবনে এখনও সেভাবে পরিচিতি পায়নি। তার মানে এই নয়, তাদের কোনো সম্ভাবনা নেই। ‘ও মন তোমার হব’ গানটি শুনলে কিছুটা হলেও তাদের প্রতিভার আঁচ পাওয়া যাবে।

প্রশ্ন: কিছুদিন আগে ‘শাখা-প্রশাখার প্রভাব’ গানেও নতুন এক ফাহমিদার দেখা মিলেছে। গান নিয়ে কী আগের চেয়ে বেশি নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন? 

ফাহমিদা নবী: ‘শাখা-প্রশাখার প্রভাব’ গানটি শুনে কেউ যদি আমাকে নতুনভাবে আবিষ্কার করে থাকেন, তাহলে সেই কৃতিত্বটা এনামুল করিম নির্ঝরের। কারণ, এই গানের স্রষ্টা তিনি। অবশ্য কথা-সুরে এই গানে কণ্ঠ দেওয়ার পর আমারও মনে হয়েছিল, এটি অনেক দিন শ্রোতামনে অনুরণন তুলে যাবে। এমনিতেও নির্ঝরের সৃষ্টি গতানুগতিক ধারা থেকে একেবারেই আলাদা। তাঁর গীতিকবিতা ও সুরের বৈচিত্র্য যতটা মুগ্ধ করে, ততটাই বিস্মিত করে অভিনব চিন্তাধারা। তবে এতটা ব্যতিক্রমী না হলেও সুরকার হিসেবে আমার গানগুলোয় আলাদা একটা ছাপ রেখে দেওয়ার চেষ্টা করি। গত তিন-চার বছর ধরে নিয়মিত সুর করে যাচ্ছি। শুরুতে এটা ছিল শখ, এখন তা নেশায় পরিণত হয়েছে। তাই প্রতিটি আয়োজনে যতটা পারি নিরীক্ষা চালিয়ে যাই।

প্রশ্ন: এর মধ্যে নতুন কোনো গানের সুর করেছেন?

ফাহমিদা নবী: ‘কাছের মানুষ দূরে যায়’ শিরোনামে একটি গানের সুর করেছি। ইলা মজিদের লেখা এই গানের রেকর্ডিংও হয়ে গেছে। কিছুদিনের মধ্যেই গানটি প্রকাশ করব। 

প্রশ্ন: রিয়েলিটি শোর বিচারক হিসেবে অনেকে শিল্পীকে গানের ভুবনে জায়গা করে দিয়েছেন। তারা আসলে কতটা সম্ভাবনাময়?

ফাহমিদা নবী: গানের ভুবনে যেসব তরুণদের সঙ্গে কাজ করছি, তাদের যেমন প্রতিভা আছে, তেমনি প্রতিষ্ঠিত সম্ভাবনাও আছে। রিয়েলিটি শো থেকে যাদের তুলে এনেছি, তাদের নিয়েও একই কথাই বলব। কিন্তু ইদানীং অনেকের মধ্যে যে প্রবণতা চোখে পড়ছে, তা সত্যি ভয়াবহ। ভালো কিছু করার চেয়ে এখনকার তরুণরা শুধু ভাইরাল হতে চায়, আর এই চাওয়া যে কতটা ভয়াবহ, এতে করে যে তাদের শিল্পীসত্তার মৃত্যু হতে পারে, তা নিয়ে কোনো ধারণাই নেই। সংগীত যে সাধনার বিষয়-এটাও অনেকেই ভুলে বসে আছে।

শেয়ার করুন