০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৯:০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মুসলিম ছাত্রছাত্রীরা অবহেলার শিকার
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-১০-২০২৪
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মুসলিম ছাত্রছাত্রীরা অবহেলার শিকার ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান ক্যাম্পাসে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং প্রতিবাদ দমনের কঠোর নীতির প্রতিবাদ করছেন ছাত্ররা


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত মুক্তচিন্তা ও মানবাধিকারের পক্ষে অবস্থান নেয় বলে বিবেচিত হয়। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাবলি থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, অনেক ক্ষেত্রে আরব এবং মুসলিম শিক্ষার্থীরা এমন প্রাতিষ্ঠানিক অবহেলার শিকার হচ্ছেন, যা তাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট সান্তা ওনোর ফাঁস হওয়া একটি রেকর্ডিং এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। এ ঘটনা শুধু মিশিগান নয়, সারা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে উঠেছে।

২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ‘তাহরির কোয়ালিশন’ নামে প্রো-প্যালেস্টাইনিয়ান সংগঠনের একটি জোট মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট সান্তা ওনোর কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ডিং ফাঁস করে। রেকর্ডিংটিতে দেখা যায় যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ‘প্রভাবশালী গোষ্ঠী’ থেকে চাপ রয়েছে, যারা ইহুদি বিরোধিতা মোকাবিলায় কেন্দ্রবিন্দু করা না হলে ফেডারেল তহবিল প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট সান্তা ওনো উল্লেখ করেন, সরকার আমাকে বলতে পারে যে, বিশ্ববিদ্যালয় যথেষ্ট চেষ্টা করছে না ইহুদি বিরোধিতা মোকাবিলায়। আমি বলতে পারি, ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধেও আমরা যথেষ্ট করছি না, তবে এটাই তারা শুনতে চায় না।

রেকর্ডিংয়ের ঘটনা প্রমাণিত হয় যে, বিশ্ববিদ্যালয়টি মুসলিম ও আরব শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না। যদিও মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে যে, তারা সব শিক্ষার্থীর জন্য নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ, বাস্তবে তাদের কার্যক্রমে এই প্রতিশ্রুতি পরিলক্ষিত হয় না।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আরব এবং মুসলিম শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যের ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্যালেস্টাইন ও লেবাননে ইসরায়েলের আক্রমণে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, যার মধ্যে শিশুদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। প্যালেস্টাইনি ও লেবানিজ শিক্ষার্থীরা তাদের স্বদেশের ধ্বংস ও গণহত্যার ফলে গভীর মানসিক আঘাতের সম্মুখীন হচ্ছে। অথচ যখন তারা ক্যাম্পাসে এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে, তখন তাদের শোক ও কণ্ঠস্বরকে অপরাধ হিসেবে দেখা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক অবহেলা এবং শিক্ষার্থীদের নির্যাতন অক্টোবর ৭, ২০২৩-এর ঘটনার পর মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-প্যালেস্টাইনিয়ান শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ আরো প্রকট হয়ে ওঠে। মিশিগান আইন স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্যালেস্টাইনিদের ‘পশু’ হিসেবে উল্লেখ করে এবং তাদের মুসলিম ও আরব সহপাঠীদের গণহত্যায় আনন্দিত হওয়ার অভিযোগ করে একটি ইমেল সার্ভারে। এই ধরনের ভাষা ব্যবহারের পরও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, প্রো-প্যালেস্টাইনিয়ান বিক্ষোভের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার সময় তাদের ওপর শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, তাদের হিজাব ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে এবং বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের সহায়তা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পাসে আরব শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট লাউঞ্জের চারপাশে পুলিশের উপস্থিতি এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ধরনের পুলিশি নির্যাতন বা বৈষম্যমূলক আচরণ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এখানে শুধু মিশিগান নয়, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-প্যালেস্টাইনিয়ান শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্য ও হয়রানি আরও তীব্রভাবে দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রো-প্যালেস্টাইন অ্যাডভোকেসির জন্য ৩ হাজারের বেশি মানুষ গ্রেফতার হয়েছে। এর ফলে মুসলিম ও আরব শিক্ষার্থীরা তাদের পরিচয় এবং মতামত প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছে, কারণ তারা একাডেমিক, আইনগত এবং পেশাগত জীবনে ক্ষতির শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বহীনতা এবং শিক্ষার্থীদের ক্ষতি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একদিকে ইহুদি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তৎপর, কিন্তু প্যালেস্টাইনি বা মুসলিম শিক্ষার্থীদের প্রতি কোনো সহমর্মিতা দেখায়নি। প্যালেস্টাইনিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কথা বলাকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায়শই অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এটি শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভেঙে দিয়েছে এবং তাদের ক্যাম্পাস জীবনে বিচ্ছিন্নতা তৈরি করেছে। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগও মুসলিম ও আরব শিক্ষার্থীদের জন্য উদ্বেগের কারণ। প্যালেস্টাইনি ও মুসলিম জনগণের ওপর সহিংসতা সমর্থনকারী কোম্পানিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিনিয়োগ থাকা সত্ত্বেও, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের কোন ফল হয়নি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মুসলিম, আরব এবং প্রো-প্যালেস্টাইনিয়ান শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক অবহেলা এবং বৈষম্যমূলক আচরণ ক্রমশ গভীরতর হয়ে উঠেছে। তাদের কণ্ঠস্বর দমন করা হচ্ছে এবং তাদের বিক্ষোভগুলোকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থা শিক্ষার্থীদের মানসিক ও সামাজিক জীবনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রকৃত মানবাধিকার ও সমতা নিশ্চিত করতে তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং মুসলিম ও আরব শিক্ষার্থীদের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

শেয়ার করুন