৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০১:০৫:০৭ অপরাহ্ন


যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-১১-২০২৪
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ডোনাল্ড ট্রাম্প/ফাইল ছবি


সকল জল্পনা কল্পনা এবং উত্তেজনার অবসান ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ২টা) ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৭০টি ইলেকট্রোরাল ভোটের মধ্যে ২৬৬ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাটিক পার্টি প্রার্থী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ২১৪ ইলেকট্রোরাল ভোট। যে ক’টি স্টেটের ফলাফল ঘোষণা বাকি রয়েছে সেগুলোর মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছেন। বিশেষ করেন সুইং স্টেটের মধ্যে মিশিগান, উইনকনসিন, অ্যারিজোনা, নাভাদায় ডোনাল্ড ট্রাম্প কমলা হ্যারিসের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। সুইং স্টেট পেনসিলভেনিয়া, জর্র্জিয়া এবং নর্থ ক্যারোলিনায় ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়লাভ করেছেন। এর আগে ২০২০ সালের নির্রাচনে এই দুটো স্টেটে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জয়লাভ করেছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজিত হয়েছেন।


শুধু তাই নয় সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠতাও লাভ করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি। সিনেটের ১০০টি আসনের মধ্যে ৩৪টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত  সিনেটে রিপাবলিকানদের আসন সংখ্যা ৫১ এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টি পেয়েছে ৪২টি। ২০২০ সালের নির্বাচনের পর সিনেট ছিলো ডেমোক্র্যাটদের দখলে। হাউস ছিলো রিপাবলিকানদের দখলে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৪৩৫টি আসনের মধ্যে রিপাবলিকানরা পেয়েছেন ১৮৯ আসন। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছে ১৬২ আসন। এখনো ৮৪ টি আসনের ফলাফল ঘোষণা বাকি। সবগুলো আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হলে জানা যাবে হাউজ কার দখলে যাচ্ছে। হাউজ দখলে নিতে হলে রিপাবালিকানদের ২১৮ আসনে জয়লাভ করতে হবে।


এ দিকে নিউইয়র্ক টাইসের প্রজেকশন অনুযায়ী ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প পেতে পারেন ৩ শতাধিক ইলেকট্রোরাল ভোট। কমলা হ্যারিস পেতে পারেন ২৩২ ইলেকট্রোরাল ভোট। ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই মহিলাকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। একমাত্র পুরুষ প্রার্থী জো বাইডেন কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। নির্বাচনের এই ফলাফলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, আমেেিকানরা এখনো মহিলাকে তাদের প্রেসিডেন্ট হিসাবে মেনে নিতে প্রস্তুত নন। তাছাড়া বর্তমান প্রশাসনের যুদ্ধ কেউ ভাল চোখে দেখছেন না। বিশেষ করে মধ্যপাচ্যে। যে কারণে মিশিগানসহ অন্যান্য স্টেটের মুসলমানরা বিভক্ত হয়ে যায়। তারা ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও ভোট দিয়েছেন। যে ভোটগুলো ছিলো ডেমোক্র্যাটদের।


সর্বশেষ মিশিগানে ৭১% ভোটের মধ্যে ট্রাম্প ৫২%, কমলা ৪৬%, অ্যারিজোনায় ৫৩% ভোটের মধ্যে ট্রাম্প ৪৯%, কমলা ৪৯%, উইনকনসিন ৯১% ভোটের ট্রাম্প ৫১%, কমলা ৪৭%, নাভাদায় ৭৩% ভোটের মধ্যে ট্রাম্প ৫১% এবং কমলা ৪৭% ভোট পেয়েছেন। অর্থাৎ ট্রা¥্ট সবগুলো স্টেটে এগিয়ে রয়েছেন।  বলা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন।
গত ৫ নভেম্বর সকাল ৭টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয় এবং বিরতিহীনভাবে রাত ৯টা পর্যন্ত হলে। আমেরিকার মানুষজন এবার উৎসবমুখর পরিবেশে সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। অনেক ভোট কেন্দ্রেই দেখা গেছে, লম্বা লাইন। আমেরিকানদের সাথে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীরাও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এবারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ছাড়াও ৩৪ জন সিনেটর এবং ৪৩৫ জন কংগ্রেসম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের নির্বাচনে ৫০টি স্টেটের মধ্যে ৭টি স্টেটের ফলাফলের উপর নির্ভর করছে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাাম্পের ভাগ্য।এই ভাগ্য নির্ধারনী স্টেটগুলো হচ্ছে পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান, উইনকনসিন, নাভাদা,জর্জিয়া, অ্যারিজোনা ও নর্থ ক্যারোলিনা। এই ৭টি স্টেট ৯৩টি ইলেকট্রোরাল ভোট রয়েছে। বাকি ৪৩ স্টেটে মধ্যে কমলা হ্যারিসের দখলে রয়েছে ২২৬টি এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে ২১৯টি ভোট। ভাগ্য নির্ধারণ হবে সুইং ৭টি স্টেটের ফলাফলের উপর।


যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন দেশটির নাগরিকরা। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকেরাও ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। অন্যান্য বছর ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দিলেও এবার প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকেই রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিচ্ছেন। তাঁদের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার ঘটনা কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন।তাঁদের একজন আবদুল হামিদ। ২৮ বছর ধরে নিউইয়র্কে থাকেন। তিনি একজন নিবন্ধিত ডেমোক্র্যাট ভোটার। তবে এবার প্রথমবারের মতো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমেরিকার অর্থনৈতিক উন্নতি এবং বিশ্ব শান্তির জন্য ট্রাম্প অপরিহার্য।’


নিউইয়র্কের আরেক বাসিন্দা আসলাম আহমাদ খান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠার জন্য ট্রাম্প ব্যাপক ভূমিকা রাখবেন বলে আমি আশাবাদী। তা ছাড়া তিনি যখন ক্ষমতায় ছিলেন, সারা বিশ্বের কোথাও যুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করেননি, যা ডেমোক্র্যাটরা প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছেন।’
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের বাসিন্দা হাসিনা বেগম বললেন ভিন্ন কথা। তাঁর ভাষ্য, ‘আমি বরাবরই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিই। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কমলা হ্যারিস অভিবাসীদের জন্য কাজ করবেন, সেই বিশ্বাস আমার আছে।’ জামান তপনও কমলা হ্যারিসকে ভোট দিয়েছেন।


ভোট দিলেন ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন রিপাবলিকান মনোনীত প্রার্থী এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভোট দিয়ে তিনি বলেন, জয়ের ব্যাপারে আমি খুব আত্মবিশ্বাসী।মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় পাম বিচে ম্যান্ডেল রিক্রিয়েশন সেন্টারে ভোট দেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি খুব আত্মবিশ্বাসী। তার দাবি, এমনকি তার কাছাকাছি ভোটও কেউ পাবে না।
ট্রাম্প বলেন, আমি খুব আত্মবিশ্বাসী বোধ করছি। আমি শুনেছি, আমরা সব জায়গায় খুব ভালো করছি।তিনি বলেন, তিনটি প্রচারণার মধ্যে এটি ছিল সেরা।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। ২৪ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প আর ডেমোক্র্যাট দলীয় কমালা হ্যারিসের মাঝে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে।
বোমা হামলার হুমকির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনকর্মী গ্রেপ্তার
 যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া রাজ্যে স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তাদের ওপর বোমা হামলার হুমকির অভিযোগে নিকোলাস উইমবিশ নামের এক নির্বাচনকর্মীকে গ্রেপ্তার  করা হয়েছে।সোমবার (৪ নভেম্বর) তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে এক প্রতবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।
বোমা হামলার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানো এবং গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর কাছে মিথ্যা বয়ান দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
দোষী সাব্যস্ত হলে তার সর্বোচ্চ ২৫ বছরের জেল হতে পারে। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি বোমা হামলার হুমকি দেওয়া চিঠিটি এমনভাবে লিখেছেন যে সেটি দেখে মনে হয় কোনো ভোটার তা পাঠিয়েছেন।
গত ১৬ অক্টোবর জর্জিয়ার গ্রে শহরের জোন্স কাউন্টিতে নির্বাচন কার্যালয়ে নির্বাচনকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ২৫ বছর বয়সী উইমবিশ। সেদিন একজন ভোটারের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়েছিল। পরদিন কাউন্টির প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তাকে তিনি একটি চিঠি পাঠান।
এ ঘটনায় কৌসুলিরা বলছেন, সেটি এমনভাবে লেখা হয়েছে যেন চিঠিটি ওই ভোটারের কাছ থেকেই এসেছে।চিঠিতে উইমবিশ নির্বাচনকর্মীদের ওপর শারীরিক ও যৌন সহিংসতার হুমকি দেন এবং বোমা হামলার হুমকি দিয়ে চিঠি শেষ করেন বলে অভিযোগ আছে।
নির্বাচনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে রাশিয়া



অভিযোগ মার্কিন গোয়েন্দাদের
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়াসহ ‘প্রতিপক্ষ’ দেশগুলো হস্তক্ষেপের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মার্কিন গোয়েন্দারা। মঙ্গলবার তারা বলেছে, ওই দেশগুলো নির্বাচন নিয়ে জনগণের আস্থা নষ্ট করতে চায়।
মার্কিন গোয়েন্দাদের দাবি, প্রতিপক্ষ দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রতিপক্ষ দেশগুলো আমেরিকানদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে চায়।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকের কার্যালয় ওডিএনআই এবং সাইবার ও অবকাঠামো নিরাপত্তা সংস্থা যৌথ বিবৃতিতে এই দাবি করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উস্কে দিতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে রাশিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠী। ভোট কারচুপির মিথ্যা দাবি তুলে সেসব প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

রিয়েল এস্টেট টাইকুন থেকে হোয়াইট হাউসে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রার্থী হিসাবে দৌড়ে শামিল হওয়ার আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে  জাঁকজমকপূর্ণ বিলিয়নিয়ার। নিউ ইয়র্কের এই রিয়েল এস্টেট টাইকুনের বর্ণাঢ্য জীবন কয়েক দশক ধরেই বিভিন্ন ট্যাবলয়েডের পাতায় এবং টেলিভিশনের পর্দায় ফুটে উঠেছে।ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিচিতি এবং ‘অপরিশোধিত’ নির্বাচনি প্রচারশৈলী তাকে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের ভোটে হারিয়ে দিতে সাহায্য করেছিল। তবে প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার কার্যকালে বিতর্কও কম হয়নি। মাত্র একদফাই ক্ষমতায় ছিলেন তিনি।
৭৮ বছরের এই রিপাবলিকান আবারও সমস্ত ‘প্রতিকূলতা’ উপেক্ষা করে ‘অত্যাশ্চর্য’ রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন ঘটাতে চাইছেন যা তাকে ওভাল অফিসের প্রেেিডন্টের ডেস্কে ফিরিয়েও নিয়ে যেতে পারে।ট্রাম্প পরিবারের কাছে বিপুল পরিমাণে সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি তার বাবারই মালিকানাধীন সংস্থায় কোনও একটা ছোটখাটো কাজ করবেন বলে এককালে অনুমান করা হয়েছিল।স্কুলে খারাপ আচরণ শুরু করায় ১৩ বছর বয়সে তাকে ‘নিউ ইয়র্ক মিলিটারি অ্যাকাডেমি’তে পাঠানো হয়েছিল। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্টন স্কুল থেকে ডিগ্রি অর্জন করেন ট্রাম্প।একসময় ভাগ্য সহায় হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তার বড় ভাই ফ্রেড ট্রাম্প জুনিয়র পাইলট হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে বাবার অনুগ্রহে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেওয়ার সুযোগ পান তিনি (ডোনাল্ড ট্রাম্প)।ডিগ্রি অর্জনের পরই রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন তিনি। ট্রাম্প অবশ্য দাবি করেছেন রিয়েল এস্টেট ব্যবসা দাঁড় করানোর জন্য বাবার কাছ থেকে ‘সামান্য’ পরিমাণে ঋণ নিতে হয়েছিল তাকে। এই ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লক্ষ ডলার।
বাবার মালিকানাধীন বিস্তৃত ব্যবসাগুলোর মধ্যে নিউ ইয়র্ক সিটি বোরো এলাকাস্থ আবাসিক প্রকল্পে সাহায্য করতেনট্রাম্প। ১৯৭১ সালে এই সংস্থার প্রেসিডেন্ট বানানো হয় তাকে। কোম্পানির পরিবর্তন করে রাখেন ‘ট্রাম্প অর্গানাইজেশন’।
বাবা ফ্রেড ট্রাম্পকে নিজের ‘অনুপ্রেরণা’ বলে বর্ণনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট। ১৯৯৯ সালে তাকে হারান ডোনাল্ড ট্রাম্প।মাদকাসক্তির কারণে ফ্রেড ট্রাম্পের মৃত্যু হয় ৪৩ বছর বয়সে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, এই কারণেই সারাজীবন মদ এবং সিগারেট এড়িয়ে চলেছেন তিনি (ডোনাল্ড ট্রাম্প)।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে তাদের পারিবারিক ব্যবসার ফোকাস ব্রুকলিন ও কুইন্সের আবাসিক প্রকল্পের বদলে চলে যায় চাকচিক্যময় ‘ম্যানহাটন প্রকল্প’ বাস্তবায়নের দিকে।বিখ্যাত ফিফথ অ্যাভিনিউতেই অবস্থিত ট্রাম্প টাওয়ার যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে নামি সম্পত্তির মধ্যে একটি। বহু বছর ধরেই এটাই  ট্রাম্পের বাসস্থল। তার নেতৃত্বে ‘কমোডোর হোটেল’কে পুনর্র্নিমাণ করে ‘গ্র্যান্ড হায়াত’-এ রূপান্তরিত করা হয়। এই প্রকল্প তাকে পরিচিতি এনে দেয়।ট্রাম্পের ব্র্যান্ডের অন্তর্ভুক্ত ক্যাসিনো, কনডমিনিয়াম বা কন্ডো (আবাসিক প্রকল্প যেখানে পৃথক মালিকানাধীন আবাসিক ইউনিট রয়েছে) গলফ কোর্স ও হোটেল রয়েছে আটলান্টিক সিটি, শিকাগো ও লাস ভেগাস থেকে শুরু করে ভারত, তুরস্ক ও ফিলিপাইনে।
বিনোদন জগতেও তিনি একজন বহুল পরিচিত ব্যক্তিত্ব। বিনোদন জগতে তার খ্যাতি তৈরি হয় প্রথমে মিস ইউনিভার্স, মিস ইউএসএ এবং মিস টিন ইউএসএ সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার আয়োজক সংস্থার মালিক হিসাবে এবং তারপর এনবিসি রিয়েলিটি শো ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’-এর স্রষ্টা হিসাবে।‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’-এর ১৪টি সিজনে প্রতিযোগীরা তার বিশাল ব্যবসায় একটা চুক্তি পাওয়ার জন্য লড়াই করতেন। এই অনুষ্ঠানের হাত ধরে তিনি টেলিভিশন পর্দার একজন পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। তার মুখে ‘ইউ আর ফায়ারড’ সংলাপ খুবই জনপ্রিয় হয়ে যায়।
ট্রাম্প বেশ কয়েকটা বই লিখেছেন। বিভিন্ন চলচ্চিত্র এবং প্রো-রেসলিং অনুষ্ঠানে পানীয় থেকে নেকটাইসহ অনেক কিছুই ‘বিক্রি’ করেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার মোট সম্পদের পরিমাণ কমে গেছে, ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি ডলার।ট্রাম্প ছয়বার ব্যবসায় দেউলিয়া হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। ট্রাম্প স্টিকস এবং ট্রাম্প বিশ্ববিদ্যালয়সহ তার বেশ কয়েকটা উদ্যোগ বন্ধ হয়ে গেছে।তিনি তার আয়কর সংক্রান্ত তথ্য পরীক্ষা হওয়ার হাত থেকে থেকে আড়াল করেছেন। ২০২০ সালে ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে বছরের পর বছর আয়কর এড়ানোর অভিযোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী আর্থিক ক্ষতির বিষয়ে তথ্য প্রকাশিত হয়েছিল।
তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন ইভানা জেলনিকোভা। তিনি একজন চেক ক্রীড়াবিদ এবং মডেল ছিলেন। তাদের তিন সন্তান ডোনাল্ড জুনিয়র, ইভাঙ্কা এবং এরিক।১৯৯০ সালে এই যুগলের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের সময় আদালতে তাদের আইনি লড়াই নিয়মিত ‘গসিপ কলামে’ স্থান পেয়েছে।তার প্রয়াত স্ত্রী ইভানা জেলনিকোভা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ এনেছিলেন। সেই অভিযোগ অবশ্য তিনি পরে তুলে নেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে তৈরি একটা চলচ্চিত্রে এই বিষয়ে দেখানো হয়েছে।তার দ্বিতীয় স্ত্রী অভিনেত্রী মার্লা ম্যাপলস। এই যুগলের একমাত্র সন্তান টিফানির জন্মের দুই মাস পর ১৯৯৩ সালে মার্লা ম্যাপলস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হন। ১৯৯৯ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত জীবনে একাধিক বিতর্কিত অধ্যায় রয়েছে। একাধিকবার যৌন নির্যাতন ও বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। চলতি বছরের শুরুর দিকে দুই পৃথক জুরি রায় দেয় যে লেখিকা ই জিন ক্যারলের তার বিরুদ্ধে তোলা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করে ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই লেখিকার মানহানি করেছেন।এই মামলায় তাকে মোট ৮ কোটি ৮০ লক্ষ ডলার দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও এই রায়ের বিরুদ্ধে  ট্রাম্প আপিল করেছেন। ২০০৬ সালে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ ধামাচাপা দিতে ব্যবসায়িক নথিতে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। সেই মামলায় ৩৪টা গুরুতর অপরাধে ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
১৯৮০ সালে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প রাজনীতিকে ‘মিন লাইফ’ (খুবই সঙ্কীর্ণস্তরের জীবন) হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। একই সঙ্গে যোগ করেছিলেন, এর পরিবর্তে ‘সবচেয়ে সক্ষম ব্যক্তিরা’ ব্যবসার জগৎকে বেছে নেন।তার দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসে ৮০-র দশকের শেষের দিকে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য সংশ্লিষ্ট দলের মনোনয়ন জেতার দৌড়ের বিষয়ে তিনি মনোনিবেশ করেন ২০০০ সালে প্রথমে রিফর্ম পার্টির হয়ে এবং ২০১২ সালে রিপাবলিকান হিসাবে।সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ‘বার্থরিজম’-এর সবচেয়ে সোচ্চার প্রবক্তাদের মধ্যে একজন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘বার্থরিজম’ তত্ত্ব খাড়া করে প্রশ্ন তুলেছিলেন বারাক ওবামা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কি না। তবে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি স্বীকার করেননি যে এই তত্ত্ব ‘অসত্য’ ছিল এবং তার জন্য কখনও ক্ষমা চাননি।২০১৫ সালের জুনের আগ পর্যন্ত  ডোনাল্ড ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউসের লড়াইয়ে শামিল হওয়ার ঘোষণা করেননি। সেই সময় ‘আমেরিকান ড্রিম’কে মৃত বলে ঘোষণা করেছিলেন বটে কিন্তু প্রতিশ্রুিিত দিয়েছিলেন ‘আমেরিকান ড্রিমকে আরও বৃহত্তর এবং ভালোভাবে ফিরিয়ে আনার’।নির্বাচনি প্রচারে তার সম্পদ এবং ব্যবসায়িক সাফল্যকে জাহির করতে দেখা গিয়েছিল এই রিয়েল এস্টেট টাইকুনকে। তিনি মেক্সিকোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ‘মাদক, অপরাধ ও ধর্ষকদের পাঠানোর’ অভিযোগ আনেন এবং দাবি করেন সীমান্তেপ্রাচীর নির্মাণের খরচ ওই দেশকেই দিতে হবে।বিতর্ক অনুষ্ঠানের মঞ্চে এই ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য এবং মঞ্চে আধিপত্য বিস্তারকারী ব্যক্তিত্ব তার সমর্থক এবং তীব্র সমালোচকদের সমান পরিমাণে আকর্ষণ করেছিল। গণমাধ্যমেও বারেবারে শিরোনামে উঠে এসেছে তার বিভিন্ন মন্তব্য।
‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’-কে তার প্রচারাভিযানের স্লোগান বানিয়ে সহজেই রিপাবলিকান পার্টির অন্যান্য সদস্যদের (যারা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে ওই দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন), পিছনে ফেলে দিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের মুখোমুখি হন।তার এই প্রচারাভিযান অবশ্য বিতর্কে ঘেরা ছিল। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতে থাকে।ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক অভিযোগের তালিকায় রয়েছে একটা ফাঁস হওয়া অডিও টেপ যেখানে তিনি যৌন নির্যাতন নিয়ে তার বড়াই করছেন বলে অভিযোগ। একইসঙ্গে সেই সময় তিনি জনমত জরিপে পিছিয়ে পড়েছিলেন।তবে প্রবীণ রাজনীতিবিদদের ও জরিপকারীদের স্তব্ধ করে দিয়ে জয়ের শেষ হাসি হেসেছিলেন তিনি। ২০১৭ সালের ২০শে জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন ট্রাম্প।



প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন
প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণের প্রথম ঘণ্টা থেকেই তার কার্যকালে বারেবারে নাটকীয়তা দেখা গিয়েছে। প্রায়শই ট্রাম্পকে টুইটারে (এখন এক্স) আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করতে দেখা যেত। ভিন্ন দেশের নেতৃত্বের সঙ্গেও প্রকাশ্যে তাকে বচসা করতে দেখা গিয়েছে।তিনি প্রধান জলবায়ু ও বাণিজ্য চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন, সাতটা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করে দেন, অভিবাসন সংক্রান্ত কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেন।তার কার্যকালে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প প্রশাসনকে দেখা যায় রেকর্ড কর আদায়ের নীতি বাস্তবায়ন এবং মধ্য প্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন করতে। প্রায় দুই বছর ধরে একজন বিশেষ কৌঁসুলি ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচার শিবির ও রাশিয়ার মধ্যে আঁতাতের অভিযোগের তদন্ত করেছেন। ৩৪ জনের বিরুদ্ধে কম্পিউটার হ্যাকিং ও আর্থিক অপরাধের মতো মামলায় ফৌজদারি অভিযোগ আনা হলেও অভিযুক্তদের তালিকায় ট্রাম্প ছিলেন না। তবে তদন্তে অপরাধমূলক যোগসাজশের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই তৃতীয় প্রেসিডেন্ট যাকে অভিশংসিত হতে হয়েছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তিনি ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে ‘নেতিবাচক কোনও বিষয়’ খুঁজে বের করার জন্য বিদেশি সরকারকে চাপ দিয়েছিলেন। ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি পরিষদে তাকে অভিশংসিত করা হলেও রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন সেনেটে তিনি খালাস পান।২০২০ সালেও তিনি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য রিপাবলিকান প্রার্থী হিসাবে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই বছর করোনাভাইরাস মহামারির আধিক্য দেখা যায়। ওই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তার ভূমিকা নিয়ে কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল ট্রাম্পকে।


যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু ও সংক্রমণের হার এবং ‘শরীরে জীবাণুনাশক ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে এই ভাইরাসের চিকিৎসা করা যায় কি না’ তা নিয়ে গবেষণার পরামর্শ দেওয়ার মতো ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্যর জন্য তার তীব্র সমালোচনা হয়।গত অক্টোবর মাসে কোভিড-১৯ ধরা পড়ায় নির্বাচনি প্রচার থেকে বিরতি নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।শেষ পর্যন্ত ৭ কোটি ৪০ লাখ ভোট পেয়েও জো বাইডেনের কাছে ৭০ লক্ষেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে হেরে যান তিনি।যদিও তার প্রতিদ্বন্দ্বীর এই জয় তিনি মেনে নিতে পারেননি। ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ক্রমাগত ভোট চুরি এবং ব্যাপক নির্বাচনি জালিয়াতির অভিযোগ তুলে এসেছেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের করা ৬০টারও বেশি মামলা আদালত খারিজ করে দেয়।প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকার করেন ট্রাম্প। ২০২১ সালের ছয়ই জানুয়ারি ওয়াশিংটনে তার সমর্থকদের নিয়ে সমাবেশ করেন এবং তাদের ইউনাইটেড স্টেটস ক্যাপিটলে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানান কারণ কংগ্রেসের তরফে বাইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জয়ী ঘোষণা করার কথা ছিল।ট্রাম্পের সমর্থকদের সেই সমাবেশ দাঙ্গার রূপ নেয়। এই ঘটনা তার আইনপ্রণেতা এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে বিপদে ফেলে দেয়। এই ঘটনার ফলে দ্বিতীয়বার অভিশংসিত হতে হয় ট্রাম্পকে। যদিও এইবারও তাকে বেকসুর খালাস করে সেনেট।তবে ওই ঘটনার দিনে তার কর্মকান্ড এখনও দুটো ফৌজদারি মামলার বিবেচনাধীন।


রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন
ক্যাপিটল ভবনে হামলার পর ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছে বলেই অনুমান করা হয়েছিল। দাতা এবং সমর্থকরা আর কখনও তাকে সমর্থন করবেন না বলে শপথ করেছিলেন। এমনকি তার নিকটতম মিত্ররাও প্রকাশ্যে  ট্রাম্পকে অস্বীকার করেন।প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান এড়িয়ে যান তিনি। নিজের পরিবারকে ফ্লোরিডায় স্থানান্তরিত করে দেন। তবে তার অনুগত ভক্তদের একটা অংশ এখনও ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে। একইসঙ্গে রিপাবলিকান পার্টিতেও তার ব্যাপক প্রভাব বজায় রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার কার্যকাল শেষ হয়ে যাওয়ার পরই একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে যা যুক্তরাষ্ট্রে তোলপাড় শুরু করে। ক্ষমতায় থাকাকালীন সুপ্রিম কোর্টে তার মনোনীত যে তিনজন ডানপন্থী বিচারপতিকে মনোনীত করেছিলেন ট্রাম্প তারা রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করে প্রায় ৫০ বছর ধরে চলে আসা গর্ভপাতের অধিকারের অবসান ঘটান।এরপর ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের দুর্বল প্রত্যাবর্তনে তাকে দায়ী করা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হিসাবে নিজের দলের মনোনয়ন চেয়ে লড়াইয়ের ময়দানে নামেন। ক্রমে অন্যান্য রিপাবলিকান সদস্যদের মনোনয়নের দৌড়ে পিছনে ফেলে দেন।তার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্টসহ এক ডজনেরও বেশি বিরোধীরা তাকে চ্যালেঞ্জ জানালেও বিতর্কের মঞ্চ এড়িয়ে যান ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে নিশানা করে ক্রমাগত সমালোচনা করতে থাকেন।চারটে ফৌজদারি মামলায় ৯১টা গুরুতর অভিযোগের মুখোমুখি হয়ে নির্বাচনি দৌড় শুরু করেন তিনি। তবে আইনি মামলা বিলম্বিত করাতে তার কৌশল অনেকাংশেই সফল হয়েছে। নির্বাচনের আগে তিনটে মামলার অগ্রগতি হবে না।
গত ১৩ জুলাই পেনসিলভানিয়ায় এক নির্বাচনি সমাবেশে ২০ বছর বয়সী এক বন্দুকধারী ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। টমাস ম্যাথিউ ক্রুকস নামে ওই অভিযুক্ত কাছের একটা ভবনের ছাদ থেকে ট্রাম্পকে লক্ষ করে গুলি চালান। পরে স্নাইপারের গুলিতে ওই হামলাকারীর মৃত্যু হয় তবে তার আগে টমাস ম্যাথিউ ক্রুকসের ছোড়া একটা গুলিতে ট্রাম্পের ডান কানে আঘাত লাগে।এর কয়েকদিন পর ‘রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে’ তার পার্টি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে টানা তৃতীয়বারের মতো রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ঘোষণাও করা হয়।পেনসিলভানিয়ার নির্বাচনি প্রচারাভিযানে হামলায় প্রাণে বেঁচে যাওয়ার পর সেপ্টেম্বর মাসে তাকে আবারও হত্যার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ।
ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ওয়েস্ট পাম বিচ এলাকায় অবস্থিত তার মালিকানাধীন একটা ক্লাবে গলফ খেলছিলেন ট্রাম্প। সেই সময় তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। তবে এই ঘটনায় তার কোনও ক্ষতি হয়নি বলে জানা গিয়েছে।

আসন্ন নির্বাচন
ডেমোক্র্যাট দলের আমলে যুক্তরাষ্ট্রে মহামারী-পরবর্তী অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত লাভ দেখা গেলেও উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অবৈধ অভিবাসন ও পররাষ্ট্রনীতির বিশৃঙ্খলাসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে।এদিকে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকে সরে দাঁড়াানোর পর তার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসকে ওই পদের জন্য মনোনীত করেন। এই সময় থেকেই  ট্রাম্প হ্যারিসকে প্রশাসনের ব্যর্থতার জন্য দায়ী করার চেষ্টা করে এসেছেন। তার এই প্রয়াস ‘মাঝারি সাফল্য’ পেয়েছে।

শেয়ার করুন