হিজাব পরে সাহসী মেয়েরা ভলিবল মাঠে ঝড় তুলছে
ইলিনয়ের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত মর্টন গ্রোভের মুসলিম কমিউনিটি সেন্টার একাডেমি মেয়েদের ভলিবল দল রচনা করেছে ইতিহাস। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই গত ২৮ অক্টোবর এ ইসলামিক স্কুলটি ভলিবলে এমন সাফল্য অর্জন করেছে যা আগে কোনো ইসলামিক স্কুলের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এমসিসি একাডেমি এখন ইলিনয়ের ইতিহাসে প্রথম ইসলামিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের গৌরব অর্জন করেছে। এই অসাধারণ সাফল্য উদযাপন করতে স্কুলে আয়োজন করা হয় এক প্রাণবন্ত পেপ র্যালি, যেখানে ছোটবড় সবাই মেতে ওঠে আনন্দে।
বর্তমানে স্কুলের হাইস্কুল জিমনেসিয়াম সংস্কারের কাজ চলায় দলটি পুরো মৌসুম অনুশীলন করেছে স্কুলের প্রাথমিক শাখার স্ককি ক্যাম্পাসে। দলটির প্রধান কোচ ওয়াজিহা শুতারি জানান, এ প্রোগ্রামটি মাত্র তৃতীয় বছরে, আর আমরা ইতিমধ্যেই ইতিহাস গড়েছি ইলিনয়ে প্রথম ইসলামিক স্কুল হিসেবে রিজিওনাল চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।
দলটির নাম ‘লেডি ক্রেসেন্টস’। তারা শুধু প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাজিতই করেনি, বরং অনেকের ভুল ধারণাও ভেঙে দিয়েছে। অধিনায়িকা কাহেলিল বলেন, অনেকে ভাবে আমরা ইসলামিক স্কুল, তাই হয়তো ভালো খেলতে পারব না। কিন্তু আমরা দেখিয়েছি আমাদের ধর্ম, আমাদের পোশাক, আমাদের হিজাবএসব কোনো বাধা নয়। আমরা খেলতে পারি এবং ভালো খেলতে পারি। দলটি এখন রিজিওনালের গণ্ডি পেরিয়ে সেকশনাল সেমিফাইনালে পৌঁছেছে, যেখানে তারা মুখোমুখি হবে মারিয়ন সেন্ট্রাল ক্যাথলিক হাইস্কুলের। কোচ ওয়াজিহা বলেন, এটা কেবল শুরু, মৌসুম এখনো শেষ হয়নি। আর অধিনায়িকা কাহেলিলের ভাষায়, আমরা এখানেই থেমে থাকব না।
স্কুলের সুপারিনটেনডেন্ট হাবিব ক্বাদরী বলেন, কোচ মাজি সব সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করেছেন। আমরা চেষ্টা করেছি তাদের দক্ষতা বাড়াতে, গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে অংশ নিতে উৎসাহিত করেছি। কঠোর পরিশ্রম আর দলগত চেষ্টার মাধ্যমেই এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে। দলের প্রতিটি খেলোয়াড় ঐতিহ্যবাহী হিজাব পরিধান করে খেলায় অংশ নিচ্ছেন। তাদের কাছে এটি শুধু ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতীক নয়, বরং শ্রেষ্ঠত্ব ও আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন।
মুসলিম কমিউনিটি সেন্টার একাডেমির এই সাফল্য শুধু ভলিবলেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে বাস্কেটবল, ফুটবলসহ আরও কয়েকটি খেলায় দল গঠন করেছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নতুন একটি জিমনেসিয়াম নির্মাণের কাজ চলছে, যা সম্পন্ন হলে দলটি আর বাইরে নয়, নিজেদের মাঠেই খেলার সুযোগ পাবে। আগামী মৌসুমেই নতুন জিম ব্যবহারের আশা করছে শিক্ষার্থীরা।জয় বা পরাজয় যাই হোক, এই দল ইতিমধ্যেই এক নতুন ইতিহাসের সূচনা করেছে, যা পুরো ইলিনয়ের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এক গর্বের মুহূর্ত হয়ে থাকবে।