৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১০:১৫:৫১ পূর্বাহ্ন


সেন্ট মার্টিন সামরিক ঘাঁটির জন্য লিজ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১১-২০২৪
সেন্ট মার্টিন সামরিক ঘাঁটির জন্য লিজ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই সেন্ট মার্টিন


সেন্ট মার্টিন এবং পরিবেশ বিপন্ন অঞ্চলসমূহ প্রতিরক্ষার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিছু ব্যতিক্রমী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অকারণ বিতর্ক সৃষ্টি না করে সচেতন দেশবাসীর উচিত কার্যক্রমগুলোর বিষয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে, সরকারের কার্যক্রমকে সহায়তা প্রদান করা, প্রকৃতি অকৃপণভাবে বাংলাদেশকে দু’হাতে দান করেছেন। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন নিয়ে বিস্তারিত না জেনেই দূরভিসন্ধিমূলক বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। দ্বীপ তীর ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশ মায়ানমার সীমান্তের স্পর্শকাতর এলাকায়। এমনিতেই মায়ানমারে বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় মায়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছে। এমন অবস্থায় টেকনাফ হয়ে মায়ানমার সীমান্ত ঘেঁষে জলযানে সেন্ট মার্টিন যাতায়াতে নানা সময় সমস্যা হচ্ছে। 

পর্যটকদের সচেতনতার অভাবে প্রবাল দ্বীপ এবং বিশেষ করে চেরা দ্বীপের প্রবালগুলো অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। এমতাবস্থায় বন পরিবেশ এবং পর্যটন মন্ত্রণালয় সঠিক সিদ্ধন্ত নিয়েছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণের। দ্বীপের আকার, অবস্থান এবং কার্যকারিতার বিবেচনায় এখানে কোনো সামরিক ঘাঁটি গড়ে তোলা অথবা কোনো দেশের অধিকারে দেওয়া নিয়ে গুজব সৃষ্টি মূর্খতা। প্রকৃত প্রস্তাবে প্রবাল দ্বীপের প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদ রক্ষা করে একে দর্শনীয় পর্যটন অঞ্চল হিসেবে বিকশিত করার জন্য সেখনে পর্যটকদের পরিদর্শন, রাতযাপন, মৎস্য সংগ্রহ নিয়ন্ত্রণ করার সরকার গৃহীত সিদ্ধান্ত আমি সঠিক বলে মনে করি। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০২৪ প্রতিবেদক একটি বড় দলের সঙ্গে সেন্ট মার্টিনে দুদিন অবস্থান করে দ্বীপটিতে ক্ষমতার অনেক বেশি পর্যটক দেখতে পাই। পর্যটকদের চাপে সেন্ট মার্টিন সাগর উপকূলে এবং ছেঁড়া দ্বীপে প্রবালগুলোর অবস্থা দেখে শঙ্কা জাগে। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পর্যটকদের কোলাহল থাকায় সামুদ্রিক প্রাণী, পাখি, কচ্ছপের অভয়ারণ্য হতে পারছে না। একই ধরনের একটি দ্বীপ পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার বারো দ্বীপে কাজ করার সুযোগ আমার হয়েছিল। সেখানে কাজের সময় আমাদের গ্রিন ব্যাক টার্টেল, সামুদ্রিক পাখিদের বিচরণ বিঘ্নিত না করার কঠিন নিয়ম মেনে কাজ করতে হয়েছিল। দ্বীপে পদার্পণের আগে কঠোর কোয়ারেন্টাইন বিধি মানতে হয়েছিল। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের কিছু দ্বীপেও কঠোর পরিবেশবিধি দেখা গেছে। বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থেই সেন্ট মার্টিন বিষয়ক পরিবেশবিধি কঠোরভাবে মেনে চলা আমি জরুরি বলে মনে করি। তবে এ কাজ করার সময় স্থানীয় দরিদ্র জনসাধারণের জীবনযাত্রায় যেন বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি না হয়, সেটিও নিশ্চিত হওয়া জরুরি। সেন্ট মার্টিনে কিন্তু সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সম্প্রসারণ হতে পারে। বায়ু বিদ্যুৎ সোলার হাইব্রিড করার বিষয়টিও বিবেচিত হতে পারে। 

বাস্তবতার কারণেই সেন্ট মার্টিনে কোনো সামরিক ঘাঁটি করা বা দীর্ঘস্থায়ী বন্দোবস্তে কাউকে লিজ দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ বিষয়ে কোনো গুজবে কান দেওয়া সমীচীন বলে মনে করি না। সেন্ট মার্টিনের পাশাপাশি সরকার সুন্দরবন এলাকা, সিলেটের পর্যটন স্পটগুলো, দিনাজপুর, রংপুর, পিরোজপুরের পর্যটন এলাকা, কক্সসবাজার সাগর উপকূল, রাঙ্গামাটি, বান্দরবন বিশেষত অধুনা জনপ্রিয় হয়ে ওঠা সাজেকের পর্যটন এলাকা সুরক্ষার জন্য যথা প্রযোজ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করি। পরিবেশ সম্মত উপায়ে বিনোদন ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় গেলে পর্যটন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান সূত্র হতে পারে।

শেয়ার করুন